• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আইন লঙ্ঘন করে স্বপদে বহাল চেয়ারম্যান!


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২৬, ২০১৭, ১১:৩৬ এএম
আইন লঙ্ঘন করে স্বপদে বহাল চেয়ারম্যান!

ঢাকা: মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নতুন করে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণ আইনের লঙ্ঘন। তা সত্ত্বেও তৃতীয়বারের মতো স্বপদে বহাল রয়েছেন পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান।

অভিযোগ উঠেছে, কোন ক্ষমতাবলে মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন ৬ বছর ধরে জনগুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন? অথচ তার পদের বৈধতা চ্যালেঞ্চ করে দেশের উচ্চ আদালত একাধিক মামলা বিচারাধীন।

তার বিরুদ্ধে আদালত অবমানার অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা চলমান। তিনি আদালতের আদেশ পালন করেন না বলেই সংক্ষুব্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এ মামলাগুলো দায়ের করেছেন। শুধু উচ্চ আদালতেই নয়, দেশের বিভিন্ন জেলায়ও তার বিরুদ্ধে মামলার খবর পাওয়া গেছে। তিন বছর মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার নিয়ম থাকলেও তিনি ৩য় বারের মতো এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন।

এদিকে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় নতুন করে চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব গ্রহণ আইনের লঙ্ঘন।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অধিনে কর্মরত  শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে পারবেন না। এমন আইনের বৈধতা চ্যালেঞ্চ করেও তার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা চলমান। এই আইনটি কালো আইন উল্লেখ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যাক্তিসহ এই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পল্লী বিদ্যুত শ্রমিকলীগ। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ এনে প্রচার প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে এই সংগঠনের নেতারা। সারাদেশের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ক্রয় করার বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। যেটি বিভিন্ন শ্রেনীর জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন দেখা গেছে।তবে এসকল বিষয়ে কথা বলতে চেয়ারম্যান ও মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা দহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করা হয়েছে। তাদেরকে পাওয়া যায়নি।

সকল মামলার অন্যতম একটি হলো এই প্রতিষ্ঠানের ছয় কর্মীকে বরখাস্ত করার কারণ জানতে চেয়ে তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রংপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ এর কর্মচারী আবুল খায়ের, আলমগীর হোসেন, তৈয়ব আলী, ফখরুল আলম, মো. মাসুদ রানা ও মোস্তাফিজুর রহমানকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সাময়িক বরখাস্ত করে। সে আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্চ করে হাইকোর্টে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে আদালত এ আদেশ দেন। সে রুলের এখনো নিষ্পত্তি হয়নি। এ মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, লাইনম্যান সাফিয়ার রহমানকে রংপুর থেকে সিলেটে বদলি করায় ঘটনাকে কেন্দ্র মানববন্ধন করে ঐ কর্মীরা। এ কারণে রংপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ম্যানেজার সোহরাব হোসেন এই ছয়জনকে সাময়িক বরখাস্ত করেন এই চেয়ারম্যান। পরে এদেরকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে চায় সমিতি। আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ম্যানেজার এই ছয়জনসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করে। শুনানি শেষে আদালত তার বিরুদ্ধে রুল জারি করেন।

এদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের একান্ত সচিব (পিএস) হিসেবে কাজ করছেন লক্ষীপুরের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার সফিক উদ্দিনের ছেলে মো. খালিদ হোসেন। তিনি তিন বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এমনকি চেয়ারম্যান বিষয়টি জানার পরেও খালিদকে বিভিন্নভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে চলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া পিএস’র স্ত্রী খালেদাকে পদোন্নতি দিয়ে চেয়ারম্যান তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর সচিবালয়ে পদায়ন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পল্লী বিদ্যুৎ শ্রমিক কর্মচারী লীগ একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এতে স্বাক্ষর করেছেন সংগঠনের সভাপতি এনামুল হক।

অভিযোগে বলা হয়, খালিদ হোসেন লক্ষীপুর সদর উপজেলার ৪ নং চর রুহিতা ইউনিয়নের কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার শফিক উদ্দিনের ছেলে এবং লক্ষীপুর সদর থানার যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি মুরাদ হোসেনের আপন ছোট ভাই। বর্তমান সরকার যেখানে শত প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্রের মধ্যেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যানের সব কিছু জানার পরও পিএস হিসাবে খালিদকে কোন উদ্দেশ্যে নিয়োজিত রেখেছেন তা’ তদন্তের দাবি করেন সংগঠনটি।

এতে আরো বলা হয়, খালিদ চেয়ারম্যানের প্রশ্রয়ে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা/কর্মচারীদের উপর নানামুখী অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহল থেকে অবাধ দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বেচ্ছাচারিতা ইত্যাদি সম্পর্কে লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ এমনকি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের পরও বর্তমান চেয়ারম্যান তাঁকে বেষ্ট কর্মকর্তা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন রাজাকার ছেলেকে ও যুদ্ধাপরাধীর ভাইকে রক্ষায় মরিয়া হয়েছেন এবং তিনি বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে জামায়াত-বিএনপি ও যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদেরকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করেছেন।

অভিযোগ বলা হয়েছে, বর্তমান চেয়ারম্যান জেনেশুনে সচেতনভাবে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের হার্ট বলে খ্যাত ঢাকার উপকণ্ঠের সকল পবিস যেমন-ঢাকা-১, ঢাকা-২, নারায়নগঞ্জ-১ ও ২, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা-১, টাঙ্গাইল এসব এলাকায় জামাত-বিএনপির কর্মীসমর্থকদেরকে পদায়ন করেছেন।

এছাড়া পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো যেমন- মানব সম্পদ, প্রধান প্রকৌশলী প্রকল্প/প ও প, নির্বাহী পরিচালক, সদস্য পবিস ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি পদে জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত কর্মকর্তাগণকে পদায়ন করেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান অত্যন্ত সুকৌশলে আওয়ামীপন্থী কর্মকর্তা/কর্মচারীদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে নির্মূল করছেন। আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে তিনি অসংখ্য কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন বলে অভিযোগ তাদের।

বর্তমান চেয়ারম্যান ও তার পিএসসহ অন্যান্য বিতর্কিত কর্মকর্তাগণের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগসমূহ জরুরি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা না নিলে বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতে অর্জন নস্যাৎ হয়ে যেতে পারে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমএইউ

Wordbridge School
Link copied!