• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গ


শেখর দত্ত অক্টোবর ২২, ২০১৬, ১১:১৭ এএম
আওয়ামী লীগ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র প্রসঙ্গ

উন্নয়ন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। হবেই না বা কেন? অব্যাহত উন্নয়নের ধারায় রয়েছে দেশ। জিডিপি অর্জনে ধারাবাহিকতা, নিু-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, সামাজিক উন্নয়ন সূচকের বিস্ময়কর অগ্রগতি, গরিবী কমতে থাকা, বার্ষিক গড় আয়ের ক্রমাগত বৃদ্ধি, ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা প্রভৃতি জনগণকে আশার আলো দেখাচ্ছে। এরই মধ্যে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফরে এসে বিভিন্ন খাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তার ঘোষণা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে যোগদানের ভেতর দিয়ে উন্নয়ন ও অগ্রগতির সম্ভাবনা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। সরকারের প্রতি ক্রিটিক্যাল পত্রিকাগুলো পর্যন্ত হেডিং করছে, ‘নতুন যুগের সূচনা করবে’, ‘স্বপ্ন ছোঁবে অর্থনীতি’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই অবস্থার মধ্যে দারিদ্র্য কমানোর সাফল্য দেখতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিং ঢাকা এসেছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন নিয়ে তিক্ততার প্রেক্ষাপটে সুদীর্ঘ ৯ বছর পর বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের এবারের ঢাকা সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। পালিত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস’। দিবসটি এ বছর ঢাকায় পালন করেছে বিশ্বব্যাংক। প্রসঙ্গত দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সাফল্যের জন্য যেসব দেশ বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় হতে পারে, সেসব  দেশেই ওই বিশেষ দিনটি পালনের জন্য যান বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। দারিদ্র্য বিমোচনে ওই দেশের সাফল্য অর্জনের অভিজ্ঞতা ও পদক্ষেপগুলো বিশ্বব্যাপী তুলে ধরাই সফরের মাধ্যমে দিবস পালনের উদ্দেশ্য। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে উদাহরণ স্থানীয় হওয়ায় এবারে তিনি ঢাকা এসেছেন। গত বছর গিয়েছিলেন আফ্রিকার ঘানায়।

ওই দিবসটি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিশেষ অতিথি বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হতদরিদ্রের হার কমাতে বাংলাদেশ যে ঈর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে, তা পুরো বিশ্বকেই আশাবাদী করে তুলেছে। তিনি সাফল্যের ধারা পর্যবেক্ষণ করে আশাবাদ ব্যক্ত করে আরো বলেন, বাংলাদেশ এই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখবে। পাশাপাশি সারা বিশ্বও একই কাজ করবে। সমৃদ্ধ আগামীর জন্য আমরা বাংলাদেশের পাশেই থাকব। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক ২০১৭-১৮ সালের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহায়তা (আইডিএ) ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি করবে এবং অপুষ্টি নিরসনে অতিরিক্ত ১ বিলিয়ন ডলার দেবে বলে ঘোষণা করেছে।

উন্নয়নের ক্ষেত্রে সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকা এবং আরো সাফল্য অর্জনের বিপুল সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে গণতন্ত্রের বিষয়টি আলোচনায় সামনে এসেছে। আসাটাই স্বাভাবিক। কেননা সুদীর্ঘ বছরের সংগ্রামের ভেতর দিয়ে দেশের মানুষ এটি সুস্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে, আমরা উন্নয়নও চাই, গণতন্ত্রও চাই। ভঙ্গুর গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নয়, টেকসই চাই। একটিকে বাদ দিয়ে বা একটিকে আরেকটির অধীনস্থ করে আমরা অগ্রসর হতে চাই না। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমান বিশ্বে উদাহরণ স্থানীয় হওয়ার মতো সাফল্য থাকলেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের যেমন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তেমনি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারা সত্ত্বেও গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ বিরাজমান।
এক্ষেত্রে বলতেই হয়, বর্তমান দিনগুলোতে জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা যতটা ভাবি বা চিন্তা করি, তার চেয়ে গণতন্ত্রের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আমরা বেশি স্পর্শকাতর। এমনটা হওয়ার কারণ বহুবিধ এবং এই ক্ষুদ্র কলামে তা আলোচনার বিষয়ও নয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায়, মানুষ যখন দেখে দেশের দুই প্রধান দলের এক দল বিএনপি পার্লামেন্টের বাইরে এবং নেত্রী খালেদা জিয়ার কোনো পদ নেই, গাড়ি-বাড়িতে নেই জাতীয় পতাকা; তখন গণতন্ত্রের সমস্যার বিষয়টা বেশি সামনে আসাটাই স্বাভাবিক। ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, যে যাই ভাবুক কিংবা যার অবস্থান যাই থাকুক না কেন এটাই বাস্তব যে, মানুষ এখনো চায় নির্বাচন ও পার্লামেন্ট এই দুই দলের অংশগ্রহণের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলুক এবং গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকুক।

