• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপরাধীদের হাতে হাতে ক্ষুদ্রাস্ত্র!


বিশেষ প্রতিনিধি জানুয়ারি ৩, ২০১৭, ০৯:৪২ পিএম
অপরাধীদের হাতে হাতে ক্ষুদ্রাস্ত্র!

ঢাকা: হাত বাড়ালেই মিলছে আগ্নেয়াস্ত্র। জঙ্গি তৎপরতা, সন্ত্রাসী হামলা, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি ও জমি দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায় ব্যবহৃত হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও আধিপত্য বিস্তারেও ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহার করছে রাজনৈতিক নেতা ও ক্যাডাররা। পিস্তল-রিভলবার জাতীয় ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের চোরাচালান বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। সীমান্ত পথে আসা এসব অবৈধ অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে রাজধানীসহ দেশের আনাচে-কানাচে।

প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গেল বছর শুধু রাজধানীতেই উদ্ধার হয়েছে আড়াই শতাধিক ক্ষুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র। বিভিন্ন ঘটনায় ব্যবহৃত অবৈধ অস্ত্রের বেশিরভাগ আসছে সীমান্ত দিয়ে। আর তা সহজেই চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে। ভাড়ায়ও খাটানো হয় এসব অবৈধ অস্ত্র।

এমনকি বৈধ অস্ত্রধারীরাও তাদের অস্ত্র ভাড়া দিচ্ছেন সন্ত্রাসীদের কাছে। জঙ্গি থেকে শুরু করে ছোট-বড় সব সন্ত্রাসীর হাতে এখন অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র। পাড়া-মহল্লায় উঠতি মাস্তানরাই শুধু নয়, ছিঁচকে ছিনতাইকারীরাও ব্যবহার করছে আগ্নেয়াস্ত্র। ৩০ হাজার থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় মিলছে এসব অবৈধ অস্ত্র।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে কেনা ক্ষুদ্রাস্ত্র রাজধানীতে দেদার বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা মেটাতে দেশের অন্তত ২৫টি সীমান্ত রুট দিয়ে ঢুকছে বিপুলসংখ্যক অবৈধ অস্ত্রের চালান। ভয়ঙ্কর একে সিরিজের অস্ত্র আসছে সমুদ্রপথে। ভারত, মিয়ানমার হয়ে দেশে আসা অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ কারণে প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে গুলির ঘটনা।

এসব অস্ত্র কারা, কীভাবে, কোথা থেকে আনা হচ্ছে, আর কারা-ইবা এর ক্রেতা? এসব বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। অভিযোগ রয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রির বৈধ কয়েকটি দোকানে বিশেষ কৌশলে নম্বর তুলে ফেলে সন্ত্রাসী বা এক শ্রেণির রাজনীতিকের কাছে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ছোট অস্ত্রে চোরাচালান বাড়ার সঙ্গে জঙ্গিবাদ উত্থানের যোগসূত্র থাকতে পারে। আর এই চোরাচালান বন্ধে বিশেষ অভিযান প্রয়োজন বলেও মনে করেন তারা।

গত ৩১ ডিসেম্বর নিজবাসায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এমপি লিটনকে খুব কাছ থেকে ৫টি গুলি করা হয়। এর মধ্যে ৩টি গুলি বুকে ও দুটি গুলি গিয়ে লাগে তার ডান হাতে। বুলেটগুলো ছিল ছোট আগ্নেয়াস্ত্রের। গত বছরের ২ অক্টোবর মদ্যপ অবস্থায় সৌরভ নামে একটি শিশুকে গুলির ঘটনায় বিতর্কিত হন এমপি লিটন। ওই ঘটনায় তাকে জেলেও যেতে হয়। তবে তার বিরুদ্ধে যত্রতত্র অস্ত্র চালানোর ঘটনা নতুন কিছু ছিল না।

তিনি কথায় কথায় আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতেন। কখনও শটগান, কখনও পিস্তল আবার কখনও রিভলবার দিয়ে গুলি ছোড়েন তিনি। লিটনের সঙ্গে থাকত একাধিক দেহরক্ষী। তার গাড়িবহরে থাকত বেশ কয়েকজন অস্ত্রধারী ‘ক্যাডার গানম্যান’। তারাও কারণে-অকারণে বিশেষ স্টাইলে গুলি ফোটাতেন। এসব আগ্নেয়াস্ত্রের বেশিরভাগই লাইসেন্সবিহীন। ২০১৩ সালের মার্চ মাসে এমপি লিটনের ‘হরহামেশা’ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার সংক্রান্ত একটি গোপনীয় প্রতিবেদন পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হয়।

