• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
কক্সবাজার-টেকনাফে সতর্কতা

অন্ধকারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ২৪, ২০১৬, ০৯:৪০ এএম
অন্ধকারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা

ঢাকা: মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান হত্যা, অত্যাচার, নির্যাতন ও আতঙ্কে  রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে। কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়ার বেশ কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে গভীর রাতের অন্ধকারে ঢুকছে তারা। আর দিনের বেলায় নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাসমান অবস্থায় থাকছে। অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বেশির ভাগই নারী ও শিশু। রেজিস্টার্ড ও আন-রেজিস্টার্ড ক্যাম্পে আশ্রয় না পেয়ে কক্সবাজার ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে এসব রোহিঙ্গা।

এদিকে, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আরো বেশি নজরদারি বাড়িয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড। বুধবার ভোর থেকে সীমান্তে এ নজরদারি বাড়ানো হয়।

একই দিন কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পৃথক অভিযানে ৪ দালালসহ ৭০ জন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ২৯৪ রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। অন্যদিকে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে পতাকা বৈঠকে করেছে বিজিবি ও বিজিপি। বৈঠকে সীমান্ত এলাকায় যেকোনো ধরনের সমস্যা সমাধানে আলোচনার মাধ্যমে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে একমত হয়েছে বিজিবি ও বিজিপি।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের নতুন কৌশল অবলম্বন করছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। দিনের বেলায় ছোট ছোট নৌকায় নাফ নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে তারা। আর রাতের অন্ধকারে উখিয়া-টেকনাফের মূল ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশ করছে।

বাংলাদেশ সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনী (বিজিবি) কঠোর অবস্থানে থাকলেও একটি দালাল চক্র টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে। গত কয়েক দিনে প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা আন-রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছে বলে স্থানীয়রা জানান।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলেন, টেকনাফের নয়াপাড়া, ঝিমংখালী, কাঞ্জনপাড়া, উনসিপ্রাং ও উখিয়ার বালুখালী সীমান্ত দিয়ে তারা প্রবেশ করেছে। প্রবেশের সময় মিয়ানমার বিজিপির সৃষ্ট দালালদের কাছে ওই দেশের ৩০ হাজার টাকা ও বাংলাদেশের দালালদের কাছে জনপ্রতি এক থেকে দুই হাজার টাকা করে দিতে হয়। অন্যথায় দালালরা তাদের উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের হাতে তুলে দেয়ার ভয় দেখায়।

গত শনিবার (১৯ নভেম্বর) রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ঝিমংখালী পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে রোহিঙ্গাদের ৩২ জনের একটি দল। এই দলটি মিয়ানমারের রাইম্যাঘোনা, রইগ্যাদং, নাইংজং, কেয়ারীপাড়া ও জাম্বুনিয়া এলাকার বাসিন্দা। এসব এলাকার বাসিন্দা মোহছেনা, শমিলা বেগম ও ফোরকান জানান, ‘শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) রাতে একই গ্রাম থেকে প্রায় ২ হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশের উদ্দেশে চলে এসেছে। তবে শনিবার রাতেই ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে একসঙ্গে হাজারো লোক টেকনাফে ঢুকে পড়ে। অন্যরা কে কোথায় গেছে জানি না।’ বর্তমানে তারা ৩২ জনের একটি দল লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান নিয়েছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ-মিয়ানমারের উখিয়া শিলখালী সীমান্ত পেরিয়ে নজু মিয়ার পরিবারের ১৩ জন বাংলাদেশে ঢুকে পড়েন। শনিবার গভীর রাতে ঢুকে পড়ে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে অবস্থান নেন তারা। পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে, ছেলের বউ ও নাতিসহ ১৩ জনের বাড়ি মিয়ানমারের মংডু জেলার খিয়ারিপাড়া এলাকায়। মংডুর আকবর পাড়ার নজু মিয়ার ছেলে জাবের হোছাইন বলেন, শুক্রবার রাতেই শাহপরীর দ্বীপ হয়ে একটি বোটে করে তারা ২৮ জন বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসা এবং তাদের আত্মীয়স্বজনের ঘরেও অবস্থান নিচ্ছে বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। পাশাপাশি গত রবিবার দিনগত রাতে ঝিমংখালী সীমান্ত দিয়ে কয়েকশ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয়রা।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্রমতে, মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাত ১০টা থেকে বুধবার (২৩ নভেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত রোহিঙ্গা নাগরিক বোঝাই ২৫টি নৌকা মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে মূল ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে না পেরে হোয়াইক্যংয়ে নাফ নদীর মাঝে চিংড়ি প্রজেক্ট হাউসের দ্বীপে অবস্থান নেয় ২৯৪ রোহিঙ্গা। পরে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠায় বিজিবি। এর আগের কয়েক দিনে উখিয়া-টেকনাফ থেকে আরো চার শতাধিক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায় বিজিবি। এদিকে বুধবার ভোরে দুই দালালসহ ৮ রোহিঙ্গাকে আটক করে টেকনাফ থানা পুলিশ। উখিয়ায়ও দুই দালালসহ ৬২ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ।

