• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অযত্ন অবহেলায় মুন্সীগঞ্জের বধ্যভূমি


মঈনউদ্দিন সুমন, মুন্সীগঞ্জ ডিসেম্বর ৭, ২০১৬, ০২:১২ পিএম
অযত্ন অবহেলায় মুন্সীগঞ্জের বধ্যভূমি

সারা বছর অযত্ন অবহেলাতেই পড়ে থাকে মুন্সীগঞ্জের বধ্যভূমিগুলো। বিশেষ কোনো দিন কিংবা অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হলে পরিষ্কার করার প্রয়োজন পড়ে। সদরের সাতানিখীল, কেওয়ার, টঙ্গীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাহপুর, গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর, গোসাইচর, বালুরচর, নাগেরচর, কাজিপুরা, বাশগাও সহ অনেক জায়গাতেই হানাদার বাহিনী হত্যাযজ্ঞ চালায়। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সাজ্জাদ হোসাইন জানান, ২০০৬ সালে হরগংগা কলেজের দেয়া ২০ শতাংশ জায়গায় ২৭ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মিত হয় জেলার কেন্দ্রীয় বধ্যভূমি, যেখানে রয়েছে ৩৬জনের লাশ। কিন্তু তাও জরাজীর্ণ অবস্থায় সারা বছর পড়ে থাকে, শুধু ১৪ ডিসেম্বর পরিষ্কারের কথা মনে পড়ে। কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক  সময় পায়ে জুতা নিয়েই এর উপর অবস্থান করে। এছাড়াও এর বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। দুই পাশে সীমানা দেয়াল নেই, চারপাশে খোলামেলাভাবেই রাখা হয়েছে এটি। এমনকি রাতের অন্ধাকারে এমনসব পবিত্র জায়গাগুলোতে চলে মাদক সেবন।

এ ব্যাপারে হরগংগা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক নাজমুল হাসান জানান, বধ্যভূমিগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব জেলা প্রশাসনের। ১৪ ডিসেম্বর এলেই তারা শুধু এদিকে নজর দেয়। আমরা চিঠিপত্র দিয়ে একাধিকবার জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম, তারপরও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমি কলেজ শিক্ষক পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক থাকা অবস্থায় এসব স্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরি। যেন বধ্যভূমিগুলোকে একটি সীমানা প্রাচীর দিয়ে রক্ষা করা হয়। কিন্তু এই ব্যাপারটি তারা আমলেও নিচ্ছে না। ফলে নানা রকন অপকর্ম এসব স্থাপনার ওপর সংঘটিত হচ্ছে। আপনারা জেলা প্রশাসককে ব্যাপারটি অবগত করেন।

সরকারি হরগংগা ককেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুখেন চন্দ ব্যানার্জি জানান, মুন্সীগঞ্জ সদরের কেওয়ার চৌধুরী বাড়ি পাকিস্তানি সেনারা ১৯৭১ সালের ১৩ মে দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘেরাও করে। ওই বাড়ি থেকে ডাঃ সুরেন্দ চন্দ্র সাহা ও তার দুই ছেলে শিক্ষক সুনিল কুমার সাহা, দ্বিজেন্দ্র লাল সাহা এবং অধ্যাপক সুরেশ ভট্টাচার্য, শিক্ষক দেব প্রসাদ ভট্টাচার্য, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর শচীন্দ্র নাথ মুখার্জীসহ ১৭ জন বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে আসে এবং ১৪ মে সকাল ১০টায় কেওয়ার সাতানিখীল গ্রামের খালের পাড়ে চোখ বেঁধে ১৬ জনকে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে। ডঃ সুরেন্দ চন্দ্র সাহাকে হরগংগা কলেজে পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে পাঁচঘড়িয়াকান্দি গ্রামের একটি আম গাছে ঝুলিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে।

সরকারি হরগংগা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রবীল কুমার গাঙ্গুলী জানান, পাছঘড়িয়াকান্দির একটি আম বাগানে ২৫-৩০ জনকে হানাদার বাহিনী মেরে ফেলে। সাতানিখীল এলাকাতেও তারা হত্যাযজ্ঞ চালায়। আব্দুল্লাহপুরের পালবাড়ি বধ্যভূমিটিও সংরক্ষণ করা হয়নি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯ জনকে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। দীর্ঘ ২৮ বছর পর সেখানে আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শহীদ মোল্লা একটি স্মৃতি ফলক নির্মাণ করে পালবাড়ি পুকুর পাড়ে। কিন্তু তাও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

গজারিয়া উপজেলার নয়ানগর, গোসাইচর, বালুরচর, নাগেরচর, কাজিপুরা, বাশগাও সহ অনেক জায়গাতেই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ৩৬০ জন বাঙ্গালিকে হত্যা করে। যাদের মধ্যে ১০৩ জনের নাম পরিচয় জানা গেলেও বাকি ২৫৭ জনের নাম স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও জানা সম্ভব হয়নি। উপজেলার ১০টি বধ্যভূমি অরক্ষিত ও অবহেলায় পড়ে আছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনিসুজ্জামান আনিস জানান, মোটামুটিভাবে সবগুলো বধ্যভূমি চিহ্নিত করা গেছে। তবে বধ্যভূমি সংরক্ষণ ও বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক কোনো বরাদ্দ না থাকায় সম্ভব হয়নি। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, যাতে মুন্সীগঞ্জের বধ্যভূমিগুলো সংরক্ষণে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানান, এটা সত্যি বধ্যভূমিগুলো সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকে। আমি শুনেছি পরবর্তী মিটিং সভার সাথে কথা বলে বধ্যভূমি সংরক্ষণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেব। আপনাদের থেকে কোনো পরামর্শ থাকলে বলবেন, সময়োপযোগী সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!