• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ, শিক্ষার্থীর স্বামী কারাগারে!


পাবনা প্রতিনিধি মার্চ ২৭, ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম
অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ, শিক্ষার্থীর স্বামী কারাগারে!

পাবনা: জেলার চাটমোহর ডিগ্রি কলেজে পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রতিবাদ করায় রাবেয়া খাতুন (২০) নামে এক শিক্ষার্থীর স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজ অধ্যক্ষের দায়ের করা একটি মামলায় রোববার (২৬ মার্চ) রাবেয়ার স্বামী রিপন হোসেনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই শিক্ষার্থীর দাবি, এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায় হচ্ছে মর্মে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। আর এ বিষয় নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়। পাশাপাশি ফেসবুকে লেখালেখি করতে থাকেন অনেকে। এতে ক্ষুব্ধ হন কলেজের অধ্যক্ষ। প্রতিশোধ নিতেই তিনি (অধ্যক্ষ) তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেন।   

কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ হয়। এ সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণ বাবদ ৬ হাজার ৫শ’ টাকা ফি এবং কোচিং-এর জন্য আরও তিনশত টাকা মিলে মোট ৬  হাজার ৮শ’ টাকা আদায় করে। বিষয়টি নিয়ে প্রতিবাদী হয় রাবেয়া খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী। তিনি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি জানিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। উপজেলা প্রশাসন অভিযোগ তদন্ত করে। বিষয়টি নিয়ে কলেজের সাবেক ও প্রবীণ শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্নভাবে প্রতিবাদ জানান ও অধ্যক্ষের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লেখালেখি করতে থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হন অধ্যক্ষ। শনিবার (২৫ মার্চ) সকালে রাবেয়া খাতুন পরীক্ষার প্রবেশপত্র আনতে কলেজে গেলে আবার তা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।

রাবেয়া খাতুন জানান, তিনি প্রবেশপত্র আনতে কলেজে গেলে অধ্যক্ষ তাকে প্রবেশপত্র দেন না। কারণ জানতে চাইলে তাঁর স্বামী রিপন হোসেনকে কলেজে ডেকে আনতে বলা হয়। তিনি স্বামী রিপন হোসেনকে কলেজে ডাকেন। এ সময় অধ্যক্ষ তাঁকে বিভিন্নভাবে বকাবকি করেন। এক পর্যায়ে পুলিশ ডেকে তাকে আটক করতে বলেন। পরে পুলিশ তাঁকে নিয়ে যায়। রাতে অধ্যক্ষ বাদি হয়ে রিপন ও তার পরিচিত রেজাউল করিম নামের দুইজনকে আসামি করে তথ্য প্রযুক্তি আইনে একটি মামলা করেন। পরদিন রোববার মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিপনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

রাবেয়া খাতুনের অভিযোগ, তিনি অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেয়ায় তাঁর স্বামী ও স্বামীর বন্ধুকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এছাড়া তাঁকে পরীক্ষার প্রবেশপত্রও দেয়া হচ্ছে না। এতে তিনি অসহায় বোধ করছেন। একইসাথে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আহসান হাবিব বলেন, অধ্যক্ষর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনার দিন দুপুরে আমরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিলাম। পরে অধ্যক্ষ দুইজনের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করেছেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিপনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

এ প্রসঙ্গে চাটমোহর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, মেয়েটি টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করেছিল। আমরা তাঁকে পরীক্ষার সুযোগ দিয়েছি। এরপরেও তাঁর স্বামী ও স্বামীর বন্ধু আমাকে বিভিন্নভাবে হেয় করছে। ফেসবুকে বিভিন্ন অশালীন কথা লিখে প্রচার করছে।

চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বেগম শেহেলী লায়লা বলেন, আমরা এ বিষয়টিও তদন্ত করবো। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে কিছু করা হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র না দিয়ে উল্টো তাকে জিম্মি করে তার স্বামী ও তার বন্ধুকে ডেকে পুলিশে দিয়ে হয়রানি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন মহলের অভিমত, অধ্যক্ষ যে অভিযোগ করেছেন সে বিষয়ে তিনি অনেক আগেই আইনের আশ্রয় নিতে পারতেন। তা না করে তিনি চতুরতার আশ্রয় নিয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীসহ সুশীল সমাজ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!