• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘অপহরণকারীকে আমার প্রেমে ফেলতে হয়েছিল’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুলাই ১৭, ২০১৮, ০২:১০ পিএম
‘অপহরণকারীকে আমার প্রেমে ফেলতে হয়েছিল’

ঢাকা : ‘লুকায হের্বা নামের একজনের আমন্ত্রণে ফটো শুট করতে গত বছরের জুলাই মাসে ইতালির মিলান শহরে যাই আমি। সেখানে যাওয়া পর আমার শরীরে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়, খুলে ফেলা হয় পোশাক। হাত-পা বেঁধে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় এক ফার্ম হাউসে। এরপর হের্বা নামের ওই অপহরণকারী বলেন, তিন লাখ ইউরো না দেয়া হলে যৌন দাসী হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হবে আমাকে।’

কথাগুলো বলছিলাম যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ লন্ডনের বিশ বছর বয়সী মডেল ক্লোয়ি এইলিং সম্পর্কে। যিনি গত বছর অপহরণের ছয়দিন পর মুক্তি পেয়ে ফিরে আসেন যুক্তরাজ্যে।

সম্প্রতি বিবিসি’র সাংবাদিক ভিক্টোরিয়া ডার্বিশায়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় ক্লোয়ি এইলিং জানিয়েছেন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা কথা। বলেছেন, কিভাবে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। আর কিভাবে সন্দেহ-প্রবণ মানুষজনের সঙ্গে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন।

এইলিং বলেন, ‘ফার্ম হাউজে যাওয়ার পর যখন শুনলাম যৌন দাসী হিসেবে আমাকে বিক্রি করা হব। তখন এটি ছিল অত্যন্ত ভীতিকর। আমি ভেবেছিলাম, সে যা বলছে, তার সবই সত্যি। তাকে এক সেকেন্ডের জন্যও আমার সন্দেহ হয়নি, কারণ সে আমার প্রতিটি প্রশ্নের খুঁটিনাটি উত্তর দিচ্ছিল।’

কিন্তু সেই অপহরণকারী এটাও জানতে চায় যে, আমাকে চুমু খেতে পারবে কিনা এবং তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠা সম্ভব কিনা।

এইলিং বলছেন, ‘আমি ভাবলাম, এটাই আমার এখান থেকে বের হওয়ার সুযোগ। যখন আমি তাকে বললাম যে, এটা ভবিষ্যতে হতে পারে, তখন সে খুবই উৎফুল্ল হয়ে যায় এবং সত্যিই ভাবতে শুরু করে যে, এরকম কিছু হতে যাচ্ছে। সে সবসময় এ বিষয়েই কথা বলতে শুরু করে। তার এই আচরণ দেখে আমি বুঝতে পারি, আমাকে বিষয়টি চালিয়ে যেতে হবে।’

ক্লোয়ি এইলিং বলছিলেন, ‘যতই আমরা কথাবার্তা বলতে শুরু করলাম, ততই আমাদের মধ্যে একটি সম্পর্ক গড়ে উঠতে শুরু করলো, যখন আমি বুঝতে শুরু করলাম সে আমাকে পছন্দ করছে, তখনি আমি জানতাম, আমাকে এর সুযোগ নিতে হবে।’

এভাবে একসময় অপহরণকারী যখন বুঝতে পারে যে, কোন মুক্তিপণ পাওয়া যাবে না, তখন নিজেই গাড়ি চালিয়ে মিলানে ব্রিটিশ কনস্যুলেটে পৌঁছে দেয় ক্লোয়িং এইলিং-কে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, যখন তারা কনস্যুলেট খোলার অপেক্ষায় একটি ক্যাফেতে বসে ছিলেন, তখন তাদের হাসতে আর মজা করতে দেখা গেছে।

কিন্তু এইলিং বলছেন, ‘কিন্তু কেন আপনি এমন একজনের সঙ্গে মুখ গোমড়া করে থাকবেন, যার আপনার জন্য আবেগ রয়েছে এবং সেজন্য আপনাকে মুক্তিও দিয়েছে?’ সে যেন আমার প্রেমে পড়ে, এজন্য আমার সবকিছুই করতে হয়েছে, এমনকি তার সাথে শুয়ে পড়তেও হয়েছে।’

মুক্তির পর যুক্তরাজ্যে ফিরে যখন এইলিং টেলিভিশন সাংবাদিকদের কাছে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন, তখন অনেকেই সমালোচনা করেন যে, সে সময় তাকে হাশিখুশী দেখাচ্ছিল। পোশাক পরিচ্ছদও ছিল তার নিজের পছন্দ মতো।

তিনি বলছিলেন, ‘বাড়িতে ফিরে আসার আনন্দে তিনি ছিলেন খুবই আনন্দিত, কারণ এটা সত্যি হবে বলে তিনি আশা করেননি। বিমান থেকে নামার সময় তার পরনে ছিল একটি শর্টস আর একটি টপ।

‘মানুষজন আশা করেছিল যে আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করবো এবং সারা বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখবো, কোন ক্যামেরার দিকে তাকাবো না। আমি সেটা হয়তো করতে পারতাম, কিন্তু ভেবে দেখলাম সেটা কি আমাকে কোন সাহায্য করবে? কিন্তু এটা নিয়ে কথা বলে, আশেপাশের মানুষের সঙ্গে মিশে হয়তো আমি এটা কাটিয়ে উঠতে পারবো।’

পুরো ঘটনাটি নিয়ে একটি বই লিখেছেন এইলিং। তিনি বলেন, ‘এটা খুবই অবাক ব্যাপার যে, বিচারে হের্বার ১৬ বছর নয় মাস সাজাপ্রাপ্তির পরেও মানুষজন তাকে নিয়ে সন্দেহ করে। তিনি এজন্য গণমাধ্যমকে দায়ী করেন, যারা মানুষের 'ব্রেইনওয়াশ' করেছে। নারীদের কাছ থেকেই তিনি বেশিরভাগ অবমাননাকর মন্তব্য পেয়েছেন বলে জানান।

‘এটা খুবই কষ্টদায়ক, কারণ আমি আমার নিজের দেশে এতো খারাপ অভিজ্ঞতা আর অবিশ্বাসের ভেতর দিয়ে যাবো, সেটা কখনো আশা করিনি।’

আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে গিয়ে হের্বা বলেছিলেন, এর আগে এইলিংয়ের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে এবং তিনি তার প্রেমে পড়ে যান। একটি স্ক্যান্ডাল তৈরি করতে চেয়েছিলেন যাতে মিজ এইলিং সবার কাছে পরিচিতি পান বলেও জানিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এইলিং বলছেন, ‘আমি এখনো তার উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারছি না। শুধুমাত্র টাকার জন্য সে আমাকে অপহরণ করেনি। সে দুই বছর আগে ফেসবুকে আমার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল। সে যেন অনেকদিন আগে থেকে আমার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছিল।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!