• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অযত্নে অবহেলায় এমপিদের দপ্তর


সোনালী বিশেষ সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৭, ০৫:৩৮ পিএম
অযত্নে অবহেলায় এমপিদের দপ্তর

ঢাকা : সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অনিয়মে বিশ্বের অন্যতম স্থাপত্যশৈলী জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন এমপিদের দপ্তরগুলো একেকটা হয়ে উঠেছে ‘কুঁড়ে ঘর’। একটু বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ছে পানি। অযত্নে থাকা দেয়ালগুলো ঘেঁষে বেড়ে উঠছে বটবৃক্ষসহ নানা ধরনের গাছ।

সংসদের লেক লাগোয়া এমপিদের অফিসগুলো ঘুরে দেখা গেছে, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আসম ফিরোজ, প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান মঈনউদ্দিন খান বাদলসহ অনেক সিনিয়র এমপির অফিসের সামনে পানি জমে আছে। অফিসগুলোর দেয়াল জড়িয়ে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছ। জানতে চাইলে সংশ্লিষ্টরা জানান, একটুখানি বৃষ্টি হলেই দেয়াল চুয়ে চুয়ে পানি ঝরে এখানে এই অবস্থা। এমপিদের কাছে আসা দর্শনার্থীদের শরীর ভিজিয়ে সাক্ষাৎ পর্ব সারতে হচ্ছে। অফিসগুলো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্টদের তাগাদা দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু এ পথই মাড়ান না বলে তাদের অভিযোগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবন ও সংসদ চত্বরের বিভিন্ন বিল্ডিং সংস্কার, ধোয়ামোছা এবং শোভাবর্ধনের নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাট ধারাবাহিক এক নিয়মে পরিণত হয়েছে। দায়িত্বে থাকা ফজলুল হক মধুসহ তার অধীনস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গুটি কয়েক নিজস্ব ঠিকাদারের যোগসাজশে উন্মুক্ত দরপত্র ছাড়াই গোপনে কার্যাদেশ দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে বার্ষিক বরাদ্দ থাকা কোটি কোটি টাকা লোপাট করছেন।

সূত্র জানায়, গত এক যুগে সংসদ ভবন ও সংসদ চত্বরের কোনো সংস্কার বা কেনাকাটার কাজ পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দরপত্র আহ্বান করার কোনো নজির নেই। দরপত্র ছাড়াই কাজের নামে লুটপাট করা হয়। পিপিআরের শর্ত রক্ষার জন্য অফিসের নোটিশ বোর্ডে গোপনে দরপত্র আহ্বান দেখিয়ে কাজগুলো করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট অফিসের কয়েক কর্মচারী জানান, সংস্কার ও ধোয়ামোছার কাজের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু ও তার অধস্তনারা নিজেরাই প্রকল্প তৈরি করেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে ফজলুল হক নিজে ১০ শতাংশ কমিশন পান। এছাড়া প্রকল্প যাচাই করানোর জন্য এক শতাংশ, সার্কেলের স্টাফদের এক শতাংশ, শেরেবাংলা নগর অফিসের স্টাফদের জন্য ৫ শতাংশ, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর জন্য ৫ শতাংশ ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর জন্য ৫ শতাংশ হারে মোট ২৮ থেকে ৩০ শতাংশ কমিশন নেয়া হয়। এটি সংসদ ভবন এলাকার গণপূর্ত বিভাগে ওপেনসিক্রেট বলে জানান ঠিকাদাররা। তাদের মতে, ঘুষ দেয়ার পর কার্যাদেশের বাকি ৭০ শতাংশ টাকার মধ্যে প্রকল্প তৈরিকারী ঠিকাদারের ৪০ শতাংশ লাভ এবং কাজ করতে খরচ হয় সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ। এছাড়া ভুয়া প্রকল্পে কাজ কার্যাদেশ পেলে পুরো টাকাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভাগাভাগি করে নেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরনো এই এমপি হোস্টেলের সংস্কার কাজের জন্য এর আগেও এক কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্প তৈরি করে তাতে কয়েক মাস আগে দরপত্র ছাড়াই করা সংস্কার কাজের জন্য খরচ বাবদ ৯০ লাখ টাকা ধরা হয়েছিল। খরচ করার পর সে টাকা নতুন কোনো প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা বিধিসম্মত হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। পরবর্তী সময়ে এমপিদের অফিস হিসেবে ব্যবহারের জন্য জাতীয় সংসদ ভবনসংলগ্ন এমপি হোস্টেল সংস্কারে কোনো প্রকল্প ও দরপত্র ছাড়াই এ কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে স্পিকারের নির্দেশে কাজ স্থগিত রাখা হয়।

এসব অনিয়মের ব্যাপারে শেরেবাংলা নগর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধুর সঙ্গে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কখনো জরুরি মিটিং, কখনো জরুরি কাজে আছেন বলে এড়িয়ে যান। তার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!