• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শ্রমিক অসন্তোষে তালিকাভুক্ত ৩১ ‘উসকানিদাতা’


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ১০, ২০১৭, ১২:৪৭ এএম
শ্রমিক অসন্তোষে তালিকাভুক্ত ৩১ ‘উসকানিদাতা’

ঢাকার আশুলিয়ায় গত ডিসেম্বরে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে ৩১ জন জাতীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ের শ্রমিক নেতাকে চিহ্নিত করেছেন গোয়েন্দারা। এর সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের (আইএলও) ঢাকা অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তাও যুক্ত রয়েছেন বলে উঠে এসেছে ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদনে।

 ‘উসকানিদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত শ্রমিক নেতাদের একটি তালিকা এসেছে সোনালীনিউজের হাতে। তবে তারা কঠোরভাবে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে গ্রেফতার আতঙ্কে কেউ কেউ ঘরছাড়া বলেও জানিয়েছেন।

গত ১২ ডিসেম্বর থেকে আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল এলাকায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে কয়েকটি কারখানার শ্রমিকেরা কর্মবিরতি শুরু করেন। কয়েক দিনের মধ্যেই শ্রমিক অসন্তোষ আশপাশের কারখানায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বাধ্য হয়ে ওই এলাকার ৫৯টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। 

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে বাণিজ্যমন্ত্রী, নৌমন্ত্রী ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু এতেও পরিস্থিতি শান্ত হয়নি। এর মধ্যে গ্রেফতার হন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক নেতা। কয়েক দিনের টানা আন্দোলনের একপর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। কাজে ফেরেন শ্রমিকেরা। শুরু হয় উৎপাদন কার্যক্রম।

কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় ১০টি মামলা হয়েছে। শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে প্রায় দেড় সহস্রাধিক। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে নতুন করে চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। এ অসন্তোষকে পুঁজি করে ভেতরে ভেতরে উসকানিমূলক কর্মকা- চলছেÑ এমন তথ্যও রয়েছে গোয়েন্দাদের কাছে।

উসকানিদাতারা বেতন বৃদ্ধির আন্দোলনে ইন্ধন দিতে তৎপর রয়েছেন বলেও জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে রফতানি আদেশ আসছে। এটা দেখিয়ে শ্রমিক নেতারা বোঝাতে চাচ্ছেন, ‘এত আয়ের পরও কেন শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হবে না এবং নতুন ওয়েজবোর্ড গঠন করা হবে না।’ 

এই উসকানিদাতার মধ্যে আইএলও ও বিদেশি একটি মহলের সরাসরি স্বার্থ রয়েছে। তারাও এই তৎপরতায় জড়িত। এ ছাড়াও প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোরও ইন্ধন রয়েছে সেখানে। তারাই এসব শ্রমিক নেতাকে আন্দোলনে যাওয়ার উসকানি দিচ্ছে। 

সূত্র আরো জানায়, ‘বর্তমানে গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে পার্টিসিপেশন কমিটি করা হচ্ছে। যে কমিটির তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট কারখানার শ্রমিকরাই ভোট দিয়ে তাদের নেতা নির্বাচন করছে। এতে করে বাইরের শ্রমিক নেতাদের গুরুত্ব কমে যাচ্ছে। ফলে তারা শ্রমিক অসন্তোষ ঘটিয়ে পোশাক খাতকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছেন।

বিজিএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি ফারুক হাসান এ ব্যাপারে বলেন, কারখানাগুলোতে পার্টিসিপেশন কমিটি করার পর থেকেই শ্রমিক নেতারা এর বিরোধিতা করে আসছেন। এ কমিটি করায় তারা ক্ষুব্ধ। এ ক্ষোভ থেকেই তারা উসকানি দিতে পারেন। কারখানার সাধারণ শ্রমিকেরা কখনোই কাজ ফেলে রাস্তায় আন্দোলনে যেতে চান না। বাইরের ইন্ধনেই তারা এ কাজ করেছেন।

গোয়েন্দা তালিকায় নাম থাকা জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বাহারানে সুলতান বাহার বলেন, ‘গোয়েন্দা তালিকায় কাদের নাম আছে তা জানা নেই। তবে আমার নাম থাকলেও তাতে উদ্বিগ্ন নই। আগেও এসব কথা শুনেছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হয়েছেÑ আমি নাকি হাজার কোটি টাকার মালিক, আমার নাকি গুলশানে বাড়ি রয়েছে। কই কোথাও তো কিছু খুঁজে পায়নি।’

‘আমরা সাধারণ শ্রমিকের স্বার্থে এবং শিল্পের স্বার্থে কাজ করি। এ শিল্পের কোনো ক্ষতি হোক আমরাও চাই না।’ ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুবেদা সরকার বলেন, ‘আন্দোলনের সময় বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের প্রায় ১০-১২ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। এখনো গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার আতঙ্কে আমরা ঘর ছেড়ে অন্যত্র থাকছি।’

এ বিষয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুস সালাম বলেন, ‘ষড়যন্ত্রকারীরা ষড়যন্ত্র করবেÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের নজরদারি রয়েছে তাদের ওপর।’ তিনি বলেন, ‘শ্রমিক অসন্তোষের কোনো আভাস আপাতত নেই, তবে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি কঠোরভাবে মনিটরিং করছি।’ 

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ‘আমার জানামতে কারখানাগুলোয় এখন কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই। তবে শ্রমিক নেতাদের নজরদারিতে রেখেছি। তারা কোনো ষড়যন্ত্র করলে সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে শ্রমিক উসকানিদাতাদের তালিকায় রয়েছেন ১১ জন জাতীয় পর্যায়ের ও ২০ জন স্থানীয় পর্যায়ের নেতার নাম। জাতীয় পর্যায়ের নেতারা হলেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট মন্টু চন্দ্র ঘোষ, কাজী মো. রুহুল আমীন, 

স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশন ও কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী মোছা. শামীমা নাসরিন, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল শ্রমিক ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) বাবুল আক্তার ও মোছা. কল্পনা আক্তার, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা মো. রফিকুল ইসলাম সুজন, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও বাসদ নেতা তপন সাহা, 

তৃণমূল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের নেত্রী নাজমা আক্তার, পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা ডা. ওয়াজেদ আলী, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট ও বাসদ নেতা আহসান হাবীব ও জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের নেতা বাহারানে সুলতান বাহার।

আশুলিয়ার স্থানীয় পর্যায়ের উসকানিদাতারা হলেন গার্মেন্টস ফ্রন্ট সভাপতি সৌমিত্র কুমার দাশ, তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন সভাপতি মো. শামীম খান, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সভাপতি আল কামরান, পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি আলী রেজা চৌধুরী তুহিন ও সাধারণ সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু, 

স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. শাকিল, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ শ্রমিক ফেডারেশনের (বিজিআইডব্লিউএফ) সভাপতি লাবণী আক্তার, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. ইব্রাহিম, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. ফরিদুল, টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি মো. মিজানুর রহমান, 

বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের দফতর সম্পাদক মো. জাকিরুল ও প্রচার সম্পাদক মো. বারেক, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম হাসান, ইউনাইটেড গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি সুবেদা সরকার, গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাঈম খান, 

মুক্ত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রানী খান, বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাকশিল্প শ্রমিক লীগের সভাপতি সারোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সভাপতি শহীদুল ইসলাম, পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র সভাপতি রফিকুল ইসলাম, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস ফেডারেশনের আঞ্চলিক সভাপতি মো. মামুন মিয়া।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!