• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে নতুন ব্যাংকগুলো


জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আগস্ট ১০, ২০১৭, ০৮:৪৮ পিএম
অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমেছে নতুন ব্যাংকগুলো

ঢাকা: নতুন ব্যাংকের ওপর করা বিশেষ গবেষণায় উঠে এসেছে, নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ব্যাংকিং বোঝেন কম। ঋণ দেয়ার বিষয়ে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে তাদের মধ্যে। অনেক পরিচালক বেনামী ঋণ নিচ্ছে। এভাবে ঋণ দিলে ভবিষ্যতে বেকায়দায় পড়বে ব্যাংকগুলো। ফলে এসব ব্যাংকে মনিটরিং বাড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা।

সেই গবেষণার সূত্র ধরেই ব্যাংকাররা এ ধরনের কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন ব্যংকগুলোর মধ্যে দুই/তিনটির অবস্থা একেবারেই করুণ।

বৃহস্পতিবার(১০ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে ‘অ্যান ইভালুয়েশন অব দ্য পারফরমেন্স অব নিউ কর্মাশিয়াল ব্যাংকস( নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ণ)’ শীর্ষক কর্মশালায় তারা এ কথা বলেন।

কর্মশালার উদ্বোধনকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, নতুন ৯টি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মধ্যে দুই তিনটির অবস্থা খুবই নাজুক। এদের মধ্যে এক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। এ কারণে তারা পিছিয়ে পড়ছে। তবে এখনই বলার সময় আসেনি যে, নতুন ব্যাংকগুলোর অবস্থা খুবই দুর্বল বা ভালো। যে দুই তিনটি ব্যাংকে বড় বিচ্যুতি দেখা দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। সার্বিকভাবে তাদের মনিটরিং করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এখনও অনেক কম। তাই এসব ব্যাংকের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যেখানে ৬০ শতাংশ খেলাপি ঋণ থাকা সত্ত্বেও বেসিক ব্যাংক বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সেখানে নতুন ব্যাংকের খেলাপি ১ শতাংশেরও কম।

তিনি বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোকে কিছু সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। যাতে তারা বড় হতে পারে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যাংকের সংখ্যা অনেক বেশি। তবে ব্যাংকের ব্র্যাঞ্চ বাড়ানো উচিত। ভারতে ১২ হাজার মানুষের জন্য একটি ব্র্যাঞ্চ আছে। আমাদের ব্যাংকগুলোর লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে- ১০ হাজার মানুষের জন্য একটি ব্র্যাঞ্চ।

বিআইবিএমের মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে নতুন ব্যাংকের আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা খতিয়ে দেখতে হবে। একইসঙ্গে খারাপ করলে লাইসেন্স বাতিলের ব্যবস্থাও রাখতে হবে। ঋণ খেলাপিদের রাজনৈতিকভাবে বয়কটের দাবি জানিয়েছেন ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক সভাপতি ও মেঘনা ব্যাংকের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল আমিন।

তিনি বলেন, ঋণ খেলাপি হওয়া এখন একটা কালচার হয়ে গেছে। তাই ঋণ খেলাপিদের সামাজিক এবং রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে বয়কট করতে হবে।

এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হুসাইন বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর পারফরমেন্স মূল্যায়নের জন্য ৪ বছর যথেষ্ট নয়। আমাদের জন্মই হয়েছে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে। তাই পুরানো বা অন্য প্রজন্মের ব্যাংকের সঙ্গে তুলনা করলে হবে না। পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমেদ চৌধুরী বলেন, নতুন ব্যাংকগুলো ঋণ দেয়ার বিষয়ে অনেক বেশি এগ্রেসিভ। এভাবে ঋণ দিলে বেকায়দায় পড়বে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি চৌধুরী বলেন, নতুন ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ব্যাংকিং বোঝে কম। আবার অনেক পরিচালক বেনামী ঋণ নিচ্ছে। বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে লাইসেন্স নিয়েছে। কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক মো. সোহেল মোস্তফাসহ ৪ সদস্যের একটি দল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুন ব্যাংকগুলো কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায় (সিএসআরে) অর্থ ব্যয়ে নির্দেশনা মানছে না। কর ছাড় পেতে নানাভাবে সিএসআরের পেছনে অস্বাভাবিক অর্থ ব্যয় করছে।

২০১৩ সালে সরকার রাজনৈতিক বিবেচনায় ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়। সেই ব্যাংকের কর্মদক্ষতা মূল্যায়ণ করেই এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/তালেব

Wordbridge School
Link copied!