এরপর শিশু সৌরভকে গুলির ঘটনার পরও আরো একটি প্রতিবেদন যায় পুলিশ সদর দপ্তরে। কিন্তু এর ভিত্তিতে ঢাকা থেকে জেলা পুলিশের কাছে অদ্যাবধি তেমন কোনো নির্দেশনা আসেনি। তাই জেলা পুলিশের তরফ থেকে এমপিকে শুধু অস্ত্র ব্যবহারে ‘সংযত’ হতে বলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এমপি লিটনের অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি মজুদ রাখা হয় তার মালিকাধীন একটি হিমাগারে। যেটি এমপি লিটনের ‘অস্ত্রভান্ডার’ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে ব্যাপক পরিচিত। যেটি সরবানন্দ ইউনিয়নের উত্তর শাহবাজ এলাকায় অবস্থিত।

এদিকে রোববার (১ জানুয়ারি) গভীর রাতে খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমার সরকারি বাসভবনে তল্লাশি চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল ও ৫ রাউন্ড গুলিসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এভাবে সরকারের জনপ্রতিনিধিদের হাতেই অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি বেশি লক্ষ্য করা যায়। কোনো কোনো জনপ্রতিনিধি ভারত থেকে অবৈধ অস্ত্রের কারবারিও করেন।

এদিকে গত ২৭ অক্টোবর ঢাকার গুলিস্তানে ব্যবসায়ী-হকারদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি ছোড়ে ছাত্রলীগের দুই নেতা। গত ১ নভেম্বর চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর আগে ৮ জুলাই রাতে সূত্রাপুরের ধোলাইখালে যুবলীগ নেতা রাজীব হাসানকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধ অস্ত্র, বিস্ফোরক ও গুলি উদ্ধারের ঘটনাও বাড়ছে। এর মধ্যে অস্ত্রের বড় চালানটি উদ্ধার হয় গত ১৮ জুন উত্তরার একটি খাল থেকে। অস্ত্রের মধ্যে ছিল ৯৭টি পিস্তল, ৪৯৪টি ম্যাগাজিন, ১০টি বেয়নেট ও সহস্রাধিক রাউন্ড গুলি। তবে গত ৬ মাসেও ওই অস্ত্রের চালানের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ব্যাপারে কোনো তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

গত ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে চারটি অবৈধ অস্ত্রসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে রাজশাহী হয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে এসব ছোট অস্ত্র। সরবরাহের এ কাজে তারা মোটা অঙ্কের টাকাও পাচ্ছে।

সম্প্রতি রাজধানীর ফুটপাত দখল উচ্ছেদ অভিযানে প্রকাশ্যে অস্ত্র প্রদর্শনের দায়ে বহিষ্কৃত হন দুই ছাত্রলীগ নেতা। এর কদিন পর রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে আওয়ামী লীগের থানা সাংগঠনিক সম্পাদকের ওপর ছাত্রলীগের হামলায় ছোট অস্ত্র ব্যবহার হয়। সীমান্ত পথে অবৈধভাবে আসা এসব ছোট অস্ত্র রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সন্ত্রাসীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক নেতার প্রশ্রয়ে দেশের অন্তত ২৫টি সীমান্ত রুটে ঢুকছে অবৈধ ছোট অস্ত্রের চালান। ২৫-৩০ হাজার টাকা মূল্যের এসব অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ হাজার টাকায়। এ ধরনের অস্ত্রের ব্যবসায় জড়িত রাজধানীর অন্তত ১৫টি গ্রুপ। চোরাইপথে আগ্নেয়াস্ত্রের অধিকাংশ চালানই আসছে ভারত-পাকিস্তান থেকে। তা ছাড়া চীনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসা আগ্নেয়াস্ত্র ভারতকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করছে। গুলশান হামলায় ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রও ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছিল।

গত ১৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর সবুজবাগ বৌদ্ধমন্দির এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারটি সেভেন পয়েন্ট ৬৫ বোরের পিস্তল, তিনটি ওয়ান শুটারগান, আটটি ম্যাগাজিন ও ১৫ রাউন্ড তাজা বুলেটসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

গত ৩১ অক্টোবর গাবতলী থেকে ১০টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র, ৩৫ রাউন্ড বুলেটসহ খাইরুল মন্ডল নামে এক ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ।  পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তার ভারতীয় নাগরিকের কাছে পাওয়া অস্ত্র বিহারের তৈরি। বিহার থেকে এসব অস্ত্র পলিথিনে মুড়িয়ে বালুর ট্রাকে করে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে আসে উত্তর চব্বিশ পরগনায়।

সেখান থেকে স্কুলব্যাগে করে বিশেষ কায়দায় যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে এসব ছোট অস্ত্র ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। কারণ এসব ছোট অস্ত্রের ক্রেতা বেশি ঢাকায়। পেশাদার ছিনতাইকারী, খুনি, কনট্রাক্ট কিলিংয়ে জড়িত, ভাড়ায় চালানো ছাড়াও অনেক অসাধু রাজনৈতিক দলের নেতাও এসব অস্ত্র-গোলাবারুদ সংগ্রহ করে থাকেন।

