• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের শিকার রোগীদের ভোগান্তি


বরগুনা প্রতিনিধি নভেম্বর ২৫, ২০১৬, ০৬:৫৬ পিএম
অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের শিকার রোগীদের ভোগান্তি

বরগুনায় বেসরকারি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কবলে জিম্মি বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালের সাধারণ রোগীরা। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কিলোমিটারে ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা থাকলেও তা অমান্য করে রোগীদের জিম্মি করে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমনকি রোগীদের জোড় করে বাধ্য করা হচ্ছে ফিটনেসবিহীন মাইক্রোবাস দিয়ে তৈরি করা অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে। ভুক্তভোগীদের দাবি সিন্ডিকেটের কবল থেকে তারা পরিত্রাণ পেতে চায়।
 
বরগুনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স কম থাকার কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। অপরদিকে বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিন্ডিকেট ভেঙে নিরাপদে যাতে রোগীরা চিকিৎসাসেবা নিতে পারে সে ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, রোগী বহনের জন্য সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করার বিধান থাকলেও ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্সগুলো তার তোয়াক্কা করছে না। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বরিশাল বিভাগীয় শহরের দুরত্ব প্রায় ৮৫ কিলোমিটার। সেই হিসাবে ফিরতি ভাড়াসহ দুই হাজার টাকা ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও সরকারি অ্যাম্বুলেন্স বহন করছে ২৭০০ টাকা।

অপরদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্সগুলো আদায় করছে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা পর্যন্ত । জেলা শহরের মধ্যেও নেয়া হচ্ছে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ টাকা। বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বালিয়াতলী রাখাইন পল্লী মাত্র ২৫ কিলোমিটার। সরকারি রেট হিসাবে ৫০০ টাকা ভাড়া নেয়ার কথা। কিন্তু সেখানে যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হয় ১৫০০ থেকে ২৫০০ টাকা। এতে করে গরীব ও অসহায় রোগীরা উন্নত চিকিৎসা গ্রহণে বিপাকে পড়ছেন। বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ৩টি সরকারি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও ড্রাইভার আছে মাত্র দুইজন। অপরদিকে মালিকানাধীন অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে ১৪টি যার মধ্যে মুমূর্ষ রোগী বহনের অযোগ্য ১১টি অ্যাম্বুলেন্স। অকেজো ও ভাঙা সিট, নেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ও ফ্যান। শুধু ব্যবসা করার জন্য কোন রকম ফিটনেসবিহীন পরিত্যক্ত মাইক্রোবাস দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স সাইনবোর্ড লাগিয়ে রোগীদের হয়রানি করা হচ্ছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ।

বালিয়াতলী থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর আত্মীয় আফজাল হোসেন বলেন, শুধুমাত্র ব্যবসা করার জন্য অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা আমাদেরকে হয়রানি করছেন। ৫শ’ টাকা ভাড়ার জায়গায় তাকে গুণতে হয়েছে ১৫শ’ টাকা। তার পরেও ভাঙা গাড়িতে আসতে হয়েছে মুমূর্ষ রোগী নিয়ে। বেতাগী থেকে আসা রোগী আকলিমা বেগম বলেন, ডাক্তার এখান থেকে বরিশাল রেফার করেছে উন্নত চিকিৎসার জন্য। কিন্তু টাকার অভাবে যেতে পারছি না। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পাই না। সরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার প্রায় সময় পালিয়ে থাকে। বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা মাসিক বখরা দেয়। এ কারণে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারদেরকে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া যাত্রীরা ইচ্ছা করলেই ব্যক্তি মালিকাধীন অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে পারবে না। সিরিয়াল অনুযায়ী ভাঙা অকেজো হলেও সেটাই উঠতে হবে। হাসপাতালের সামনেই এসব অ্যাম্বুলেন্স সারিবদ্ধ করে রাখা হয়। যদি কেউ হাসপাতালের সরকারি অ্যাম্বুলেন্সে রোগী পরিবহন করতে চায় সেখানেও বাঁধা দিয়ে থাকে তারা। রোগীদেরকে বাধ্য করা হয় ওই সিন্ডিকেটের অ্যাম্বুলেন্সে উঠতে।

এমন অভিযোগ হাসপাতালের অসংখ্য রোগীর। জ্বালানী তেলের দাম কমলেও এইসিন্ডিকেট ভাড়া নির্ধারিত করে সাধারণ রোগীদেরকে জিম্মি করে উচ্চ মূল্যে রোগী পরিবহন করছে। বরগুনা জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট বরগুনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে প্রতিনিয়ত কয়েক শত রোগী দৈনিক চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করে। বরিশাল মেডিকেলে রোগী পরিবহনে ২ হাজার টাকা থেকে ২৫০০/- টাকায় সম্ভব হতো। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স মালিকরা সিন্ডিকেট বানিয়ে হঠাৎ করেই মূল্য বাড়িয়ে ৩৫০০/- থেকে ৪৫০০/-টাকা করে। এ ব্যাপারে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. সোহরাফ উদ্দিন বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স তিনটি যার মধ্যে ড্রাইভার রয়েছে ২ জন। এত রোগী বহন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

এছাড়া বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে আমাদের কিছুই করার নাই। বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. নুরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে শুনলাম। খোঁজ নিয়ে দেখবো। কোন রকম সিন্ডিকেট থাকলে সেটা যাতে ভেঙে রোগীদের নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। তাছাড়া আইন অমান্য করে কোন অ্যাম্বুলেন্স মালিক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তাকে আইনের আশ্রয় এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!