• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থমন্ত্রীকে ‘থ্রেট‍‍’ দিলেন ব্যবসায়ীরা


নিজস্ব প্রতিবেদক এপ্রিল ৩০, ২০১৭, ০৬:৪৩ পিএম
অর্থমন্ত্রীকে ‘থ্রেট‍‍’ দিলেন ব্যবসায়ীরা

ঢাকা: মূল সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটের হার কমানো ও আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের তোপের মুখে পড়লেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উত্তেজিত ব্যবসায়ীদের শান্ত করতে এগিয়ে আসেন এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।

রোববার (৩০ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের যৌথ পরামর্শক সভায় এ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

সভার শুরুতেই আগামী বাজেটে সব ধরনের কোম্পানির করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব দেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ৫০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ২৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেন।

এসময় ব্যবসায়ীরা শুধু মূসকের ওপরেই কর আরোপের প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া বেশ কিছু খাতে রেয়াতি হারে মূসক আরোপের প্রস্তাবও দেয়া হয়। আবার যারা নতুন আইনে উপকরণ রেয়াত নিতে পারবেন না; তাদের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করার সুপারিশ করা হয়। ৩৬ লাখ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার লেনদেন পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর আরোপের প্রস্তাবও দেয়া হয়।

আগামী অর্থ-বছর থেকে নতুন আইনে ছোট-বড় সব ধরনের ব্যবসা ও সেবার ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। যা সরাসরি গ্রাহক বা ভোক্তাকে বহন করতে হবে। এই মূসক বা ভ্যাট হার কমানো ও আদায় প্রক্রিয়া নিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে চরম উত্তেজনাকর অবস্থায় পৌঁছায়।

মূসক বা ভ্যাট হার কমানো ও আদায় প্রক্রিয়া সম্পর্কিত দাবি না মানলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি আন্দোলনের হুমকি দিলে মাঝখানে বক্তব্য থামিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা আন্দোলন দমন করবো। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ব্যবসায়ী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাকযুদ্ধ।

উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, ভ্যাট নিয়ে এনবিআর ও এফবিসিসিআই কাজ করছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ভ্যাট নিয়ে ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। শুধু লোক দেখানো প্রশিক্ষণ হয়েছে। প্রশিক্ষণ না দিলে চকবাজারের ব্যবসায়ী কীভাবে জানবে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার কী?

এসময় আবু মোতালেব কিছুটা অধর্য্য হয়ে বলেন, ভ্যাট নিয়ে এফবিসিসিআই যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা আশা করি মেনে নেবেন। তা মানা না হলে আমরা আন্দোলন করব। আবু মোতালেবের এই বক্তব্য মাঝ পথেই থামিয়ে দেন অর্থমন্ত্রী। বলেন, আট লাখ নিবন্ধিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ভ্যাট দেয় ৩২ হাজার। আপনার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে কতজন ভ্যাট দেন? আপনারা খামাখা আন্দোলন করছেন। যদি আপনারা আন্দোলন করেন, তবে আমরা তা দমন করব। এ টাইপের কথা যেন না হয়, আই অ্যাম সরি টু সে। আবু মোতালেবের বক্তব্য আমার পছন্দ হয়নি। তিনি থ্রেট দিয়েছেন। এটা মোটেও ঠিক হয়নি। তিনি যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেবেন এমন একটা ভাব। এটা ঠিক না। আমরা এখানে বসছি আলোচনা করতে। তাহলে এ ধরনের কথা কেন? এই টাইপের কথা যেন না হয়, আই অ্যাম সরি টু সে- বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

এ সময় অন্য ব্যবসায়ীরা অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ করে হইচই শুরু করে দেন। অনেকে আন্দোলন দমনের হুমকি দেবেন না—এমন কথাও উচ্চকণ্ঠে বলতে থাকেন।

সম্মেলনকক্ষে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ব্যবসায়ীদের শান্ত করতে এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আশা করি ব্যবসায়ীদের ন্যায্য দাবি মেনে নেবেন। আপনারা ধৈর্য ধরেন। এখনো আমরা বাজেট দেখিনি। জানি না বাজেটে কী আছে।

এরপর এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, এই ধরনের পরামর্শক সভায় আন্দোলনের হুমকি দেবেন না। এ ধরনের ফোরামের একটি আলাদা ভাষা আছে।

এরপর পরিস্থিতি শান্ত হয়। এরপর আবারও আলোচনা শুরু হয়। করপোরেট করের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পরামর্শ দেয় এফবিসিসিআই। করপোরেট করের ক্ষেত্রে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাব হলো, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব। 

এ ছাড়া যেসব ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত, তাদের কর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর হার কমিয়ে ৪০ শতাংশ এবং মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার ৩৫ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনটি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!