• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অভাব দূর করার আমল’টি কি আপনি জানেন?


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১৯, ২০১৮, ০৫:০০ পিএম
অভাব দূর করার আমল’টি কি আপনি জানেন?

ঢাকা : নিশ্চয়ই সৎ আমল করতে পারা বড় একটি নেয়ামত; কিন্তু অন্য একটি নেয়ামত ব্যতীত তা পূর্ণ হয় না, যা তার চেয়ে বড়, তা হল কবুলের নিয়ামত। ইসলামের আগমনের আগে জাহেলি যুগে ঋণ পরিশোধ না হলে চক্রবৃদ্ধিহারে সুদের ওপর সুদ বাড়তে বাড়তে তা মূলধনের সঙ্গে যোগ হতো। ফলে সামান্য ঋণের অর্থ পাহাড় হয়ে দাঁড়াতো এবং ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে তা পরিশোধ করা অসম্ভব হয়ে যেত। অতঃপর ইসলামের আগমনের পর মহান আল্লাহ এ প্রথার বিপরীতে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সুদ না নিয়ে মূলধন ফেরতে স্বচ্ছলতা না আসা পর্যন্ত অবকাশ দেয়ার কথা ঘোষণা করেন। আর যদি ঋণ একেবারেই মাফ করে দেয়া যায় তবে তা আরো উত্তম বলেও ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ তাআলা কুরআনে পাকে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি ইহসান করতে ঋণদাতার প্রতি নসিহত পেশ করে বলেন-

আয়াত পরিচিতি ও নাজিলের কারণ

সুরা বাকারার ২৮০ নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা ঋণগ্রস্ত অভাবি ব্যক্তির প্রতি ইহসান করার নসিহত পেশ করেছেন। সম্ভভ হলে ঋণের অর্থ মাফ করে দেয়ার কথাও বলেছেন। আলোচ্য আয়াতের বাস্তবায়নে রয়েছে হাদিসের চমৎকার ফজিলতের বর্ণনা ও ঘটনার বিবরণ। যা তুলে ধরা হলো-আল্লামা বগবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, ‘এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর বনি আমরসহ অন্য যারা সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল, তারা বললো আমরা তাওবা করি; আমরা আল্লাহ এবং তার রাসুলের সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা রাখি না। অতঃপর তারা ঋণের মূলধন গ্রহণ করে সুদ ছেড়ে দেয়।

আর যদি ঋণগ্রহীতা অভাবগ্রস্ত হয় তবে তার স্বচ্ছল অবস্থা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা কর্তব্য। এ ব্যাপারে হাদিসে পাকে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঋণগ্রহীতার ব্যাপারে ঋণদাতার প্রতি নসিহত ও অবকাশ দেয়ার ফজিলত পেশ করেন। হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে অভাবগ্রস্ত ঋণগ্রহীতার জন্যে সহজ পন্থা অবলম্বন করবে তথা ঋণ আদায়ের ব্যাপারে তাকে সময় দেবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়া ও পরকালে উভয় জাহানে তার যাবতীয় কার্যাবলী সহজ করবেন।’ (মুসলিম)

আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা অভাবগ্রস্ত ব্যক্তির ঋণ মাফ করে দাও তবে তা তোমাদের জন্য হবে উত্তম। এ ব্যাপারেও হাদিসে ঋণদাতার মহত্ব ও ফজিলত ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার আরশের ছায়াতলে স্থান পেতে চায় সে যেন এমন অভাবগ্রস্ত ঋণ গ্রহীতাকে সময় দেয় অথবা মাফ করে দেয়। (তাবারানি) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত মানুষকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে বিনম্র হয় অথবা তাকে সময় দেয় তবে যত দিন সে ব্যক্তি ঋণের টাকা আদায় করতে না পারে ততদিন পর্যন্ত প্রত্যেক দিন এত টাকা আল্লাহর রাহে দান করার সাওয়াব সে পাবে। (মুসনাদে আহমদ)

হজরত আবু কাতাদা রহমাতুল্লাহি আলাইহি এক ব্যক্তির কাছে কিছু টাকা পেতেন। তিনি সে টাকা নিতে আসলে লোকটি পালিয়ে যেতো। একদিন তিনি টাকার জন্য আসলেন; এমন সময় একটি শিশু বাড়ি থেকে বের হয়। হজরত আবু কাতাদা শিশুটিকে জিজ্ঞাসা করলেন, ওই ঋণগ্রহীতা ঘরে আছে কিনা? শিশুটি বলল, আছেন এবং খাবার খাচ্ছেন।

হজরত আবু কাতাদা উচ্চস্বরে ঋণগ্রহীতাকে ডেকে বললেন, আমি জানি তুমি ঘরেই আছ।অতএব বাইরে বের হয়ে আস। সে বাইরে বের হয়ে আসল। তখন তিনি জানতে চান, আমি আসলে তুমি পালিয়ে যাও কেন? লোকটি বলল, ‘প্রকৃত অবস্থা হলো; আমি অত্যন্ত অভাবগ্রস্ত। এ মুহূর্তে ঋণ আদায় করতে পারছি না বিধায় লজ্জিত। হজরত আবু কাতাদা বললেন, তুমি এ কথার ওপর শপথ! করতে পার? সে সঙ্গে সঙ্গে শপথ করলো। ওই সময় হজরত কাতাদা কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, যে ব্যক্তি কোনো ঋণ গ্রহীতাকে সময় সুযোগ দেবে অথবা ঋণ মাফ করে দেবে সে কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে।’ (মুসলিম)

অন্য হাদিসে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাআলা তাকে জিজ্ঞাসা করবেন, বল তুমি কি নেক কাজ করে এসেছ? সে বলবে, জীবনে আমার দ্বারা এমন কোনো নেক আমল করা হয়নি যার পুরস্কার আমি পেতে পারি। আল্লাহ তাআলা তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করবেন, আর সে একই উত্তর দেবে। এভাবে ৩ বার প্রশ্ন করা হবে এবং ৩ বারই উত্তর দেয়া হবে। অতঃপর সে বলবে, অবশ্য আমার একটি ছোট কথা এখন মনে পড়ছে; হে আল্লাহ! তুমি দয়া করে আমাকে সম্পদশালী করেছিলে, লোকেরা আমার কাছ থেকে বাকিতে মালপত্র নিত।

আমি তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র হতো; ঋণ আদায়ে সক্ষম ছিল না তাদেরকে ঋণ আদায়ে সময় দিতাম আর যারা সম্পদশালী হতো তাদের প্রতিও কঠোর হতাম না। আর যারা অত্যন্ত দরিদ্র-অভাবি হতো তাদেরকে মাফ করে দিতাম। তখন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করবেন, ‘তাহলে আমি কেন তোমার প্রতি সহজ করব না? যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করেছি; তুমি জান্নাতে প্রবেশ কর।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিদের প্রতি ইহসান করার তাওফিক দান করুন। ঋণ পরিশোধে সময় দেয়ার তাওফিক দান করুন। ঋণগ্রহীতা চরম অভাবি হলে তাকে ঋণ মাফ করে দেয়ার তাওফিক দান করুন। পরকালে আল্লাহ তাআলার সীমাহীন দয়ার মাধ্যমে ক্ষমা ও জান্নাত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
সোনালীনিউজ/আরজে

Wordbridge School
Link copied!