• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমোদনহীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কঠোর হচ্ছে সরকার


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১১, ২০১৬, ১১:৩৪ এএম
অনুমোদনহীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, কঠোর হচ্ছে সরকার

সরকার দেশের সকল অনুমোদনহীন ইংরেজি মাধ্যম স্কুল বন্ধ করার পাশাপাশি অনুমোদিত স্কুলের অবৈধ শাখাও বন্ধ করে দেবে। একই সাথে ওসব স্কুলের পরিচালনা ও সার্বিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করতে মনিটরিং সেল, ভর্তি ফি নির্ধারণসহ বেশ কয়েকটি শর্তযুক্ত যুগোপযোগী নীতিমালা করা হচ্ছে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার অভিজাত আবাসিক এলাকায় পরিচালিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলোকে বাণিজ্যিক এলাকায় সরিয়ে নেয়ারও উদ্যোগ নেয়া হবে।

বর্তমানে কেবল রাজধানী ঢাকাতেই ছোট-বড় প্রায় সাড়ে তিনশ’ অবৈধ ইংরেজি মাধ্যম স্কুল রয়েছে। অথচ ঢাকা বোর্ড থেকে মাত্র ১৬৫টি প্রতিষ্ঠান ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসেবে অনুমোদন নিয়েছে। শিগগিরই ওসব বৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে দিতে এবং অবৈধগুলোকে বন্ধ করতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান চালাতে যাচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শুধুমাত্র ইংলিশ মিডিয়াম নয়, প্রি-ক্যাডেট মাদ্রাসা, সাধারণ স্কুলসহ বাংলা মাধ্যমে পরিচালিত নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানও রয়েছে কয়েক হাজার। সেগুলোর বিরুদ্ধেও শিগগিরই অ্যাকশন শুরু হবে। সরকারের এই উদ্যোগকে অভিভাবকরা স্বাগত জানিয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, শিক্ষা বোর্ড ও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কাছে দেশের ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ঢাকা বোর্ড থেকে এখন পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম হিসাবে ১৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অথচ ঢাকাতেই অনিবন্ধিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ৩শ’। যদিও ২০১১ সালে শিক্ষা বোর্ডগুলো অনুমোদনহীন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের তালিকা প্রয়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। 

কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ওই কাজ খুব একটা এগোয়নি। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত ২০১৩ সালে দেশে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের জন্য একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী দ্রুতই ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের জন্য খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়।

কিন্তু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের কর্মকর্তারা ওই বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাননি। বরং ওই বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির জন্য তৎকালীন যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক) এএস মাহমুদকে (বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব) আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটিতে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের প্রধানদের প্রাধান্য দেয়া হয়। এখনো ওই কমিটির খসড়া প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্র জানায়, সরকার সম্প্রতিককালে গুলশানে জঙ্গি হামলার পর আবাসিক এলাকার বৈধ ও অবৈধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। ওসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিগগিরই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, রাজউক ও সিটি করপোশেনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। তাছাড়া বিতর্কিত পিস স্কুল বন্ধ হওয়ার পর সরকারের নেয়া এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে অভিভাবকরা বলছেন, কোনো শিক্ষার্থী যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা মাথায় রাখতে হবে।

এদিকে অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রসঙ্গে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মাহবুবুর রহমান জানান, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো ব্রিটিশ কাউন্সিলের সিলেবাস ও কারিকুলাম পড়ায়। তারা কেবল শিক্ষা বোর্ড থেকে একটি রেজিস্ট্রেশন নেয়। যারা রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় উদ্যোগ নিলে বোর্ড সর্বাত্মক সহায়তা দেবে।

অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে মাউশি মহাপরিচালক প্রফেসর ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান জানান- প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুমোদনহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নেয়নি শুধুমাত্র তারাই নয়, যারা অনুমোদন নিয়ে অবৈধ শাখা পরিচালনা করছে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, অবৈধ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আর চলতে দেয়া হবে না। সরকারের নিয়ম-নীতি, আইন-কানুন মেনে যারা প্রকৃতই শিক্ষা বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠান চালাতে চান, কেবল তারাই থাকবেন। যে প্রতিষ্ঠানের নিজেরই অনুমোদন নেই, অবৈধভাবে চলে, ওই প্রতিষ্ঠান কীভাবে শিক্ষাদানের মতো মহৎ কাজ করবে?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!