• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অপু বিশ্বাস এবং একজন পলাশদা


নীল বুলবুল এপ্রিল ১০, ২০১৭, ০৮:১০ পিএম
অপু বিশ্বাস এবং একজন পলাশদা

টিভি লাইভে অপু বিশ্বাসকে কাঁদতে দেখে কেন জানি পলাশদার কথা মনে পড়ছে। এমন দৃশ্য দেখে নিশ্চয়ই পলাশদার বুক ভেঙে যাচ্ছে। দূর থেকেই বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলেন বগুড়ার ‘আমরা কজন শিল্লীগোষ্ঠী’র সেই নাচের মেয়েটিকে। বিআরটিসি মার্কেটে তার দোকানের সামনে দিয়ে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করতেন অপু। সুন্দর মুখের দিকে কতদিন যে অপলক তাকিয়ে থাকতেন পলাশদা। তা কি কেউ জানতো?

ঘটনাটা ২০০৪ সালের। বগুড়ার প্রখ্যাত সাংবাদিক দূর্গাদাস মুখার্জীর দৈনিক উত্তরাঞ্চলে তখন রিপোর্টারি করি। তরুণ নাট্য নির্দেশক বন্ধু সেলিম রেজা সেন্টু সেই পত্রিকার শিল্প-সাহিত্যের পাতা ‘ছোঁয়া’ বের করার দায়িত্ব নিল। আমি তার পাশে দাঁড়ালাম।

সম্পাদক মাহবুব লিমন (প্রয়াত) আমাকে ডেকে বললেন, অপু বিশ্বাসকে চেন? ওর একটা ইন্টারভিউ ছাপাতে পারো ছোঁয়াতে। আমি তো বিব্রত। অপু বিশ্বাস? মানে পলাশদার সেই ‘মানসী’? তার আবার ইন্টারভিউ কেন?

বন্ধু সেন্টু বললো, অপু এখন ঢাকায়। মডেলিং করার চেষ্টা করছে। ছবির অফারও নাকি পেয়েছে। আমি আশ্বস্ত হলাম। অবশ্য, বগুড়া শহরের বাদুরতলার টিনপট্টি গিয়ে অপুর খোঁজ করে ফিরে এলাম। তখন সে ঢাকায়। কী আর করা? অবশেষে ছোঁয়া বের হলো। অপু বিশ্বাসের দুটো ছবি দিয়ে সেন্টু লিখলো আগামীর তারকা। ছবি দেখে অভিভুত অপু। ধন্যবাদও দিল।

এরপর পলাশদার আবদার বাড়তেই থাকলো। সে অপুর সঙ্গে দেখা করতে, কথা বলতে চায়। বিয়ের প্রস্তাবও দিতে চায় পরিবারে। পরিবার রাজি থাকলে বউ করে বাড়ি নিয়েও যেতে চায়। কিন্তু পলাশদার সবকিছুই এক সময় আটকে থাকলো স্বপ্ন আর কল্পনার মধ্যেই। পলাশদার দোকানের সামনে দিয়ে অপুর রিকশা আর চলে না। জানা গেল পাকাপাকি ভাবেই ঢাকায় চলে গেছে অপু বিশ্বাস।

কয়েক মাস পর বগুড়ার ‘দৈনিক সংবাদ’ অফিসে হঠাৎ ঝড়ের মতো হাজির অপু বিশ্বাস। উত্তরাঞ্চলের সাহসী সাংবাদিক হাসিবুর রহমান বিলু ভাইয়ের তখন শিষ্যত্ব বরণ করেছি। অপুর বাড়ির পাশেই ছিল আমাদের অফিসটা। সে পরে এসেছে লং স্কার্ট। দেখাচ্ছিল আদিবাসী কিশোরীর মতো। তবে বেশ স্মার্ট। চিনতেই পারছিলাম না। মিনিট খানেক কথা বলে চলে গেল। জানলাম, ‘কোটি টাকার কাবিন’ নামে ফিল্মে নায়িকার চরিত্র পেয়েছে। ভাবলাম, পাবেই তো সে যে আগামীর তারকা।

লেখাটা এখানে শেষ করলেই ভালো হতো। কিন্তু না, বাকিটা বলতেই হচ্ছে। ২০১৫ সালের কথা। তখন ঢাকায় চলে এসেছি। অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলামেইলের কান্ট্রি চিফ হিসেবে কাজ করছি। তখন বিনোদন বিভাগের টিম নিয়ে কাজ করছেন গোলাম রব্বানি ভাই। নিউজ এডিটর হিসেবে আছেন বগুড়ার আহমেদ জুয়েল।

মাঝে মাঝে এ নায়িকা সে নায়িকাকে হঠাৎ অফিসে হাজির করেন রব্বানি ভাই। উঠতি ও জনপ্রিয় নায়করাও আসেন তার ডাকে। একদিন রব্বানি ভাই বললেন আগামীকাল অপু বিশ্বাস আসবে বাংলামেইল অফিসে। ভাবলাম, সেই আগামীর তারকা আজ দেশসেরা তারকা। তার ওপর ‘বগড়ার’ মেয়ে। আসুক না।

অপু

পরদিন ফুরফুরে মেজাজে সবাই হাজির অফিসে। দুপুর বয়ে যায়, বিকেল হয়- অপুর আসার নাম নাই। দুপুর থেকে বসে আছেন সম্পাদক শাহাদাত ভাই। সকালের শিফটের মেয়েরাও অপুর দেখা পাওয়ার জন্য বসে আছে (মানে সেলফিবাজি করতে চায় আরকি)। কিন্তু তার কোনো পাত্তা নাই। ব্যস্ত হয়ে পড়েন রব্বানি ভাই। অপুর ফোনও বন্ধ। বার বার এদিক সেদিক ফোন করতে থাকেন।

শেষ অবধি জানা গেল, শাকিবের ওদিন শ্যুটিং নেই। অবসর কাটাচ্ছেন। তাই সেই অবসরের সঙ্গী হয়েছেন অপু। ঢাকার শ্যামলীর কোনো এক অখ্যাত ‘বাসা নাকি হোটেলে’ তারা লাঞ্চ করছেন। সব নেটওয়ার্ক বন্ধ। অপুর পৃথিবী তো শাকিব খান। তাই আগে শাকিব তারপরে তো মিডিয়া? খবর জেনে সবাই বসে পড়লেন। দারুণ লজ্জা পেলেন রব্বানি ভাই। নিউজ এডিটরকে বললাম, ‘বাড়ির গরু খুলির ঘাস খায় না’।

সেদিনও কেমন জানি পলাশদার কথাই মনে পড়ছিল। পলাশদা যদি জানতো তার ‘মানসী’ অপু বিশ্বাস শুধু শাকিবের কথায় মিডিয়ার এতোগুলো মানুষকে বিরক্ত করে ছেড়েছেন, তাহলে খুব কষ্ট পেতেন। আজও যেমন কষ্ট পাচ্ছেন।

সোনালীনিউজ/এন

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!