• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ১, ২০১৬, ০২:২৯ পিএম
আ. লীগ নেতার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ

একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করা তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান নেত্রকোনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউরের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের একজন সহযোগীসহ অন্তত দুজনকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ এনেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা মো. শামছুজ্জোহা। অভিযোগে তার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব‌্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদন করেছেন তিনি।

গত ২৮ নভেম্বর সোমবার ট্রাইব‌্যুনালের তদন্ত সংস্থায় আবেদনটি জমা দেন তিনি। আবেদনের সাথে তিনি একাত্তরে শান্তি কমিটির একটি সভার ‘প্রতিবেদনের অনুলিপি’ দেন, যেখানে সভায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে মতিউরের নাম রয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৪ অগাস্ট নেত্রকোনা সদরের কুরপাড়ের মুকতুল হোসেনের বাড়িতে আক্রমণ করে তাকে আটক করে আনসার ব্যারাকে বসানো হানাদার বাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে সারা রাত পৈশাচিক নির্যাতন করা হয়।

আল বদর মতিউর রহমান খানের নেতৃত্বে পিন্টু-ফরাজী-ভোলা ওই আক্রমণে অংশ নেয়। তারা পরে মুকতুল হোসেনকে মগড়া নদীর তীরে নিয়ে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। তার লাশ আর পাওয়া যায়নি।

বাড়ি থেকে তাকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার মানুষ ওই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। আমি সোর্সের মাধ্যমে উল্লিখিত ঘটনা জানতে পারি। পরে এলাকার লোকজনের কাছে ঘটনা জানতে পারি, অভিযোগে লিখেছেন শামছুজ্জোহা।

তিনি বলেন, একাত্তরে নেত্রকোণা কৃষি অফিসের পিয়ন মুকতুল আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন। রাজাকার ও আল বদরদের তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন তিনি।

মতিউরের বিরুদ্ধে অপর অভিযোগ, দুর্গাপুর থানার বিরিশিরি নোয়াপাড়ার অধ্যাপক আরজ আলীকে ধরে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ১৫ অগাস্ট আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে অধ্যাপক আরজ আলীকে নেত্রকোনা কলেজ থেকে ধরে নেত্রকোনা ভোকেশনাল আর্মি ক্যাম্পে নেওয়া হয়।

আল বদর মতিউর রহমান খান, অধ্যাপক মুন্সী আব্দুল জলিল, পিন্টু ও ফরাজী এতে অংশ নেয়। পরদিন আরজ আলীকে হত্যা করে আসামিরা লাশ সোমেশ্বরী নদীতে ফেলে দেয়। ওই ঘটনা নুরুজ্জামান, খোরশেদ আলী, আব্দুল হামিদসহ অনেকে প্রত্যক্ষ করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আদালতে সাক্ষ্য দিতে প্রস্তুত বলে আবেদনে জানিয়েছেন শামছুজ্জোহা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মতিউর রহমান বলেন, তিনি কোনো অপরাধের সাথে জড়িত নন। একাত্তরে তিনি মুক্তারপাড়া এলাকায় শ্বশুরের বাসায় পাক হানাদারদের নজরবন্দি ছিলেন। তার জামিনদার ছিলেন নেত্রকোনা কলেজের অধ্যক্ষ। এই বক্তব্যের সমর্থনে পর্যাপ্ত সাক্ষ্য রয়েছে। প্রয়োজনে সে সব তিনি হাজির করবেন।

এ বিষয়ে ট্রাইব‌্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান বলেন, মতিউর রহমান নামে নেত্রকোণার একজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা সেটাকে নথিভুক্ত করেছি। তবে অভিযোগের কোনো কিছুই আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখিনি। তার পরিচয়ও জানি না। আইন অনুসারে আমরা ধারাবাহিকভাবে এটা নিয়ে কাজ করবো।

মতিউর রহমানের পিতার নাম আব্দুর রহমান খান। তাদের বাড়ি সাতপাইয়ে। তিনি বর্তমানে নেত্রকোণা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক। প্রায় তিন মাস আগে মতিউরকে সভাপতি করে নতুন কমিটি হয়। এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি। ভারপ্রাপ্ত হিসাবে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। নতুন কমিটির সভাপতি-সম্পাদকের নাম ঘোষণা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি এখনো হয়নি। একাত্তর সালের আগে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে থাকলেও একাত্তরে পাকিস্তান বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে মতিউর আল বদর বাহিনীতে যোগ দেন বলে শামছুজ্জোহার দাবি।

অভিযোগে মুক্তিযোদ্ধা শামছুজ্জোহা আরও বলেন, একাত্তরে দুই বার তার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। প্রথমবার ২০ এপ্রিল রাজাকার সৈয়দ হাফিজ উদ্দিন, সৈয়দ সোনা মিয়ার নেতৃত্বে ভোলা মিয়া, আল বদর শহীদুল্লাহ পিন্টু ও আব্দুর রহিম ফরাজী হামলায় অংশ নেন। তারা এসে বাড়ির মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। দ্বিতীয়বার পিন্টু-ফরাজী-ভোলা এলেও নেতৃত্বে ছিলেন আল বদর নেতা মতিউর রহমান খান। ওই দিন রাজাকার-আল বদররা আমার বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙচুর করে আগুন দিয়ে দেয়।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বাড়ি ফিরে এসব ঘটনা জানতে পেরেছেন জানিয়ে শামছুজ্জোহা বলেন, ‘আমি বাড়ি ঘর লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় জড়িত ওই রাজাকার-আল বদরদের বিচার চাই।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!