• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
মানবাধিকারকর্মীদের অভিমত

অপরাধ নির্মূলের প্রক্রিয়া ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়


বিশেষ প্রতিনিধি মে ২২, ২০১৮, ০১:৩৭ পিএম
অপরাধ নির্মূলের প্রক্রিয়া ‘বন্দুকযুদ্ধ’ নয়

ঢাকা : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, ধর্ষণের মতো ভয়াবহ অপরাধে অভিযুক্তদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ চিত্র আরো বেড়েছে। গত শনিবার দিবাগত রাতে ছয় জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের সংখ্যা ৬। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, বন্দুকযুদ্ধে নিহতদের চারজন মাদক ব্যবসায়ী, একজন ডাকাত ও অপরজন ছিনতাইকারী।

এ ছাড়া গত শনিবার ভোরে যশোরের অভয়নগরের পায়রা-নওয়াপাড়া সড়কে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনজন নিহত হয়। তারাও মাদক চোরাকারবারি। গত ১৫ মে ফেনীর দাগনভূঞায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে স্কুলকক্ষে প্রতিবন্ধী ছাত্রী ধর্ষণ মামলার আসামি নিহত হয়েছে।

২৪ এপ্রিল চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে র‌্যাব এবং ২১ এপ্রিল সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্ধুকযুদ্ধে’ দুই শিশু ধর্ষণ মামলার আসামি নিহত হয়।

৯ এপ্রিল সাভারে চলন্ত বাসে তরুণী ধর্ষণ মামলার এক আসামি ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয় আশুলিয়ায়। ২১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে আরেক ধর্ষণ মামলার আসামি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ক্রসফায়ারে মারা যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, অভিযোগ পাওয়া গেলে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়। আইন অনুয়ায়ী সোপর্দও করা হয় আদালতে। তাদের ভাষ্য, সেখানে উপস্থাপনের পর আইনি প্রক্রিয়ায় জামিন পাচ্ছে অপরাধীরা। বিচারপ্রার্থীরাও এতে ভোগান্তির শিকার। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিন পাওয়া এবং বেরিয়ে জড়িয়ে পড়ছে একই ধরনের অপরাধে। এতে চাপ বাড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ হতাহতের এ সংখ্যায় উদ্বেগ জানিয়েছেন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা।

তাদের অভিমত, অপরাধ দমনে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ স্থায়ী সমাধান নয়, বরং বিচারহীনতার বহিঃপ্রকাশ। এতে অপরাধের প্রকৃত তথ্য বের হয়ে আসছে না বলেও মনে করছেন তারা। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নুর খান লিটন বলেন, ‘এ প্রক্রিয়ায় অপরাধীদের ‘নির্মূল’ করার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা দেখছি অন্য বিষয়। অপরাধের সঠিক তদন্ত বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রকৃত তথ্য জানা যাচ্ছে না। ধোঁয়াশার মধ্যে থাকছে জনগণ।’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেন, ‘বিষয়টা নিয়ে আমরা আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এখনো তুলছি। একটি অপরাধ দমন করতে গিয়ে আরেকটি অপরাধ হচ্ছে। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কোনো অপরাধীর সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করার সুযোগ নেই। আশা করছি এ ধরনের চর্চা শিগগিরই বন্ধ হবে। অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে।’

মানবাধিকার সংস্থা ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ত্রিমাসিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৪৮ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। একই সময়ে দেশে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৮৭ নারী।

দুই সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ‘ক্রসফায়ার, বন্ধুকযুদ্ধ ও গুলিবিনিময়ে’ নিহত হয়েছেন ১২৬ ব্যক্তি। বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে ১৬২ ব্যক্তির।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!