• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অবশেষে গুঞ্জনই সত্যি হলো!


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৩, ২০১৬, ০৬:১৮ পিএম
অবশেষে গুঞ্জনই সত্যি হলো!

অবশেষে সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিল ঘিরে বেশ কিছুদিন ধরেই সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম উঠে আসে। অনেকে গুঞ্জন হিসেবেই বিষয়টির উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই গুঞ্জনই যে সত্য হলো!

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। তাই দলটির সম্মেলন শেষে কারা নতুন নেতৃত্বে আসবেন, কারা বাদ পড়বেন—এ নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছিল। আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‍পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতই ছিল। তবে সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। কে হচ্ছেন এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সৈয়দ আশরাফ হ্যাট্রিক করতে যাচ্ছেন—এমন সম্ভাবনার কথা কিছু দিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু গত দু’দিন ধরে বাতাস কিছুটা উল্টো বইতে শুরু করে। অনেকটা হঠাৎ করেই সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে আলোচনায় চলে আসেন ওবায়দুল কাদের। 

বিশেষ করে বুধবার (১৯ অক্টোবর) আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠানোর পর এই আলোচনা ডালপালা মেলতে শুরু করে। এরই সূত্র ধরে ওবায়দুল কাদের শিবিরেও উচ্ছ্বাস শুরু হয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে সৈয়দ আশরাফকে ছাড়িয়ে যান ওবায়দুল কাদের। ফলাফল এখন সবার সামনেই।

আওয়ামী লীগের নেতারা জানিয়েছেন, দলীয় সভাপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পুনর্নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টি আগে থেকে অনেকটাই নির্ধারিত। কিন্তু দলের দলের প্রতিটি সম্মেলনেই সাধারণ সম্পাদকের পদ নিয়ে শুরু হয় জল্পনা-কল্পনা। আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ এ পদের জন্য দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সবার মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। অন্যান্য বারের মতো এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না বলে মনে করেন দলের নেতারা।

এদিকে গত ৩টি সম্মেলন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ২০০২ সাল থেকে যে কয়েকজনের নাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তারা শুনে আসছেন তাদের মধ্যে ওবায়দুল কাদের অন্যতম। ২০০২ সালে তিনি এ পদের প্রার্থীও হয়েছিলেন। অবশ্য ওয়ান ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে দলের ভূমিকার প্রশ্নে ২০০৯ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফ সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন, সেটা আগেভাগেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

সর্বশেষ ২০১২ সালের সম্মেলনে সৈয়দ আশরাফের পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের নাম বেশি আলোচনায় ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সৈয়দ আশরাফই সেই সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো এ পদের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে সাধারণ সম্পাদকের দৌড়ে বরাবরের মতো আলোচনায় থাকা ওবায়দুল কাদের বিগত কিছুদিন ধরে বেশ খানিকটা পিছিয়েও ছিলেন। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদটি পাবেন না—এমনটা তিনি নিজেও মনে করতেন। গত ১৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে অনেকটা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার আভাসও দেন। 

ওই অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকসহ কোনও দলের অন্য কোনও পদে প্রার্থী হবেন না জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমরা সবাই নেত্রীর ওপর আস্থাশীল। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন যখন হয় আমি মাঝে-মাঝে বিব্রত হই, লজ্জাও পাই। মনে অনেক প্রশ্নও জাগে। সম্মেলনকে সামনে রেখে আলাপ-আলোচনা আসে, পত্রিকায় ছবি বের হয়। আমি আপনাদের পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আমি আওয়ামী লীগের কোনও পদে প্রার্থী নই।’

কিন্তু বুধবার (১৯ অক্টোবর) দুপুর থেকেই এ পরিস্থিতি নতুন মোড় নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওবায়দুল কাদেরকে গণভবনে ডেকে পাঠান। সেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে বলেন বলে ওবায়দুল কাদের তার ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার কাছে দাবি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গণভবনে সাক্ষাৎ ও তার দাবির পর আওয়ামী লীগের মধ্যকার হিসাব-নিকাশও অনেকটা পাল্টে গেছে। ওবায়দুল কাদের এবার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন—এমন খবর দলের নেতাকর্মীদের মুখে-মুখে ছড়িয়ে পড়ে। এর রেশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) ওবায়দুল কাদেরকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে দেখা গেছে। তার অনুসারীদের মধ্যেও বেশ উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওবায়দুল কাদেরের কার্যক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বেশ খুশি বলে জানা গেছে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু নির্মাণ কার্যক্রম তদারকি ও বিভিন্ন স্থানে তার ‍আকস্মিক ভিজিটের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়েও মন্ত্রণালয় পরিচালনায় ওবায়দুল কাদেরের ভূমিকার প্রশংসা করেছেন তিনি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পর ওবায়দুল কাদের আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমণ্ডির কার্যালয়ে সম্মেলনের প্রস্তুতির খবর নিতে যান তিনি। সেখানে তিনি উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক ও তার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন নেতার কাছে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর সর্বশেষ অবস্থানের কথা জানান। তিনি জানান, নেত্রী তাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। কাউন্সিলের সম্মতি সাপেক্ষে তাকে সাধারণ সম্পাদক করা হবে বলে আশ্বাস পেয়েছেন এমন দাবিও করেন তিনি।

এদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ওয়াদুল কাদের নাম আলোচনায় আসার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাতে গণভবনে যান। সেখানে তিনি দলীয় প্রধানের কাছে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতিও চান। এর পর থেকে হিসেবে পাল্টে যায়।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!