• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অন্যকে আলোকিত করে নিজেই অন্ধকারে!


রাজশাহী প্রতিনিধি ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৭, ১০:০৫ পিএম
অন্যকে আলোকিত করে নিজেই অন্ধকারে!

সস্ত্রীক শিক্ষক নিতাই চন্দ্র বর্মন

রাজশাহী: রাজশাহীর তানোরের মুণ্ডমালা পৌর এলাকার জোতগৌরিব গ্রাম। কয়েক দশক আগে যে গ্রামে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল বেহাল। আশেপাশের লোকজন গ্রামটিকে ভূতের গ্রাম বলে ডাকতো। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় গ্রামের মানুষ বই হাতে নিতে পারেনি। পুরো গ্রামটি যেনো অন্ধকারে হাবুডুবু খাচ্ছিল।

গ্রামের এমন করুণ অবস্থা দেখে ১৯৮৭ সালে নিজের চেষ্টায় একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় করছিলেন নিতাই চন্দ্র বর্মন। নাম রেখেছিলেন জোতগৌরিব আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিনা বেতনে প্রধান শিক্ষকের চাকরি করেছেন তিনি। মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিরন্তর পরিশ্রম করে গেছেন তিনি।

বর্তমানে তার গড়া ওই বিদ্যালয়টি সরকারি হয়েছে। শিক্ষিত হয়েছে সমাজ। গ্রামে এসেছে বিদুৎ, হয়েছে পাকা রাস্তাও। পরিবারগুলোতে গড়ে উঠেছে আলোকিত মানুষ। কিন্ত সেই প্রধান শিক্ষক নিতাই চন্দ্র বর্মন জাতীয়করণের আগেই অবসরে যাওয়াই খালি হাতে নিতে হয়েছে বিদায়। তার আয়ের উৎস না থাকায় অনেক কষ্টে জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাকে। বিদুৎবিহীন ছোট টিনসেট ঘরে বাস করছেন তিনি। সারাগ্রাম জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়ে এখন তিনি নিজেই অন্ধকারে!

নিতাই চন্দ্র বর্মন জানান, গ্রামের করুণ অবস্থা দেখে ১৯৮৪ সালে তিন কক্ষ বেড়া দিয়ে বিদ্যালয়টি নির্মাণ শুরু করেন তিনি। তারপর গ্রামের শিশুদের শিক্ষিত করতে শুরু হয় সংগ্রাম। মাত্র ৫০০ টাকা বেতন দিয়ে চলতো তার জীবন। ১৯৮৭ সালে স্কুলটি রেজিস্ট্রি হয়। সে সময় বেসরকারিভাবে দুই হাজার টাকা বেতন হয়। তা দিয়ে কোন রকমে সংসার চলতো তার।

২০১০ সালে চাকরির বয়স শেষ হয়। অবসর নেয়া হয়। এরপরে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বেসরকারি নিয়মে অবসর ভাতা যেটা দেয়ার কথা সেটিও কপালে জোটেনি সাত বছর।

তিনি আরো জানান, শিক্ষকতা করে দুই ছেলে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। সবাই নিজ নিজ সংসারে ব্যস্ত। নিজের এক শতক মাটি নেই। স্ত্রীকে নিয়ে স্কুলের পাশে এক শতক মাটিতে টিনসেট ঘরে থাকেন। কোন আয়ের উৎস না থাকায় কোনো বেলা না খেয়ে থাকতে হয়। জীবনের শেষ সময় এসে শরীরে বাসা বেধেছে রোগ। ওষুধ কি খাওয়ার টাকাও তার নেই।

ক্লাস নিচ্ছেন শিক্ষক নিতাই চন্দ্র বর্মন

বিদ্যালয়টিকে তিনি সন্তানের মতো ভালোবাসেন। তাই তো এখনো টানে ছুটে যান বিদ্যালয়ে। প্রায় দিনই একটি-দুইটি করে ক্লাস নেন তিনি।

জোতগৌরিব আদিবাসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, নিতাই স্যার বিদ্যালয়ের পাশেই থাকেন। তার করুণ অবস্থা দেখে মনটা ভারি হয়ে উঠে। একজন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষকের এমন ভয়াবহ জীবনযাপন করা দেখে কষ্ট হয়। তিনি এ বিদ্যালয়টি করে পুরো গ্রামকে আলোকিত করেছেন। এখন তিনি নিজেই অন্ধকারে!

তিনি আরো জানান, তার কোনো জমি নেই। বাড়ির পাশে স্কুল হওয়ায় সে প্রতিদিন বিদ্যালয়ের বারান্দায় দাঁড়ায়। মাঝে মাঝে একটি করে ক্লাসও নেন তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!