• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‌‘রাজপুত্তুর’ এসেছে, আনন্দমুখর তেঁতুলিয়া (ভিডিও)


আল মামুন জুন ১, ২০১৬, ০১:৫৪ পিএম
‌‘রাজপুত্তুর’ এসেছে, আনন্দমুখর তেঁতুলিয়া (ভিডিও)

‘কাটার মাস্টার’ ‘কাটার স্পেশালিস্ট’ ‘বিস্ময় বালক’ ‘ফিজ’ আদর করে তাকে কত নামেই না ডাকা হয়! কারণ তিনি যে খুব অল্প সময়েই বিশ্ব ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে ঠাঁই করে নিয়েছেন। ইনডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে খেলে দেশে ফিরলে তাকে বরণ নেওয়া হয় ‘রাজপুত্রে’র মতই, মাথায় গোলাপের পাগড়ি পরিয়ে। তিনি রাজপুত্রের চেয়ে কমই বা কী সে!

বলা হচ্ছিল বাংলাদেশের উদীয়মান তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের কথা। পাকিস্তানের সাথে টি-টুয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যাত্রা শুরু হয় তার। এরপর দেশের ক্রিকেটের নতুন ‘সুপারস্টার’ হতে বেশি সময় নেননি মুস্তাফিজ। জীবনের প্রথম একদিনের ম্যাচে ভারতের সাথে ৫ উইকেট দিয়েই তার আগমনের একটা জানান দেন, সেটা আরো দৃঢ় করেন পরের ম্যাচেই ৬ উইকেট নিয়ে।

প্রথম সিরিজেই ৩ ম্যাচে নামের পাশে ১৩ উইকেট। এরপর প্রতিটি ম্যাচ, সিরিজেই অবিশ্বাস্য সব পারফরমেন্সে মুগ্ধ করেন সবাইকে। পাশাপাশি তার কাটার নিয়ে বিস্ময় শুরু হয়। ২০১৫ সালে যারা ৩০ উইকেট বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন, তাদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমানের স্ট্রাইকরেট সবচেয়ে ভালো (১৯.৫)।

mustafiz

প্রথমবার আইপিএল খেলতে গিয়েও দারুণ পারফরমেন্স করেছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে ১৬ ম্যাচ খেলে উইকেট নিয়েছেন ১৭টি। সবার চেয়ে ভালো ইকোনমি রেট ছিল তারেই। এখানে একটি মজার ব্যাপার ঘটেছে। আর সেটি হলো, ওই ১৬ ম্যাচের একটিতেও মুস্তাফিজকে ব্যাট হাতে মাঠে নামতে হয়নি!

আইপিএল শেষে সোমবার ঢাকার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছালে দেশসেরা এ পেসারকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফ থেকে বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়। 
এ সময় তিনি বলেন, ‘মুস্তাফিজ আমাদের বীর, আমাদের সন্তান, বিশ্ব ক্রিকেটাঙ্গনে মুস্তাফিজ এক বিরল প্রতিভা। দেশের নব রাজকুমার। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অর্ভ্যথনা জানিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী তাকে জাতীয় বীর হিসেবে ভূষিত করেছেন।’

এছাড়া, আইপিএলে দুর্দান্ত খেলে দেশের ভাবমূর্তি অন্য দেশের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সুনাম বয়ে আনার জন্য মুস্তাফিজুর রহমানকে প্রধনমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হবে বলেও এসময় সাংবাদিকদের জানান তিনি।

হায়দরাবাদ জয় করে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ এরই মধ্যে তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তারালি গ্রামে ফিরেছে। আইপিএল জয়ের মহানায়ক মুস্তাফিজের গ্রামে এখন উৎসবের আমেজ। 

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টায় একটি চকলেট কালারের প্রাইভেট থেকে মমতামাখা নিজ গ্রামের মাটিতে পা রাখেন ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস’ মুস্তাফিজ। গ্রামে তখন বিদ্যুতের লোডশেডিং। ঘুটঘুটে অন্ধকার। হ্যাজাক লাইট জ্বালিয়ে মুস্তাফিজের অপেক্ষায় শতশত মানুষ। কাটার মাস্টার বাড়ি আসবে বলে শিশু-কিশোর তরুণ-তরুণী সবার মাঝে এক অন্য আনন্দ। 

মুস্তাফিজের আগমনের খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই কেউ হাতে টর্চ লাইট কেউ হারিকেন নিয়ে ছুটে আসে রাস্তায়। বাড়ি থেকে সামান্য দূরে প্রাইভেটকার থেকে নামতেই সবার আগে দেখা হলো তার মা ও বাবার সঙ্গে। কেমন আছো মা? চির লাজুক মুস্তাফিজের জিজ্ঞাসা।

তারপর একে একে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময়। ভাইপো মাহমুদকে কোলে নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখা হলো ভাইঝি মরিয়মের সঙ্গে। তখনো বিদ্যুৎ আসেনি। ছবি তোলার জন্য আলো দরকার হওয়ায় সংবাদকর্মীরা বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেন। কিন্তু বিদ্যুৎ অফিস থেকে যা শোনালো তা প্রকাশযোগ্য ভাষা নয়। হ্যাজাকের আলোয় তোলা হয় ছবি।

তারপর সে আলোয় সিঁড়ি বেয়ে মুস্তাফিজ বাড়ির দোতলায় উঠে গেল। উঠোনে দাঁড়িয়ে রইলো শতশত গ্রামবাসী। এরই মধ্যে বিদ্যুৎ এলো। পথের ক্লান্তি ভুলে মুস্তাফিজ দোতলা থেকে নেমে চিরচেনা সেই লাজুক হাসিতে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। রাত গভীর হয়। মুস্তাফিজকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সবাই ফিরে যায় নিজ নিজ বাড়িতে। মুস্তাফিজ স্বজনদের সঙ্গে মেতে ওঠে আড্ডায়।

মুস্তাফিজও তার ‘ভারত-ভ্রমণে’র অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন সবার সাথে। তিনি বলেন, ‘সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল। সবাই আমাকে খুব বেশি পছন্দ করতেন। বাংলাদেশ জাতীয় দলের ড্রেসিংরুম আর সানরাইজার্স হায়দরাবাদের ড্রেসিংরুমের পার্থক্য ছিল, বাংলাদেশে সবাই পরিচিত। আর সানরাইজার্সের সবাই নতুন। তারপরও আমি সবার প্রিয় ছিলাম। সবাই আমাকে সহযোগিতা করেছে।’ 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!