পুলিশ জানায়, ভারতের মালদা এবং পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তের কারখানায় তৈরি হচ্ছে ছোট অস্ত্র। যেসব অস্ত্র ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় কিনে তৃতীয় পক্ষ ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকায়। সীমান্তে আরো কম দামে অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। কক্সবাজারের মহেশখালীতে সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করে জলদস্যুসহ সন্ত্রাসীদের কাছে ১৫-২০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। এ চক্র জলদস্যু ছাড়াও স্থানীয় সন্ত্রাসীদের কাছেও অস্ত্র বিক্রি করছে।

পেশাদার সন্ত্রাসী, ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজরা এ অস্ত্র কিনছে। অনেকেই আধিপত্য বিস্তারে নিজের কাজে এসব ছোট অস্ত্র রাখছে। অবৈধ এসব ছোট অস্ত্রের কিছু উদ্ধার হলেও বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে নানা উপায়ে অপরাধীদের হাতে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে দীর্ঘদিন ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ অভিযান পরিচালিত না হওয়ায় অস্ত্রের বেচাকেনা ও ব্যবহার বাড়ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

তাদের মতে, অবৈধ ছোট অস্ত্র উদ্ধারে সমন্বিত অভিযান প্রয়োজন। এ বিষয়ে ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি শেখ নাজমুল আলম জানান, অবৈধ অস্ত্রধারী ও ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। অস্ত্র কেনা, বেচার উৎসসহ সংঘবদ্ধ চক্রকে গ্রেপ্তারে ডিবির অভিযান অব্যাহত আছে।

গত বছর শুধু রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেড় শতাধিক ছোট অস্ত্র উদ্ধার করেছে। রাজধানীতে গত বছর চার শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ক্ষুদ্রাস্ত্রই আড়াই শতাধিক। এ ছাড়া বিজিবি ১০ মাসে ৫৬টি পিস্তল, ৩৭টি বিভিন্ন ধরনের বন্দুক, ৪ হাজার ৭ রাউন্ড গোলাবারুদ, ৫৮টি ম্যাগাজিন, সাতটি ইলেকট্রনিক ডেটনেটর এবং ৫৫২ কেজি ৭০০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করেছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য মতে, ঢাকাসহ সারা দেশে দুই শতাধিক অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসায়ী রয়েছেন। অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায় সিন্ডিকেট রয়েছে শতাধিক। তাদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সদস্যও রয়েছেন। শুধু রাজধানীতেই অন্তত ১৫টি গ্রুপ অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত। এর মধ্যে গেন্ডরিয়ার জসিম, লোকমান ও জাবেদ, ডেমরার রুহুল-স্বপন, কামরাঙ্গীরচরের বিপ্লব, ধানমন্ডির নীরব গ্রুপ ডিলারদের কাছে অস্ত্রের চাহিদা দেয়। ১৫টি গ্রুপের প্রতিটিতে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়জন সক্রিয় সদস্য রয়েছেন।

চাহিদা অনুযায়ী ডিলাররা অস্ত্র সরবরাহ করেন। এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ছোট অস্ত্রের সরবরাহ এবং ব্যবহারকারীদের ধরতে আমাদের নিয়মিত অভিযান চলে। এ ছাড়া বিশেষ অভিযানের সক্রিয় চিন্তাও রয়েছে।

ছোট অস্ত্রের চোরাচালানে সম্পৃক্ত জঙ্গিরা কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে লাগাতার জঙ্গি হামলার ঘটনায় অস্ত্র সরবরাহকারী ও জোগানদাতারা ক্রমান্বয়ে চিহ্নিত হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্যে, জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে বিপুল অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারও করা হয়েছে। অভিযানের পর জানা গেল ছোট অস্ত্রের চোরাচালানে জঙ্গিরাও জড়িত। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আশকোনায় একটি জঙ্গি আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও বেশ কয়েকটি পিস্তল জব্দ করা হয়।

অপরাধ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ ছোট আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার ঘটনার নেপথ্যে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতীয় কয়েকটি চোরাকারবারি সিন্ডিকেট জড়িত। তারাই জঙ্গিদের কাছে অস্ত্র সরবরাহ করছে। তবে এসব ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, অস্ত্র চোরাচালনার সঙ্গে জঙ্গিরাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত।

গত ২ নভেম্বর রাজধানীর গুলশানে হোলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার অস্ত্র সরবরাহকারী চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট (সিটিটিসি)। তাদের মধ্যে একজন ভারত সীমান্ত থেকে অস্ত্র নিয়ে নব্য জেএমবির ‘প্রধান’ তামিম চৌধুরীকে সরবরাহ করেছিলেন। তাদের কাছ থেকে হাতে তৈরি গ্রেনেডের মূল উপকরণ ৭৮৭টি ডেটেনেটর, একটি নাইন এমএম বিদেশি পিস্তলও উদ্ধার করা হয়।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার হয় ৬ জঙ্গি। তারা জানায়, ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলায় ব্যবহৃত রাইফেল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় তৈরি হয়। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছ থেকেই অস্ত্র সংগ্রহ করেছিল জঙ্গিরা। এরপর সবশেষে ধরা পড়ল চট্টগ্রামে হুজি আস্তানার অস্ত্র।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!