• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আইনভঙ্গে বিদেশি কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার কর্তারা


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৩, ২০১৭, ০১:০০ পিএম
আইনভঙ্গে বিদেশি কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার কর্তারা

শুল্কমুক্ত সুবিধায় নিয়ে আসা গাড়ি ব্যবহারে বাংলাদেশের আইন ভঙ্গ করায় বিদেশি কূটনীতিক ও সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়ম হওয়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তো বটেই, সংস্থাগুলোর বর্তমান প্রধানদেরও জবাবদিহিতার আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে এ সংস্থা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউএনডিপির শীর্ষ কর্মকর্তাদের শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরে তলব করা হয়েছে। কয়েকজন এসে তাদের কর্মকর্তাদের শুল্ক আইন ভঙ্গের বিষয়ে জবাব দিলেও কেউ কেউ আরো সময় নিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট শুল্ক গোয়েন্দারা।

সর্বশেষ, গত সোমবার উত্তর কোরিয়ার কূটনীতিকের নামে মিথ্যা ঘোষণায় আনা একটি রোলস রয়েস ঘোস্ট মডেলের দামি গাড়ি আটক করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এর আগে গত ১ জানুয়ারি রাজধানীর গুলশানের ইংলিশ ইন অ্যাকশনের অফিস থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কর্মকর্তা জুনিয়র প্রফেশনাল মিজ নিসকে জ্যানসেনের পাজেরো জিপ, গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ইউএনডিপির সাবেক কর্মকর্তা কিশোর কুমার সিংয়ের ব্যবহৃত একটি বিলাসবহুল গাড়ি ও গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা থেকে জব্দ করা হয় ইউএনডিপির সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. স্টিফেন প্রিজনারের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা মিতসুবিসি পাজেরো মডেলের বিলাসবহুল আরেকটি গাড়ি আটক করেন শুল্ক গোয়েন্দারা। এভাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩৯টি গাড়ি এ পর্যন্ত আটক করেছেন তারা।

শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, কারনেট সুবিধায় এসব গাড়ি নিয়ে আসার প্রধান শর্ত হচ্ছে ব্যবহার শেষে ওই কর্মকর্তা দেশে ফেরার সময় শুল্ক অধিদফতরকে অবহিত করে নিজ দেশে গাড়িটি ফেরত নিয়ে যাবেন। আর যদি গাড়ি তিনি হস্তান্তর বা বিক্রি করতে চান তাহলে সরকারি প্রচলিত বিধি অনুযায়ী যথাযথ শুল্ক পরিশোধ সাপেক্ষে তা হস্তান্তর করা যাবে। কিন্তু শুল্ক অধিদফতরকে অবহিত না করেই এসব গাড়ি গোপনে হস্তান্তর অথবা বিক্রি করে দিয়েছেন এসব কর্মকর্তা ও বিদেশিরা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রবাসীরাও আছেন এমন তালিকায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বলেন, ‘এ পর্যন্ত আমরা ৩৯টি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করেছি। এসব গাড়ির মালিকদের অধিকাংশই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বিভিন্ন বিদেশি নাগরিক। তারা দেশে আসার সময় শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি নিয়ে আসেন, কিন্তু ফেরত যাওয়ার সময় গাড়িগুলো নিয়ে না গিয়ে শুল্ক কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করেই থার্ড পার্টির কাছে বিক্রি করে দেন।’

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দাতা সংস্থা, এনজিও কিংবা কূটনৈতিক মিশনে চাকরি করছেন এমন ব্যক্তিরাও শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি নিয়ে আসেন। তাদের অনেকে আইন ভঙ্গ করে শুল্ক না দিয়ে এসব গাড়ি অন্যের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই শুল্ক গোয়েন্দাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। সম্প্রতি আমরা এসব গাড়ি জব্দের মিশনে নেমেছি। এ পর্যন্ত তিনটি উন্নয়ন সংস্থার ও একজন কূটনীতিকের গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। আরো বেশ কিছু গাড়ির ব্যাপারে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলোকেও পর্যায়ক্রমে আটক করব।’

এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কী নিচ্ছেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যিনি শুল্ক আইনসহ বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ভঙ্গ করছেন তিনি চলে গেলেও তার প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের প্রধান আছেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানের সনদের ভিত্তিতেই তাকে কাস্টমস থেকে পাশবুক দেয়া হয়েছে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরও এখানে দায় রয়েছে। যদি কোনো কারণে কোথাও কোনো গরমিল হয়, শুল্ক ফাঁকি হয়, মিশন প্রধান নিজে দায়িত্ব নিয়ে সেটা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন সেটাই নিয়ম। তাই আমরা শুধু ব্যবহারকারীকে নয়, মিশনের প্রধানকেও তলব করছি। তাদের বক্তব্য নিচ্ছি। তারা কী দায়িত্ব পালন করছেন, সেটিও আমরা খতিয়ে দেখছি।’

তিনি বলেন, ‘গাড়ি ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাশবুকের বাইরে বাড়তি কোনো সুবিধা নিয়েছেন কি না সেটাও তদন্ত করা হচ্ছে। শুল্ক আইন ভঙ্গের সঙ্গে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও সামনে চলে আসছে।’

মইনুল খান আরো বলেন, ‘যারা চলে গেছেন তারা না এলে তাদের সদর দফতর আছে। তাছাড়া প্রতিটি সংস্থারই নিজস্ব নিয়মনীতি ও আইন রয়েছে। কেউই সেই আইনের ঊর্ধ্বে নন। কেউ তার পূর্ববর্তী কর্মস্থলে অপরাধ করে থাকলে সেটা প্রমাণিত হলে বর্তমান কর্মস্থলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। এছাড়া তাকে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশে কালো তালিকাভুক্ত করে রাখা হবে। বিষয়টি জানিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বরাবরেও চিঠি পাঠিয়ে দেয়া হবে, যাতে সে অন্য কোনো দেশে গিয়েও আর এ ধরনের কাজ করতে না পারে।’

এদিকে গত ৭ ডিসেম্বর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের শুল্ক আইন ভঙ্গের ঘটনায় স্পষ্টই প্রতীয়মান হয় যে, তাদের মধ্যে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার চর্চার অভাব রয়েছে। বাংলাদেশের শুল্ক আইন ভঙ্গ করার মাধ্যমে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর সাবেক কর্মকর্তারা জেনেভা কনভেনশনের স্বীকৃত রীতিনীতিও নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘন করেছেন।’
এ ঘটনায় টিআইবি উদ্বেগ ও ক্ষোভ জানিয়ে আইনগত প্রক্রিয়ায় এসব শুল্ক আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সব ধরনের সহায়তা দিতে উন্নয়ন সহযোগীদের প্রতি আহ্বান জানায়। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই


 

Wordbridge School
Link copied!