• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অন্তর্দ্বন্দ্বে তোপের মুখে জামায়াতের আমির


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬, ১০:২২ এএম
অন্তর্দ্বন্দ্বে তোপের মুখে জামায়াতের আমির

ঢাকা: সেক্রেটারি জেনারেলসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেয়া নিয়ে জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের (নীতিনির্ধারণী ফোরাম) তোপের মুখে পড়েছেন নবনির্বাচিত জামায়াতের আমীর মকবুল আহমাদ। স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত দলটির মধ্যে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ অন্তর্দ্বন্দ্ব। আর এই দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে পড়েছে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত। দলীয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

জামায়াতের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মকবুল আহমাদ জামায়াতের মধ্যে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানের পর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নিজের অনুসারী এটিএম মাছুমকে নিয়োগ দেন। কোনো কারণে ডা. শফিক কারাগারে গেলে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে তারই কোনো অনুসারী যাতে থাকেন- এজন্যই এ কৌশল নেয়া হয়েছে। এটিএম মাছুম জামায়াতের আমীরসহ সব নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। তাকে বিশ্বস্ততার পুরস্কার হিসেবে উল্লিখিত পদ দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর মকবুল আহমাদ আমীর হিসেবে শপথ নেন। অতি গোপনে চলতি মাসে তিনি জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়োগ দেন। একই সঙ্গে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে এটিএম মাছুম, রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদকে নিয়োগ দেন। নায়েবে আমীর হিসেবে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরওয়ার, মাওলানা শামসুল ইসলাম, আতাউর রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

জামায়াতের এক নেতা জানান, দলের গঠনতন্ত্র না মেনে জামায়াতের আমীর মকবুল আহমাদ উল্লিখিত পদগুলোয় নিয়োগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্যদের পরামর্শ নেয়ার কথা থাকলেও তা তিনি অনুসরণ করেননি। ওই নেতার ভাষ্য, কমিটি গঠনে এ ধরনের জালিয়াতি দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতে কখনও হয়নি। এ কারণে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমে জানানো হয়নি। ১১ ডিসেম্বর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘যথাযোগ্য মর্যাদায় ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান ১১ ডিসেম্বর নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান করেছেন।’

জামায়াতের আরেক সূত্রে জানা যায়, এ দ্বন্দ্বের কারণে গত কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক, যুদ্ধাপরাধের দণ্ড পাওয়া সিনিয়র নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মৃত্যুদণ্ড পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলাম, আবদুস সুবহানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। একই অবস্থা কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রেও। উল্লিখিত নেতারা সবাই কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য। এছাড়াও কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন- অধ্যাপক তাসনীম আলম, আবদুল হালিম, নুরুল ইসলাম বুলবুল, ডা. আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সেলিম উদ্দিন। সূত্রমতে, জামায়াতের কার্যনির্বাহী পরিষদের ১৯ সদস্যের মধ্যে ১৪ জনকে নিয়োগ দেয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বন্দ্বের কারণে বাকিদের ব্যাপারে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, এ অবস্থায় গত ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর অজ্ঞাতস্থানে জামায়াত নেতারা কমিটি গঠন নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জামায়াতের আমীর, নতুন সেক্রেটারি জেনারেল, মিয়া মোহাম্মদ গোলাম পরোয়ার, মাওলানা শামসুল ইসলাম, আতাউর রহমান, নুরুল ইসলাম বুলবুল, আবদুল হালিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে সেক্রেটারি নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্র না মানার কারণে ব্যাপক তোপের মুখে পড়তে হয় আমীরকে। গঠনতন্ত্র না মানার কারণও তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ওই বৈঠকে। মকবুল আহমাদ যুক্তিসঙ্গত কোনো জবাব দিতে পারেননি।

জামায়াতের এক নেতা জানান, দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন সরকার জেনে যাচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতার সঙ্গে সরকারের যোগাযোগ রয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কয়েক নেতাকে সন্দেহের তালিকায় রেখে সামনে অগ্রসর হচ্ছেন।

জামায়াতের ওই নেতার আশঙ্কা, যেখানে দলের মাঠপর্যায়ের একজন কর্মী সরকারের নির্যাতনে ঘরে থাকতে পারছে না, সেখানে জামায়াতের আমীর বা সেক্রেটারি জেনারেল কীভাবে ঢাকায় অবস্থান করেন। সম্প্রতি ভারপ্রাপ্ত থাকা অবস্থায় ডা. শফিক বিএনপির এক গুরুত্বপূর্ণ নেতার সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।

জামায়াতের ওই নেতার সন্দেহ থেকে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ এক নেতার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে ওই নেতা জানান, জামায়াত নেতাদের ব্যাপারে তাদেরও সন্দেহ রয়েছে। তাদের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে- এমন অভিযোগ বিএনপির কাছেও রয়েছে। যার কারণে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে জামায়াত ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে গাছাড়া ভাব নিয়ে চলেছে।

এদিকে ব্যারিস্টার রাজ্জাকের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় তার অনুসারী জামায়াতের আইনজীবীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তার ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবী তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, সামনের দিনে জামায়াত নেতাদের মামলা চালানোর ক্ষেত্রে ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে মাঠ পর্যায়ের এক নেতা জানান, জামায়াত একটি সুশৃঙ্খল দল। এর মধ্যে পদ বা পদবি নিয়ে কখনো কারো লোভ ছিল না, এখনো নেই। আর আপনারা যে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন এটা আদৌ ঠিক নয়। কারণ দলের আমীর যা করেন সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই করেন। তিনি ক্ষমতার লোভে আমীর পদে অধিষ্ঠিত হননি বরং তাকে জনগণের ইচ্ছায় ওখানে বসানো হয়েছে। সুতরাং এসব অভিযোগ কেবল ভিত্তিহীনই নয়; অযৌক্তিকও বটে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!