• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা : প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে বেশি গুরুত্বারোপ


সোনালীনিউজ রিপোর্ট মে ১৫, ২০১৬, ১১:৫৩ এএম
সরকারি ব্যাংকের নতুন শাখা : প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিংয়ে বেশি গুরুত্বারোপ

সরকার গ্রাহকের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে আগ্রহী। সেজন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকে নতুন শাখা খোলার পরিবর্তে গ্রাহকের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে প্রযুক্তিনির্ভর মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। অর্থ মনন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় সরকারি ব্যাংক সোনালীর শাখার সংখ্যা ১ হাজার ২০৭টি। রূপালী ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৫৫৪টি। জনতা ব্যাংকের ৯০৪টি ও অগ্রণী ব্যাংকের ৯৩০টি। তার বাইরে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকেরও শাখা রয়েছে।

সরকারি বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত যেসব ব্যাংক মোট শাখার ৮০ শতাংশ লাভজনক দেখাতে পারবে শুধুমাত্র ওই ব্যাংকই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নতুন শাখার জন্য আবেদন করতে পারবে। অন্যথায় নতুন করে কোনো শাখার অনুমোদন দেয়া হবে না। পাশাপাশি যেসব এলাকায় আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা রয়েছে তার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো শাখার অনুমোদন দেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।

যদিও বর্তমানে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর বিশাল একটিই অংশ প্রথাগত ব্যাংকিং সেবার আওতাবহির্ভূত। তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনার লক্ষ্যে মোবাইল প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখন পর্যন্ত ২৯টি ব্যাংককে অনুমতি দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল আর্থিক সেবা দিচ্ছে। তবে সরকারি ব্যাংকগুলোয় এখনো ওই ধরনের কার্যক্রম চালু হয়নি। শুধু রূপালী ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানের অনুমোদন গ্রহণ করেছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে মূলত বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমেই মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে। তারমধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি বিকাশসহ ডাচ্-বাংলা, ইসলামী, ইউসিবিএল, ওয়ান, মার্কেন্টাইল ইত্যাদি ব্যাংকের নাম উল্লেখযোগ্য। সরকারের পক্ষ থেকে ২০১৪ সালের মে মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করার অনুমতি দেয়া হয়।

বর্তমানে ১২টি তফসিলি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অনুমোদন নিয়েছে। তার মধ্যে ৭টি ব্যাংক কার্যক্রম শুরু করেছে। এখন যে কোনো তফসিলি ব্যাংক কর্তৃক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার আবেদন দাখিল করামাত্রই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় তথ্যাদি বিবেচনা ও পর্যবেক্ষণ করে কার্যক্রম শুরুর অনুমতি দিয়ে থাকে।

ওই সেবার মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবাবহির্ভূত জনগোষ্ঠীকে সহজে হিসাব খোলা, নির্দিষ্ট পরিমাণে নগদ জমা ও উত্তোলন সুবিধা প্রদান, ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা, ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট, ব্যালান্স ট্রান্সফার, রেমিট্যান্স গ্রহণ ইত্যাদি সেবা প্রদান করা হয়। সর্বস্তরের জনগণের সুবিধার্থে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর জন্য তফসিলি ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করার পাশাপাশি তার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও বিশাল পরিসরে সম্প্রসারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

সূত্র আরো জানায়, ইতিপূর্বে ২৯১৪ সালে সরকারি বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর নতুন শাখা খুলতে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করে। তখন সরকারি বিশেষায়িত খাতের কর্মসংস্থান ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও আনসার-ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক নতুন শাখা খোলার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের কাছে বিষয়টি অবহিত করা হলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়।

লোকসানি শাখার সংখ্যা কমাতেই ওই ধরনের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। কারণ রাষ্ট্রীয় ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোকে তাদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরকারের দ্বারস্থ হতে হয়। নতুন শাখা খোলার ক্ষেত্রেও সরকারি তহবিলের ওপর নির্ভর করতে হয়। অথচ নতুন শাখা খোলার পর পরই ওসব শাখায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অধিক জনবল প্রয়োজন পড়ে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ওসব শাখায় ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হয় না বলেই সরকারি ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে লোকসানি শাখার সংখ্যা।

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরেই ব্যাংকিং খাতে বেশ কয়েকটি অর্থ জালিয়াতির কারণে বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলোর আর্থিক সূচকগুলোর বেশ অবনতি ঘটছে। রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো ভালো ব্যবসাও করতে পারেনি। ওই কারণে অধিকাংশ শাখাও মুনাফা করতে পারেনি। তারপরও ওই খাতের ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষ শাখা বাড়িয়েই চলেছে।

অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ মে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে নতুন শাখা খুলতে নিরুৎসাহিত করেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে শাখা খোলার পরিবর্তে সরকার কর্তৃক আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবা যেমন─ মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং ইত্যাদি চালুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!