• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অরক্ষিত রংপুরের বধ্যভূমিগুলো


 রংপুর প্রতিনিধি ডিসেম্বর ১৪, ২০১৬, ০৫:২২ পিএম
অরক্ষিত রংপুরের বধ্যভূমিগুলো

রংপুর: মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত রংপুরের শতাধিক বধ্যভূমির অধিকাংশ এখনো অরক্ষিত। অনেক স্থানে চলছে দখলের পায়তারা। আবার কোথায় অবাধে গরু-ছাগলের বিচরণ। অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এসব বধ্যভূমি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধারা।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদাররা এ দেশীয় আলবদর-রাজাকারদের সহায়তায় রংপুরের স্বাধীনতাকামী মুক্তিপাগল বুদ্ধিজীবিসহ অনেক সাধারণ মানুষকে ধরে বিভিন্ন স্থানে নির্মমভাবে হত্যা ও নির্যাতন করে। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় ওই সব স্মৃতিবিজড়িত স্থানের মধ্যে কিছু জায়গাকে চিহ্নিত করে সেগুলোতে বধ্যভূমি হিসেবে গড়ে তোলা হয়। আবার অনেক জায়গা এখনও চিহ্নিতই হয়নি।

রংপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, জেলার সবচেয়ে বড় বধ্যভূমি বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের ঝড়ূয়ার বিল। সেখানে ১৯৭১ সালের ১৫ এপ্রিল এক সঙ্গে প্রায় এক হাজার ৫০০ জনকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করে। আজও সেই বিভীষিকাময় দিনের কথা ভুলেননি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। ঝাড়ুয়ার বিল বধ্যভুমিটি এখনো রয়েছে অরক্ষিত।

এ ছাড়া রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের হাজীরহাটে জাফরগঞ্জ সেতুতে ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল রংপুর শহরের ব্যবসায়ী অশ্বিনী ঘোষসহ ১৯ জনকে পাকিস্তানি সেনারা গুলি করে হত্যা করে। সেখানে আজও স্মৃতিফলক নির্মিত হয়নি।

অন্যদিকে রংপুর-বগুড়া মহাসড়কে তামপাট দমদমা সেতুর কাছে কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক কালাচাঁদ রায়, তার স্ত্রী মঞ্জু রানী রায়, চিত্তরঞ্জন রায়, রামকৃষ্ণ অধিকারী ও সুনীল চক্রবর্তীসহ অনেক মুক্তিকামী মানুষকে ১৯৭১ সালের ৩০ এপ্রি পাকিস্তানি সেনারা হত্যা করে। ২০০২ সালের ১৪ ডিসেম্বর সেখানে একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। এরপর সেই স্মৃতিবিজড়িত বধ্যভুমিটির দেখভালোর দায়িত্ব নেয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু নামমাত্র দায়িত্বেও সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে সেটি একেবারেই অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, স্মৃতিফলকটির চারপাশে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাখা হয়েছে। একটি প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে দখলের নমুনায় ঘিরে নিয়েছে বধ্যভুমির চারপাশ। এখানে সব সময়ই গরু-ছাগল অবাধে প্রবেশ করে।

রংপুর টাউন হল এলাকা ছিল পাকিস্তানি বাহিনীর টর্চার সেল। ওই স্থানে রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সহায়তায় পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী মানুষকে ধরে এনে নির্যাতন করে হত্যা করত। সেখানেও স্মৃতিস্তম্ভ তৈরি করা হয়নি। বর্তমানে সেখানে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও নাট্যসংগঠনের কার্যালয় গড়ে তোলা হয়েছে।

এ ছাড়া রংপুর সদরের রাজেন্দ্রপুরের বালারখাল, লাহিড়ীরহাট, কাউনিয়ার বলভবিসু, গঙ্গাচড়ার শংকরদহসহ বেশ কয়েকটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলকও নির্মাণ করা হয়নি। কোথাও কোথাও স্মৃতিফলক থাকলেও তা রয়েছে লোকচক্ষুর আড়ালে। দায় সাড়া কিছু মানুষের তত্ত্বাবধানে থাকায় অনেক বধ্যভুমি আজ দখলের মুখে।

প্রজন্ম '৭১ রংপুর জেলা কমিটির সভাপতি দেবদাস ঘোষ দেবু বলেন, 'আমার বাবাসহ অনেককে পাকিস্তানি সেনারা ধরে নিয়ে জাফরগঞ্জ সেতুতে হত্যা করেছে। সে স্থানটিতে তৈরি করা হয়নি নামফলক বা স্মৃতিস্তম্ভ।' তিনি বলেন, এরকম অনেক জায়গা রয়েছে। সেগুলোও সংরক্ষণ করা হয়নি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য স্মৃতিস্তম্ভগুলো সংরক্ষণ করা জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মুক্তিযোদ্ধা সদরুল আলম দুলু, ফজল মিয়া ও দুলাল মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, অনেক বধ্যভূমি আজও সংরক্ষিত হয়নি। এসব বধ্যভূমি চিহ্নিত করে দ্রুত স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানান তারা।

দৈনিক দাবানল সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার গোলাম মোস্তফা বাটুল বলেন, 'যেসব শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। দেশ ও লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছি। সেই বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের রক্তে ভেজা অনেক স্থান এখনও সংরক্ষণ করা হয়নি। এটি অত্যন্ত দু:খজনক। যেসব বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক তৈরি করা হয়েছে তা সংরক্ষণ এবং যেগুলোতে এখনও স্মৃতিফলক তৈরি হয়নি সেখানে তা তৈরির দাবি জানান তিনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইচএম

Wordbridge School
Link copied!