• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্নিঝরা মার্চ


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২১, ২০১৬, ০৬:১৭ এএম
অগ্নিঝরা মার্চ

সোনালীনিউজ ডেস্ক

আজ ২১ মার্চ। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশ হয়ে উঠেছিল প্রতিবাদ-প্রতিরোধে উত্তাল। মিছিলে মিছিলে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। এদিন পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর আকস্মিক ঢাকা সফর এ অঞ্চলের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ভুট্টোর আগমনের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা নেমে আসে রাজপথে। ভুট্টোর এ সফর ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের আমন্ত্রণে। রাজনৈতিক নেতা হলেও ভুট্টোকে স্বাগত জানাতে কয়েকজন সরকারি আমলা ছাড়া কেউ ছিল না। ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ভবনে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মিলিত হন। বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে।

বাঙালির অসহযোগ আন্দোলন ধীরে ধীরে রূপ নিতে চলেছে সশস্ত্র যুদ্ধের। ক্রমশ জঙ্গি হয়ে উঠছে মিছিলগুলো। সভা-সমাবেশ থেকে বিক্ষোভের গনগনে আগুন ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানী ছাড়িয়ে বিভিন্ন প্রান্তে। প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন কর্মসূচি। তীব্র হয়ে উঠছে আন্দোলন। সর্বত্র উড়ছে কালো পতাকা। বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, ব্যবসা কেন্দ্র।

আজও প্রেসিডেন্ট হাউসে ইয়াহিয়ার সঙ্গে প্রায় ৯০ মিনিট বৈঠক করলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দীন আহমদ। কিন্তু সংকটের কোনো সমাধান হলো না। উদ্বিগ্ন মুজিব-তাজউদ্দীন বেরিয়ে এলেন প্রেসিডেন্ট হাউস থেকে। একদিকে ইয়াহিয়া-মুজিব বৈঠক চলছে, আওয়ামী লীগ নেতারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সংকট নিরসনের। অমীমাংসিত বৈঠক আরো উত্তেজিত করে তুলছে সংগ্রামী বাঙালিকে। বাড়ছে সভা। বড় হচ্ছে মিছিল। ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বরেও স্বাধীনতা ঘোষণার দাবি জোরালো হচ্ছে প্রতিদিনই। অন্যদিকে জেনারেল ইয়াহিয়া তার সামরিক উপদেষ্টাদের নিয়ে সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে। প্রতিদিনই পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের ছয় থেকে সতেরটি বোয়িং ৭০৭ বিমান সৈন্য ও রসদ নিয়ে ঢাকায় আসছে। সৈন্য ও অস্ত্রশস্ত্র বোঝাই হয়ে চট্টগ্রাম বন্দরেও, ভিড়ছে কয়েকটি জাহাজ। বাড়ানো হচ্ছে পাকিস্তান স্থল ও নৌবাহিনীর শক্তি। এরই মধ্য দিয়ে ২১ মার্চ ১২ জন উপদেষ্টা নিয়ে কঠোর সামরিক প্রহরায় ঢাকা এলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। বৈঠকের অগ্রগতি সম্পর্কে জানলেন। পরে ইয়াহিয়াকে জানিয়ে দিলেন, সম্মুখে অপেক্ষমাণ আলোচনায় ‘সমঝোতা’ সম্ভব নয়।

চট্টগ্রামের এক জনসভায় আজই প্রথম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ‘পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা’ বা ‘স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান’ নয়, দাবি জানালেন ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’-এর। তিনি বললেন, মুজিবের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারই স্বাধীন বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক স্থির করবে। মুজিব যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন তাহলে বিশ্বের সব স্বাধীনতাপ্রিয় জাতি স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে। বিকালে ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর বাসভবনের সামনে অপেক্ষমাণ মানুষের বিশাল এক সমাবেশে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের গতি কোনোভাবেই মন্থর করা যাবে না।’

মগবাজারে এক নারী সমাবেশে সেনাবাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকদের নিয়ে একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী গঠনের আহ্বান জানানো হয়। নারায়ণগঞ্জের নারীরা নৌ-মিছিল বের করেন। সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষুব্ধ লেখক-শিল্পীরা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গাজীপুরে জারিকৃত কারফিউ দুপুর ১২টায় ছয় ঘণ্টার জন্য প্রত্যাহার করা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য আবার কারফিউ বলবৎ করা হয়। ঢাকায় স্বাধীন বাংলাদেশ শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ ২৩ মার্চ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি পণ্য বর্জন সপ্তাহ পালনের কর্মসূচি হাতে নেয়। ব্রিটিশ সরকার বাংলাদেশে যাতায়াতের জন্য পাকিস্তানি বিমান ও জাহাজকে মালদ্বীপের ব্রিটিশ ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!