• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক বসতভিটা দখলমুক্ত


পাবনা প্রতিনিধি এপ্রিল ২০, ২০১৭, ০১:৪১ পিএম
অবশেষে প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক বসতভিটা দখলমুক্ত

পাবনা: উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক বাংলা সাহিত্যের আধুনিক গদ্যধারার রূপকার বীরবল খ্যাত প্রমথ চৌধুরীর পাবনার চাটমোহরের পৈত্রিক বসতভিটা অবশেষে অবৈধ দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন। বুধবার (১৯ এপ্রিল) চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়। ক্ষমতাসীনদের ছত্রছায়ায় দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ জায়গাটি অবৈধ দখলে রেখেছিল। আর প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা।

বীরবলের হালখাতা, চার ইয়ারী কথা, আহুতি, নীলোলোহিতসহ অসংখ্য গ্রন্থের কালজয়ী লেখক প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক নিবাস পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। ’৪৭ সালের পর জমিগুলো ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে দখল করা হয়েছিল। অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে সেই জমি উদ্ধারে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিল চাটমোহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার সকালে পাবনা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিপুল কুমার ও চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে চলে উচ্ছেদ অভিযান। এ সময় ৩ একর (৯ বিঘা) জায়গায় নির্মিত কাঁচা-পাকা মিলিয়ে ১৮টি বসতঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অভিযান চলাকালে বিপুলসংখ্যক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।

বাড়ি উচ্ছেদের বিষয়ে চাটমোহর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিজানুর রহমান জানান, অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য পরপর ৫ বার নোটিশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু দখলদাররা স্থাপনা সরিয়ে নেননি। এলাকাবাসীর আন্দোলন আর আবেদনের প্রেক্ষিতে যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া মেনে প্রমথ চৌধুরীর বাস্তুভিটা থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, প্রমথ চৌধুরীর স্মৃতি ধরে রাখতে মুক্ত হওয়া জমিতে পর্যটন কেন্দ্র ও সংগ্রহশালার করতে থ্রিডি নকশা ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে। পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলেও জানান তিনি। কমিশনার মিজানুর বলেন, ‘এলাকাবাসীর আবেদনের প্রেক্ষিতে আইনি প্রক্রিয়া মেনে প্রমথ চৌধুরীর তিন একর বসতভিটা থেকে অবৈধ ১৮টি ঘরসহ বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।’

এদিকে, প্রমথ চৌধুরীর বাড়ি দখলমুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করে সাধুবাদ জানিয়েছেন প্রশাসনকে। তারা বলছেন, প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত হওয়ায় তারা খুশি।

প্রমথ চৌধুরী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি প্রভাষক ইকবাল কবির রঞ্জু বলেন, উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী আমাদের পাবনার গর্ব। অবৈধ দখলদাররা তার স্মৃতিচিহ্ন বাড়িটি দখল করে রেখেছিলো। দিনে দিনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো সকল কিছু। তাই বাড়ি উদ্ধারে জন্য আমরা আন্দোলন করেছি। ২০১৬ সালে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে বাড়ির জমিগুলো উদ্ধারের দাবি জানিয়ে আবেদন করি। অবশেষে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করায় আমরা খুবই খুশি। সরকারের নিকট আমাদের দাবি এ কালজয়ী সাহিত্যিকের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর পৈত্রিক ভিটায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হোক।

উদীচি চাটমোহর উপজেলা সংসদের আহবায়ক রকিবুর রহমান টুকুন বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ তাদের ক্ষমতার দাপটে এই জায়গাকে কুক্ষিগত করে দখলে রেখেছিল। আমরা মনে করি, শুধু উচ্ছেদ করলেই হবে না, এরপরের যে কাজগুলো আছে জায়গাটিকে সংরক্ষণ করা এবং সরকারের যে একটি সিদ্ধান্ত আছে এখানে একটি সংগ্রহশালা ও পর্যটন কেন্দ্র করা তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে প্রমথ চৌধুরী সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম ও বিশ্ববাসী জানতে পারবে।

তথ্যমতে, প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি পাবনার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। প্রমথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। কলকাতার হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাস করে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে দর্শনে অনার্সসহ বিএ এবং ইংরেজিতে এমএ পাস করেন। যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টার হওয়ার পর কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগদান করেন। তবে আইন পেশায় তিনি বেশিদিন যুক্ত থাকেননি। ১৮৯৯ সালে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মেয়ে ইন্দিরা দেবীকে বিয়ে করেন তিনি। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আইন কলেজে কিছুকাল অধ্যাপনা করেন এবং ঠাকুর এস্টেটের ম্যানেজার ছিলেন।

১৯১৪ সালে মাসিক সবুজপত্র প্রকাশনা এবং তার মাধ্যমে বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। একে শ্রন্দ্র করে তখন একটি শক্তিশালী লেখকগোষ্ঠী গড়ে ওঠে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। প্রমথ চৌধুরী ‘বীরবল’ ছদ্মনামে এ পত্রিকায় ব্যঙ্গরসাত্মক প্রবন্ধ ও নানা গল্প প্রকাশ করেন। তার এ ছদ্মনাম থেকে তখন বাংলা সাহিত্যে বীরবলী ধারা প্রবর্তিত হয়। তার সম্পাদিত অন্যান্য পত্রিকা হল- বিশ্বভারতী, রূপ ও রীতি এবং অলকা। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে তেল-নুন-লাকড়ি, সনেট পঞ্চাশৎ, চার-ইয়ারি কথা, বীরবলের হালখাতা, পদচারণ, রায়তের কথা, নীললোহিত ও আত্মকথা ইত্যাদি। ১৯৪৬ সালের ২ ডিসেম্বর শান্তিনিকেতনে তিনি পরলোকগমন করেন।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!