• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অগ্রগতি নেই রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তের কাজে


নিজস্ব প্রতিবেদক মে ১৬, ২০১৬, ০২:১৫ পিএম
অগ্রগতি নেই রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তের কাজে

তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পে প্রাণহানির সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। এর প্রধান কারণ হলো এখানকার পুরনো এবং অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ভবনগুলো। এজন্য রাজধানীর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৩২১টি ভবন অপসারণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে (ডিসিসি) নির্দেশ দেয় জাতীয় ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি কমিটি।

এছাড়া অন্য সিটি কর্পোরেশনের অতি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোও অপসারণের নির্দেশনা দেয়া হয়। রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণে ইতোপূর্বে একধিকবার সরকারি উদ্যোগের কথা জানা গেলেও তা এ যাবৎ বাস্তবায়িত হয়নি। এবং ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ তো দূরের কথা, এক বছর অতিক্রান্ত হলে সেভাবে শুরু হয়নি রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্তকরণ কাজ।

দুই সিটি কর্পোরেশনসহ রাজউকের ওপরে এই দায়িত্ব দিয়ে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রণালয় নির্ভার। জনবল সংকটের অভিযোগ দিয়ে সংস্থা দুইটি দায় চাপাচ্ছে একে অপরকে। আর বিশেষজ্ঞরা বিষয়গুলোকে দেখছেন চরম অব্যবস্থাপনা হিসেবে। রাজধানীতে এমন অনেক ভবনই আছে যেগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় এগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।

এমন অনেক ভবন আছে যার দেয়ালগুলোতে ধরেছে ফাটল, আবার খুলেও পড়েছে ইট। অথচ ভেতরে মানুষের বসবাস। বিশেষজ্ঞরা ঢাকার এরকম ৭২ হাজার ভবনকে ঝুকিপূর্ণ মনে করছেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২রা এপ্রিল রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনকে ঝুকিপূর্ণ ভবন চিহ্নত করে সাইনবোর্ড লাগানোর দায়িত্ব দেয়। কিন্তু এক বছর পার হলেও শুরুই হয়নি এ কাজ। সে খবর জানেনই না দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

ভূমিকম্পের ঝুঁকির প্রেক্ষাপটে রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের বিষয়টি বারবার আলোচনায় উঠে আসে। ভূমিকম্প ছাড়াও রাজধানীতে ঝুঁকপূর্ণ পুরনো ভবন, নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ে, হেলে পড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির দৃষ্টান্ত রয়েছে। ২০০৪ সালে পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজারে জরাজীর্ণ ভবন ধসে ১৯ জন মানুষ মারা যায়। একই বছর সাভারের বহুতলবিশিষ্ট স্প্রেকট্রাম পোশাক কারখানা ভবন ধসে শতাধিক কর্মীর প্রাণহানি ঘটেছিল।

২০০৬ সালে তেজগাঁওয়ে ফিনিক্স ভবন ধসে প্রাণহানি ঘটে ৫০ জনের, ২০১০ সালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে অবৈধভাবে নির্মিত একটি পাঁচতলা ভবন ধসে পড়ার ফলে ভবন ও তার আশপাশের কাঁচাঘরে বসবাসকারী ২৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। এ দুর্ঘটনার পরপরই ওই ভবনের পাশের আরেকটি ৭ তলা ভবন হেলে পড়ে।

প্রায় একই সময় পূর্ব নাখালপাড়ার রাজউকের অনুমোদনহীন এবং অবৈধভাবে নির্মিত একটি ৫ তলা এবং মধ্য বেগুনবাড়িতে আরেকটি ৪ তলা ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটে। এখনো এভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোয় নির্বিঘ্নে চলছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা। অথচ এর কোনো প্রতিকার করা যাচ্ছে না।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মেদ জানান, এ সম্বন্ধে কয়েকটা চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সচিব, পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবকে এই বিষয়ে উপ-আনুষ্ঠানিক পত্র দেয়া হয়েছে। তারা এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই বিষয়ে যেহেতু আমাদের স্পেশালাইজড ইঞ্জিনিয়ার নেই, তাই অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেয়ার দায়িত্ব রাজউকের রয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা তাদের চিঠি দিয়েছি, যাতে তাঁরা কাজটি সম্পূর্ণ করেন। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ব্যর্থ হলে দায় নিতে হবে কর্মকর্তা কর্মচারীদের। এ জন্যে দোষীদের আইনের আওয়াতায় আনার কথাও বলেন তারা। 

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, দায়িত্বহীনতা এবং দায়িত্বে অবহেলার জন্য কোন দায়বদ্ধতা সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নেই।

ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনে যদি সরকারি কোন কর্মকর্তা তার দায়িত্ব পালন না করে, তাবে তাকে শাস্তি দেয়ার বিধান আছে। আমরা লক্ষ করেছি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের প্রয়োগ নেই।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ ও ঝুঁকিপূর্ণ নির্মাণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতায় ভবন ধসে যদি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে তবে এটাকে কেবল মানবিক বিপর্যয়ই বলা যাবে না কিছু মানুষের লোভ, দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার ফল হিসেবেও ইতিহাসে চিহ্নিত হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আমা

Wordbridge School
Link copied!