• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অর্থমন্ত্রীকে কেন টার্গেট করছে জাতীয় পার্টি ?


নিউজ ডেস্ক ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৮, ০৮:৫০ পিএম
অর্থমন্ত্রীকে কেন টার্গেট করছে জাতীয় পার্টি ?

ঢাকা: বর্তমান সরকারের সবচেয়ে প্রবীণতম মন্ত্রী হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দল ও মন্ত্রিসভায় তার রয়েছে ব্যাপক প্রভাব। দিয়েছেন রেকর্ড পরিমাণ বাজেট। যেকোনো বড় বিষয়েও মুহূর্তের মধ্যে হালকা মন্তব্য করতে পারেন তিনি। কিন্তু হাল আমলে বার বার আক্রমণের শিকার হচ্ছেন জাতীয় পার্টির কাছ থেকে।

প্রকাশ্যে, গোপনের পর এবার জাতীয় সংসদের কয়েকটি অধিবেশনে মুহিতের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান প্রকাশ করছেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা।

জাতীয় পার্টির এমপিরা দাবি করছেন, মুহিতকে অর্থমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হোক। বুধবারও (২৮ ফেব্রুয়ারি) প্রধামন্ত্রীর উপস্থিতিতে চলা সংসদের অধিবেশনে মুহিতকে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়ার কথা বলেন জাতীয় পার্টির সদস্যরা। 

এসময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ সরকারের সব ব্যর্থ মন্ত্রীকে সরিয়ে দিয়ে মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানান তারা।

অন্যবারের মতো এবারও জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলির সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর টিম যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে সেটাকে নিয়ে তিনি লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারবেন না। ব্যাংকের দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে এবং দায়ীদের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যাংকিং কমিশন গঠনেরও দাবি জানান তিনি।

জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ উপস্থিত ছিলেন। আর সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

জিয়া উদ্দিন বাবলু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছেন সাতটি ব্যাংকে সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি। এ মূলধন গেল কোথায়? কার টাকা এ মূলধন? এ ব্যাংকগুলোতে তো ডিপোজিট টাকা দিয়ে মূলধন হয়। এ টাকা যে আপনি আবার দিচ্ছেন, এগুলো করের টাকা দিয়ে দিচ্ছেন। যারা কর দেয় তারা কি সেই ক্ষমতা আপনাকে দিয়েছে? মানুষের টাকা দিয়ে লুটের টাকা ভরণ করার ক্ষমতা কে আপানকে দিয়েছে?

তিনি বলেন, মূলধন ঘাটতির সরকারি ব্যাংকগুলো হলো সোনালী, রূপালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক। আর বেসরকারি ব্যাংকগুলো হলো বাংলাদেশ কমার্স, ফারমার্স ও আইসিবি ব্যাংক। এদের আবার মূলধন দিয়ে লাভ কী? এ টাকা আপনি কোত্থেকে দেবেন। আপনি দেবেন করদাতার টাকা থেকে। এদেশের ১৬ কোটি মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা করের টাকা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের সেই টাকা থেকে দেবেন?

ব্যাংকগুলোকে এ করদাতার টাকা দিয়ে ভরণপোষণ করবেন। এর কি সাংবিধানিক কোনো অধিকার আপনাকে দেয়া হয়েছে? আপনি কি মানুষের কাছ থেকে সেই অধিকার পেয়েছেন? এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর ঘাটতি পূরণ করেছেন আপনার মন্ত্রিত্বের মেয়াদে। আর ব্যাংকগুলো দুর্বল হচ্ছে এ অর্থমন্ত্রীর সময়ে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জাতীয় পার্টির এ নেতা বলেন, আপনি বলেছেন আপনাদের ব্যর্থতার কথা শুনতে চান। তাহলে কেউ যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আপনি কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। ব্যর্থতার দায় নিয়ে কেন উনি এখানে থাকবেন? আমরা বারবার বলছি উনার চলে যাওয়া উচিত। উনি খালি ঘাটতির কথা বলেন, উন্নয়নের রঙিন চিত্র দেখান। মানুষ জানতে চায়- এ ঘাটতির টাকা আমরা কোথা থেকে দেব। এর জবাব আমাদের কাছে নেই। মানুষের করের টাকা দেয়ার অনুমতি কি আমরা পেয়েছি? মানুষ কি আমাদের এজন্য ভোট দিয়েছে যে একজন লুট করবে আর আপনি মানুষের টাকা দিয়ে ঘাটতি পূরণ করবেন। এটা হতে পারে না।

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের পরিচালক ও এমডিকে আপনি গ্রেফতার করেছেন। কিন্তু সেই ব্যাংকের চেয়ারম্যান, তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। জনতা ব্যাংকের দুর্নীতি নিয়ে আবুল বারাকাতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি কেন? আমরা ষোল কোটি মানুষের পক্ষ থেকে জানতে চাই কেন তিনি এ মূলধন ঘাটতি সাড়ে নয় হাজার কোটি টাকা কোথায় থেকে দিচ্ছেন? তিনি বারবার ব্যর্থতার কথা সংসদে বলবেন আর টাকা দেবেন এভাবে দেশ চলতে পারে না।

জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনার বিরাট একটি ইমেজ আছে। আপনি দেশকে উন্নত সমৃদ্ধশালী দেশের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনি ক্ষুধামুক্ত দারিদ্র্যমুক্ত দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করছেন। কিন্তু টিম যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে সেটাকে নিয়ে লক্ষ্যস্থলে পৌঁছতে পারবেন না। তাই আমি মনে করি আপনার সরকারে স্বার্থে যেসব ব্যর্থ মন্ত্রী আছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। তাদের ডিসমিস করেন। স্যাক করেন। মানুষের আস্থা তৈরি করেন যে- প্রধানমন্ত্রী মানুষের কথা শোনেন, ষোল কোটি মানুষকে মার্যাদা দেন।

কেনো এভাবে হামলার শিকার হচ্ছেন তিনি। সূত্র জানিয়েছে, আগামী নির্বাচনে নিজেদের একটি ইমেজ গড়তে চায় জাতীয় পার্টি। কিন্তু সরকারে থেকে তা সম্ভব নয়। আবার সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলে, দলটির প্রধানের জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু জনগণকে তো বুঝাতে হবে। তাই অর্থ আত্মসাত, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছেন তারা।

কারণ বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে গৃহপালীত দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই নিজের ইমেজ ঠিক রাখতে এসব কাজ করছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে

এর আগে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ। এছাড়া বক্তব্য দেন বিএনএফের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!