• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুরু হচ্ছে ইউপি নির্বাচন, প্রাণহানির শঙ্কায় উদ্বিগ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২১, ২০১৬, ০১:০৩ পিএম
শুরু হচ্ছে ইউপি নির্বাচন, প্রাণহানির শঙ্কায় উদ্বিগ

বিশেষ প্রতিনিধি

ছয় ধাপে ২২ মার্চ মঙ্গলবার থেকে সারাদেশের চার সহস্রাধিক নির্বাচন উপযোগী ইউপিতে শুরু হচ্ছে নির্বাচন। সে হিসেবে আর ২৪ ঘণ্টাও বাকি নেই। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, বাড়ি-ঘর ভাঙচুর এবং প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ এসেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ‘ব্যাপক প্রবণতার’ কথা মুখে বললেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি ইসিকে। প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘর্ষে অন্তত ৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে; আহত হয়েছেন কয়েকশ মানুষ। নির্বাচন কমিশন (ইসি) নির্বিঘ্ন পরিবেশের আশ্বাস দিলেও হামলা-সংঘর্ষের এসব ঘটনায় শঙ্কা ও উদ্বিগ্ন পর্যবেক্ষক মহল।

মঙ্গলবার এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ১৪টি রাজনৈতিক দল। তবে তৃণমূলে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের এ ভোটে স্বাভাবিকভাবেই মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নৌকা ও বিএনপির ধানের শীষের মধ্যে। প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপির তফসিল ঘোষণার পর ক্ষমতাসী দল আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আর দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপির তৃণমূলের সমর্থকরাও মুখিয়ে আছেন দীর্ঘ সাত বছর পর দলীয় প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য।

ভোট সামনে রেখে ইতোমধ্যে ৩৪ জেলার ১০২ উপজেলার নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছে গেছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ব্যালট পেপারসহ নির্বাচী সামগ্রী কেন্দ্রে কেন্দ্রে যাবে আজকের মধ্যেই। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ; নির্বাচনী এলাকায় থাকবে সাধারণ ছুটি।

পুলিশ মহাপরিদর্শক জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচন নিয়ে এ পর্যন্ত ২০৮টি সহিংস ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় ৫৫টি সাধারণ ডায়েরি ও ১৪৩টি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯৫ জনকে। তবে সরাসরি কোনো প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়নি।

এমন পরিস্থিতিতে ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমরা এবার ইউপি ভোটের পরিবেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তৃণমূলে ভোটের পরিবেশ আগের তুলনায় জটিল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, দলীয়ভাবে ভোট হওয়ায় অনেককে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার আগে ঝরে পড়তে হয়েছে।’ ভোটের আগে সহিংসতা হওয়ায় ভোটের দিন তা কী রূপ নেবে- সেই শঙ্কা প্রকাশ করেন এ নির্বাচন পর্যবেক্ষক।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অধীনে ২০১১ সালে ইউপি ভোটের পরিবেশ ভালো ছিল। বিএনপি শাসনামলে ২০০৩ সালের ইউপি নির্বাচনে হয়েছিল চরম সহিংসতা। মানুষের মধ্যে ছোট পরিসরের এ নির্বাচনে গ্রামে-পাড়ায় উৎসাহের কমতি নেই। কিন্তু প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হওয়ায় গোলযোগের শঙ্কা থাকছেই। নির্বাচন কমিশনও উদ্যোগী হয়ে সন্তোষজনক পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি।’

তিনি মনে করছেন, ‘ইসির কথায় ভোটাররা অভয় পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে সাংবিধানিক সংস্থাটির চেষ্টায় সাধারণ মানুষ আস্থা রাখতে পারছে না।  ভোটের আগে সহিংসতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা গতবারকে ছাড়িয়ে গেছে। এখনও সময় আছে; ইসিকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে, জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।’

