• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অনুবাদে সমৃদ্ধ বইমেলা


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০১৭, ০১:২৯ পিএম
অনুবাদে সমৃদ্ধ বইমেলা

ঢাকা : গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারো বইমেলায় এসেছে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক অনুবাদের বই। যা আমাদের প্রকাশনা শিল্প এবং বইমেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। অনুবাদ প্রকাশনার তালিকায় একের পর এক যুক্ত হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য,  ইউরোপ,  উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কালজয়ী সাহিত্যিকদের আলোড়ন সৃষ্টিকারী রচনা। হোমার, সফোক্লিস থেকে শুরু করে উইলিয়াম শেক্সপিয়র, শেলি, কিটস, বায়রন, মার্ক টোয়েন, সমারসেট মম,  ম্যাক্সিম গোর্কি, মায়াকোভাস্কি, পাবলো নেরুদা, ইমরুল কায়েস, কাহলিল জিবরান, নাজিম হিকমতসহ হালের গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস, মারিও ভার্গাস ইয়োসা, অরুন্ধুতি রায়, ঝুম্পা লাহিড়ির রচনার অনুবাদের বই এখন পাওয়া যাচ্ছে একুশের বইমেলায়। 

এতে একদিকে যেমন বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে আমাদের একটি সেতুবন্ধন সৃস্টি হচ্ছে, অন্যদিকে মেলায় আগত বইপ্রেমীদের যারা মনে করছেন আমাদের লেখকদের রচনার মান ভালো নয়, তাদের একাংশের চাহিদাও পূরণ হচ্ছে এই অনুবাদ গ্রন্থের মাধ্যমে। তাই মেলায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ব্যাপকসংখ্যক অনুবাদের বই। আর এতে প্রকাশকরাও ভীষণ খুশি। এ ব্যাপারে ঐহিত্য’র বিক্রয় কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বইপ্রেমীদের চাহিদার কথা ভেবেই এবারো বেশ কয়েকটি অনুবাদের বইমেলায় এনেছি। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা খ্যাতিমান লেখক এবং বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বইগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। ফলে বইপ্রেমীরা সহজেই এতে আকৃষ্ট হন।’

গতকাল ছিল একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিন। মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১৪৩টি এবং ৩১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। 

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় সমর সেনের জন্মশতবার্ষিকী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল। আলোচনায় অংশ নেন কালি ও কলম পত্রিকার সম্পাদক আবুল হাসনাত, অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান ও কবি পিয়াস মজিদ। সভাপতিত্ব করেন ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক।

সমর সেনের মনন ও কবিতাকৃতি শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে প্রাবন্ধিক বলেন, ‘যে শাহরিক স্তব্ধতা–নিঃসঙ্গতা আর মধ্যবিত্তের পলায়নবাদী নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে সমর সেন কবিতা শুরু করেছিলেন, যে তীক্ষ ব্যঙ্গ আর বিদ্রুপ ছিল তার লেখনীতে তা দিশা পেয়ে যায় মার্কসীয় প্রত্যয়ে সচেতনতার সরণী বেয়ে। রাত্রির অন্ধকার আর হলুদ চাঁদের বদলে প্রাণ ডুবে যেতে চায় ফসলের সবুজ বন্যায়। তাঁর জন্মের এই একশ বছর পরেও দেখি মধ্যবিত্ত আরো নিশ্চেতন, ভোগী ও ধূর্ত উঠেছে। সবুজ ফসল ভরা ক্ষেতের স্বপ্নাতুর বয়ান আজও মধ্যবিত্তের চেতনায় আলোড়ন তোলে- তাই সমর সেনের কবিতা প্রাসঙ্গিকভাবেই আমাদের সেই ইতিহাসবোধেরই ইমেজিস্ট অর্ন্তবয়ন হয়ে ওঠে।’

আলোচকরা বলেন, ‘বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি সমর সেনের বিচার করতে হলে শুধুমাত্র কবিতা ও সাহিত্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, তার দর্শন ও চিন্তাচেতনাকেও আমাদের বিশ্লেষণ করতে হবে। আত্মসমালোচনা ও আত্মপর্যবেক্ষণবোধ তাকে অনন্যতা দান করেছে। কলকাতার ক্ষয়িষ্ণু সমাজকে তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন নাগরিক সমাজের বলয়ের মধ্যে থেকেই। সমাজের অসঙ্গতি, হতাশা দারিদ্র্য- তার কবিতায় অসামান্য শিল্পদক্ষতায় মূর্ততা পায়।’

সভাপতির বক্তব্যে আহমদ রফিক বলেন, ‘ত্রিশের দশকের শেষ থেকে চল্লিশের দশকে সমাজতান্ত্রিক সাহিত্যের যে ধারা বহমান ছিল সমর সেন ছিলেন সে ধারার অন্যতম কবি। ঔপনিবেশিক আমলে কলকাতার ক্ষয়িষ্ণু মধ্যবিত্ত সমাজ ছিল কবি সমর সেনের কবিতার উপজীব্য। বাংলা কাব্যসাহিত্যে তিনি নিজের জন্য যেমন একটি স্থায়ী স্থান তৈরি করে গেছেন তেমনি আমাদের জন্যও রেখে গেছেন অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত।’ 

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল গোলাম কুদ্দুছের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বহ্নিশিখা’ শিল্পীদের পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাইদুর রহমান বয়াতি, আলম দেওয়ান, রুশিয়া খানম, আনোয়ার বাউল, রনজিত দাস বাউল এবং মমতা দাসী বাউল। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বাবু জামান (তবলা), ফায়জুর রহমান (বাঁশি), মহিন শাহ (মন্দিরা), নির্মল কুমার দাস (দোতারা) এবং মিজান (বাংলা ঢোল)।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!