• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অডিটর জেনারেলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট


আদালত প্রতিবেদক মে ২, ২০১৭, ০১:০৫ পিএম
অডিটর জেনারেলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট

ঢাকা : আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সাড়ে ৫ হাজার অডিটরকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে পদোন্নতি না দেয়ায় অডিটর জেনারেলের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার (০২ মে) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় তৃতীয় শ্রেণীর অডিটরদের পক্ষে অ্যাডভোকেট তনয় কুমার সাহা এ রিট আবেদন দায়ের করেন। রিট আবেদনে পদোন্নতি সংক্রান্ত বিভাগীয় পরীক্ষা বাতিল চাওয়া হয়েছে। অডিটর জেনারেল,জন প্রশাসন সচিব,অর্থ সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

অ্যাডভোকেট তনয় কুমার সাহা বলেন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দফতরে কর্মরত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অডিটরের স্বয়ংক্রিয় ভাবে পদোন্নতির দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।

বৈষম্য এড়াতে প্রায় চার বছর আগে অডিটরদের পদমর্যাদা তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু  জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সে সুপারিশ আমলে না নেওয়ায়  হাইকোর্টে রিট করেন অডিটররা।

২০১৬ সালে আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট অডিটরদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার নির্দেশ দেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। উচ্চ আদালতের আদেশের পরও অডিটরদের পদোন্নতি না দিয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির পদে পদায়নের জন্য বিভাগীয় পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় অডিটর জেনারেল।

বিদ্যমান জনবলকে পদোন্নতি না দিয়ে বিভাগীয় পরীক্ষার আয়োজন আদালতের নির্দেশনার লঙ্ঘন বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। তবে আপিল খারিজ সম্পর্কে কোনো ধারণা কিংবা এ-বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না পাওয়ার কারণেই অডিটরদের পদোন্নতি দেয়া হয়নি বলে দাবি করছেন সিএজির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

এ-বিষয়ে সিএজির মুখপাত্র ও পরিচালক (এমআইএস) তানভীর আখতার হোসেন খান বলেন, ‘অডিটরদের পদোন্নতির ব্যাপারে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল খারিজ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তাই এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে সিএজির করা আপিল খারিজ হয়ে থাকলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নির্দেশনা মেনে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

তথ্যমতে, সিএজি দফতরে কর্মরত প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অডিটর এখনও তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ ১৯৭৩ সালের অডিটর পদের সমান স্কেল-পদমর্যাদার অনেক পদকেই পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু সিএজি ও সিজিএ’র অডিটররা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন। তাই ২০০০ সালের পর থেকেই অডিটরদের তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করতে সিএজি’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হচ্ছে।

২০১২ সালে বিষয়টি আমলে নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে সিএজি’র সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পর্যালোচনা শেষে ২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর সিএজি’র দুই হাজার ৮৪৬ জন ও সিজিএ’র ৮৯২ জন অডিটরকে তৃতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা থেকে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার সুপারিশ করে ওই কমিটি। ২০১৩ সালের শেষদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের কাছে সুপারিশ পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সে সুপারিশ আমলে নেয়নি।

এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশ উপেক্ষিত হওয়ার পর ২০১৫ সালে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতে রিট করেন। ওই বছরের ৬ ও ১০ ডিসেম্বর শুনানি শেষে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের যৌথ বেঞ্চ ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অডিটরদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার পাশাপাশি বেতন স্কেল হালনাগাদ করার নির্দেশ দেন। উচ্চ আদালতের এ নির্দেশনা প্রায় এক বছরেও পরিপালন হয়নি।

নির্দেশনার পর সিএজি’র তরফে আপিলের কথা জানানো হলেও নিয়ম মেনে রায় ঘোষণার পরবর্তী ১৯৮ দিনের মধ্যে আপিল করেনি সিএজি। বরং নির্ধারিত সময়ের পর চলতি বছরের ১৯ মার্চ উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিপক্ষে লিভ টু আপিল আবেদন করে সংস্থাটি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল না করা এবং এ বিষয়ে সিএজির দেওয়া ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের বেঞ্চ আপিল আবেদন নাকচ করে দেন। সিএজি’র লিভ টু আপিল আবেদন নাকচের কারণে এর আগে অডিটরদের পদোন্নতির বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ এখনও বহাল। সিএজি’র করা লিভ টু আপিল খারিজের পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গত ২৫ এপ্রিল অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এদিকে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা মেনে অডিটরদের দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত না করেই তাদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তার (এসএএস/এসআরএএস) পদে পদায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সিএজি। এ জন্য গত ১৭ এপ্রিল বিভাগীয় পরীক্ষার সময়সূচি ঘোষণা করেছে সংস্থাটি। ঘোষণা অনুযায়ী চলতি সপ্তাহেই ওই বিভাগীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএজির অডিটর পদে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘পদোন্নতির বিষয়টি নতুন নয়। বহুদিন ধরে এ বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সুপারিশ করেছিল আর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমলে নেয়নি। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতও নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সিএজি মানছে না। এতদিন তারা আপিলের কথা বলে কালক্ষেপণ করেছে। আর আপিল খারিজের পরও বিষয়টি গোপণ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সিএজি বৈষম্য করলেও শাস্তিমূলক বদলি ও হয়রানির ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছি না।’

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী তনয় কুমার সাহা বলেন, ‘সিএজির অডিটরদের পদোন্নতির বিষয়ে উচ্চ আদালতের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়ন না করে উল্টো বিভাগীয় পরীক্ষা গ্রহণের উদ্যোগ হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের অবমাননা বা কন্টেম্ট অব কোর্টের শামিল। এটি জনস্বার্থবিরোধীও বটে।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!