• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
জাতীয় পার্টিতে হতাশা

অনুষ্ঠানে দাওয়াতও দেয়া হয় না আমাদের


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৯, ২০১৭, ০৬:০৬ পিএম
অনুষ্ঠানে দাওয়াতও দেয়া হয় না আমাদের

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (এরশাদ) নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। ক্ষমতার অংশীদার হয়েও না পাওয়ার বেদনায় নীল তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। এমনকি দলের মন্ত্রী-এমপিরাও সাধারণ নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেন না। ফলে আগামীতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট করলেও জাপার নেতাকর্মীদের তাতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকবে না বলে মনে করেন দলটির নেতাকর্মীরা। 

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সাথে মহাজোট গঠন করে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে ২৭টি আসন নিয়ে সরকারের অংশীদার হন তারা। মন্ত্রিসভাতেও জাপার নেতারা অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ২০১৩ সালে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করলে তাতেও জাপার নেতারা মন্ত্রী ছিলেন।

সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাপা প্রধান বিরোধীদল হওয়ার পাশাপাশি সরকারের তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পদও গ্রহণ করেন। এ ছাড়া দলের চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে করা হয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। বর্তমান ১০ম সংসদে জাপার মন্ত্রী-এমপি রয়েছেন মোট ৪০ জন।

সংসদে একই সাথে প্রধান বিরোধীদলের ভূমিকার পাশাপাশি সরকারেও রয়েছে জাপা। কিন্তু বারবার আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে থাকলেও ক্ষমতার কোনো সুফল পাচ্ছেন না জাপার নেতাকর্মীরা। গুটি কয়েক মন্ত্রী-এমপি সুযোগ সুবিধা পেলেও স্থানীয় নেতাকর্মীরা কোনো অনুষ্ঠানেও দাওয়াত পান না। এমনকি মন্ত্রী-এমপিরা তৃণমূলের নেতকর্মীদের কোনো খোঁজখবর নেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা।

চাঁদপুর মতলব উত্তরের জাতীয় যুব সংহতির সভাপতি অ্যাডভোকেট শামীমুল ইসলাম বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আগে আমরা আওয়ামী লীগের সাথে অনেক সভা-সমাবেশ করেছি। নেতাকর্মীরা অনেক পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু এর কোনে সুফল পাচ্ছি না আমরা। টিআর-কাবিখাসহ কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় না। কোনো সুপারিশও আওয়ামী লীগ নেতারা গ্রহণ করে না। রাষ্ট্রীয় কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াতও দেয়া হয় না আমাদের। এক কথায় জাপা নেতাকর্মীদের কোনো মূল্যায়ন করে না সরকার।

এ কারণে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুবই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। আগামীতে আওয়ামী লীগের সাথে জোট হলেও নেতাকর্মীরা মন দিয়ে আর ভোট চাওয়া বা অন্য কাজ করবে না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি আজিজুল হুদা চৌধুরী সুমন বলেন, তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম ক্ষুব্ধ। সরকারে থেকেও তারা কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাই পাচ্ছে না। আবার চাল-পেঁয়াজের দাম ৭০-১০০ টাকা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, মানুষ জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি জোটে দেখতে চায় না। বিকল্প তৃতীয় শক্তি চায়। কিন্তু নতুন কোনো শক্তি গড়ে না ওঠায় এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিই তৃতীয় শক্তি হয়ে উঠতে পারে।

জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আহসান শাহজাদা বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে জাপার কোনো উপজেলা চেয়ারম্যান থাকলেও তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারেন না। আওয়ামী লীগ নেতারা সব কাজ নিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ জাপাকে ভোটে গুরুত্ব দিলেও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে চায় না। অথচ কম সংসসীয় আসন থাকলেও জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। 

তিনি বলেন, জাপার মন্ত্রী-এমপিদের সাথেও তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না। আবার কোনো কোনো এমপি বিভিন্ন দিবসে নৌকার স্লোগান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, ’৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাথে থেকেও আমরা তেমন কিছু পাইনি। আগামীতে যারা জাপার তৃণমূলকে গুরুত্ব দেবে তাদের সাথে যেন জোট গঠনের ব্যাপারে পার্টির চেয়ারম্যান অগ্রাধিকার দেন। অন্যথায় আগামী নির্বাচনে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে তিনি সতর্ক করেন। 

জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন রাজু গত শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় যুব সংহতির এক সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের সাথে রয়েছি। কিন্তু ক্ষমতার কোনো স্বাদ পায়নি। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরাও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের তেমনভাবে খোঁজ নেন না। আগামী এক বছর আমরা কিছু স্বাদ পেতে চাই। না হলে তা সরকারের জন্য বিস্বাদ হবে।

গতকাল টেলিফোনে তিনি বলেন, সরকারের সাথে থাকলেও আমাদের নেতাকর্মীরা ক্ষমতার স্বাদ থেকে বঞ্চিত। নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই এটি হচ্ছে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজনে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসতে হবে। মহাজোটে থাকলেও কর্তৃত্ব বজায় না থাকলে প্রকৃত সম্মান পাওয়া যাবে না।

গত শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ময়মনসিংহ মহানগরের পরিচিতি সভায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা সাধারণ সম্পাদক ফকরুল ইমাম এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ আমাদের সাথে নির্বাচনী বন্ধুত্ব করে জয়লাভ করে। কিন্তু সরকার গঠন করার পর সব কিছু ভুলে যায়। জাতীয় পার্টি শুধু ব্যবহৃত হচ্ছে, আমরা আর ব্যবহার হতে চাই না।

সোনালীনিউজ/জেএ

Wordbridge School
Link copied!