টেকনাফ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুজার আল জাহিদ জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রয়েছে দুর্গম পাহাড়িপথ ও নদীপথ। এখানকার কিছু কিছু পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা রাতের বেলা অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।  তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা বেশি ঢোকার চেষ্টা করছে সেসব পয়েন্টে বিজিবির আরো বেশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া মঙ্গলবার নাফ নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে শূন্যরেখা অতিক্রম করে রোহিঙ্গা ভর্তি ২০টি নৌকা অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের ঠেকানো হয়েছে। এর আগে সীমান্তে তিন প্লাটুন বিজিবি বাড়ানো হয়েছিল।

কক্সবাজারস্থ ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক ইমরান উল্লাহ জানান, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত ৬৩ কিলোমিটার। পুরো সীমান্তেই বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ রোধে জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে মিয়ানমারের নাগরিকদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আরো বেশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জানিয়ে কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম রিজিয়নের অপারেশন কর্মকর্তা ডিকশন চৌধুরী জানান, নাফ নদীতে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকার খবর শুনে নদীতে টহল আরো বেশি জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া গত কয়েক দিনে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ১৩৫ জন রোহিঙ্গাকে ঠেকানো হয়েছে। কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে সে জন্য নদীতে টহল অব্যাহত রাখা হয়েছে।

কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাফিউর রহমান জানান, নাফ নদীর মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গা বোঝাই কয়েকটি নৌকা ভাসছে বলে খবর পেয়েছি। তাদের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মজিদ জানান, রাতের অন্ধকারে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা যাতে আগে থেকে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে যেতে না পারে সে জন্য সেসব এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে ৬২ জন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা কুতুপালং ক্যাম্পে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের আটক করা হয়। টাকার বিনিময়ে আটক রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করিয়ে নিয়ে আসে দালালরা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আটক দালালদের মধ্যে একজন নিবন্ধিত ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে।

এ ছাড়া বুধবার (২৩ নভেম্বর) ভোরে সীমান্তের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকা দিয়ে দালালদের সহযোগিতায় কয়েকজন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে খবর পেয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় একটি ঝুপড়ি ঘরে আত্মগোপন করা অবস্থায় ৮ জন রোহিঙ্গা এবং ২ জন দালালকে আটক করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ রোধে প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

এদিকে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে পৃথক অভিযানে ৪ দালালসহ ৭০ জন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার (২৩ নভেম্বর) সকালে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটক দালালরা হলেন, উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী এলাকার অলি আহমদের ছেলে মোহাম্মদ সরওয়ার (১৮) ও কুতুপালং নিবন্ধিত শরণার্থী ক্যাম্পের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ রফিক (২৯), টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের জাদিমুরা এলাকার আব্দুল মোনাফের ছেলে ওসমান গণি (৩২) ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকার শাহ আলম (২৭)।

এদিকে বিজিবির কর্মকর্তারা জানান, গত সোমবার (২১ নভেম্বর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়েই বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে ২৯৪ জন রোহিঙ্গা। কিন্তু সতর্ক প্রহরার কারণে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পেরে তারা অবস্থান নেন নদীর তীর থেকে আধ কিলোমিটার দূরের একটি চিংড়ি প্রকল্পে। মঙ্গলবার সারা দিন তারা সেই দ্বীপে অবস্থান করেন। এ সময় বিজিবি তাদের চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। মানবিক সহায়তা হিসেবে তাদের সরবরাহ করা হয় খাবার, পানি ও ওষুধ। মঙ্গলবার রাতে তাদের স্বদেশ ফেরত পাঠায় বিজিবি। হোয়াইক্যং বিওপির কোম্পানি কমান্ডার মো. ইব্রাহিম জানান, নাফ নদীর মাঝে হাউসের দ্বীপে অবস্থানকারী ২৯৪ জন রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি)। বুধবার কক্সবাজার সমুদ্র  সৈকতে বিজিবি রেস্ট হাউসে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তারা। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চলা এই সাক্ষাতে বিজিবির পক্ষে নেতৃত্ব দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের উপমহাপরিচালক ও কক্সবাজার বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার ফরিদ হাসান। মিয়ানমারের ৩১ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে ছিলেন মুংডুর বর্ডার গার্ড পুলিশ কমান্ডিং অফিসের পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তু সান লিন।

বৈঠক সম্পর্কে বিজিবির পক্ষ থেকে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যা, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ইয়াবা ও মাদকদ্রব্য চোরাচালান, তথ্য আদান প্রদান, নিয়মিত সীমান্তে অধিনায়ক পর্যায়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ, যৌথ টহল, বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস, বন্ধুত্বমূলক খেলাধুলার আয়োজন করা এবং অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা করা হয়। বৈঠকে মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় যেকোনো সমস্যা সমাধানে উভয় কমান্ডার বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হন বলে জানানো হয়।

প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর নতুন করে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে প্রতিদিনই পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী।


সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!