ইউপি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ‘সব ধরনের ব্যবস্থা’  নেয়ার কথা রবিবার জানিয়েছেন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ। এ পর্যন্ত ‘কিছু বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা ঘটলেও ভোটের সময় তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, ‘সংঘাত-সংঘর্ষ হলেই ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আমরা বলে দিয়েছি, কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাশত করা হবে না। এটা মুখের কথাই নয়। অনিয়ম করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। কেউ ছাড় দিলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ভোটের পরিবেশ ভালো রাখতে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, ‘দল ও প্রার্থীদের সহিষ্ণুতা দেখানোর অনুরোধ করছি। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের বলেছি, অনিয়ম মুখ বুজে সহ্য করবেন না। ভোটে কর্মকর্তাদের ভয়-ভীতি ও লাঞ্ছিত করা হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোটারদেরে উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমরা নির্বিঘ্ন পরিবেশ তৈরি করব। আপনারা নির্ভয়ে কেন্দ্রে আসবেন। যাকে খুশি ভোট দেবেন।’

ইউপি ভোটের প্রার্থী ও সমর্থকসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন আইজিপি এ কে এম শহিদুল হকও। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও আনসারের এক লাখ ৮০ হাজার সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, গণ্ডগোল হলে ছাড় দেয়া হবে না। এক্ষেত্রে প্রার্থী ও সমর্থকদের জয়-পরাজয় মেনে নেয়ার মানসিকতা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশপ্রধান।

ইসি সূত্রে জানা গেছে, হানাহানি সংঘর্ষ ও প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইসিতে এ পর্যন্ত দু’শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। তবে অধিকাংশ অভিযোগ আমলে না নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত করিয়ে কিছু কিছু জায়গায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, মাঠ কর্মকর্তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন অভিযোগে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার ছয়টি ইউপির নির্বাচন বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনে অবৈধ প্রভাব বিস্তারের কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল আলিমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মাত্র একটি করে মনোনয়নপত্র জমা পড়ায় একই জেলার পরশুরাম উপজেলার তিনটি ইউপির নির্বাচন স্থগিত করে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সংঘর্ষের কারণে বাগেরহাটের মুলঘর ইউপির নির্বাচনও বাতিল করা হয়েছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের কারণে মামলা করা হয়েছে বরগুনা-২ আসনের এমপি শওকত হাচানুর রহমানের বিরুদ্ধে। সতর্ক করা হয়েছে পাবনা-২ আসনের আজিজুল হককে। বদলি করা হয়েছে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে। এছাড়া বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ ও রামপাল এবং ঝালকাঠির নলছিটি থানার ওসিকে বদলি করা হয়েছে।

উপ-সচিব আরো জানান, নির্বাচনী পরিবেশ ভালো রাখতে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, প্রচারের সময় শেষে আচরণবিধি তদারকিতে প্রয়োজনী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার থেকে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও।

তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে ৭৫২ ইউপিতে ভোটের তারিখ ঘোষণা করা হলেও নানা জটিলতায় বাতিল হয়েছে ও পিছিয়ে গেছে ৩১টির ভোট। ২২ মার্চ হচ্ছে ৭২১টির ভোট, ২৩ মার্চ হবে ১১টির ও ২৭ মার্চ দুটির। বাকি ১৮টির ভোট আইনি জটিলতায় তফসিল থেকে বাদ দিয়েছে ইসি। ৭৩৪টি ইউপির ভোটে মোট প্রার্থী ৩৬ হাজার ৬৪০ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী তিন হাজার ৪১ জন, সাধারণ সদস্য প্রার্থী ২৫ হাজার ৯৮৫ জন এবং সংরক্ষিত পদে প্রার্থী সাত হাজার ৬১৭ জন। ইতোমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৫৪ জন, সাধারণ সদস্য পদে ১৭৯ জন এবং সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

নির্বাচনে ১৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ৭৩৩ জন, বিএনপির ৬১৩ জন এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী এক হাজার ২৪৬ জন। নির্বাচনে সাত হাজার ৮৭টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে; মোট ভোটার সংখ্যা এক কোটি ১৯ লাখ ৪০ হাজার ৭৪১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৯ লাখ ৯৫ হাজার ২৬৯ জন এবং নারী ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৬৯৪ জন।

সোনালীনিউজ/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!