বলাই বাহুল্য, এই চাওয়ার বিষয়টা অন্যান্য সব ঐতিহাসিক ও চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক কারণের সঙ্গে মিলেমিশে বাধাচ্ছে গোল। থাকছে জাতির মধ্যে বিভক্তি। প্রশ্নটা এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে, তাতে এক কথায় বলা যায়, পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র কার্যকর ও অগ্রসর হবে কীভাবে? এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রীতিনীতি ও সংস্কৃতি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে আমাদের সংবিধান। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, বর্তমানে আমাদের নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সংবিধান যে রূপ নিয়েছে তা যেমন হয়নি সামরিক ফরমানে এক কলমের খোঁচায়, তেমনি রাজনৈতিক আন্দোলনের তাৎক্ষণিক চাপের ভেতর দিয়েও।

এক্ষেত্রে ছিল যেমন অভিজ্ঞতা, তেমনি দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ২০০৮ সালের সব দলের অংশগ্রহণ এবং ফলাফল মেনে নেয়ার ভেতর দিয়ে প্রতিষ্ঠিত পার্লামেন্টে সংবিধানের নিয়মনীতির ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধিত হয়ে বর্তমানের রূপ নিয়েছে। আরো বিবেচ্য বিষয় হলো, এই রূপ ও পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত রীতিনীতি এবং সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু এটা মেনে নিয়ে অগ্রসর হওয়ার ক্ষেত্রেই সৃষ্টি হয়েছে সমস্যা। বিএনপি-জামায়াতের ২০ দলীয় জোট এটা মেনে নিতে চায়নি। আবার নিজেদের দাবি, নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট ফর্মুলাও উত্থাপন করতে পারেনি। বিএনপি চলে গেছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টেলিফোনে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণের আহ্বানও প্রত্যাখ্যান করে সম্পূর্ণ বয়কট আর বর্জনের লাইনে।

এই বিচারে সমস্যটা সৃষ্টি করেছে বিএনপি। এই সমস্যাকে আরো জটিল করেছে উল্লিখিত বয়কট বর্জনের সঙ্গে মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কার্যত বিরোধিতা করে, আর জামায়াত ও পাকিস্তানি মদদে বারবার গৃহযুদ্ধ বাধানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়ে। উপরোন্তু অতীতে ক্ষমতায় থাকতে হাওয়া ভবনের অপতৎপরতাসহ বিভিন্ন কারণে উগ্রবাদী জঙ্গিদের মদদ ও উসকে দিয়ে দেশি-বিদেশিদের হত্যার ঘটনার অভিযোগ থেকেও বিএনপি নিজেকে পৃথক করতে পারছে না। এক্ষেত্রে আরো একটি কথা বলা প্রাসঙ্গিক হবে যে, আমাদের মতো দেশগুলো, এমনকি বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের অভিজ্ঞতায়ও দেখা যায় যে, ক্ষমতার পরিবর্তন হলে আগে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় এবং এমনকি গ্রেফতারের ঘটনাও ঘটে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকেও অতীতে ক্ষমতা হারিয়ে সেই অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়েছে। অভিপ্রেত বা অনভিপ্রেত, সঠিক বা বেঠিক যাই হোক এই ধরনের মামলা আমাদের মতো  দেশগুলোতে যেন স্বাভাবিক।

তাই বলা যায়, বিএনপি যদি ২০১৪ ও ২০১৫ সালের পর পর দুইবার যুদ্ধংদেহী মনোভাব নিয়ে আগুন সন্ত্রাসের দিকে দেশকে ঠেলে না দিত, তবে কিন্তু বিএনপি নেতাদের এত সব মামলার মধ্যে পড়তে হতো না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা  গেছে, মামলা হলে আন্দোলন আরো জোরদার হয়। উল্লিখিত সব কারণে বিএনপি একান্ত দোষী বলেই মানুষ বিএনপির পক্ষে মাঠে নামে না। আর বিদেশি শক্তিধর দেশগুলোর কাছে নির্বাচন ও গণতন্ত্র নিয়ে ক্রমাগত সরকারের বিরুদ্ধে নালিশ করে গেলেও বিএনপি কোনো ন্যূনতম সমর্থনও পাচ্ছে না। বিএনপি নামে বড় দল হলেও কাজে ‘কাগুজে বাঘ’ হয়ে যাচ্ছে। আম-ছালা সব যাচ্ছে বিএনপির। পর্যবেক্ষণে এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, দলের এই বিপর্যয়ের জন্য বিএনপির তৃণমূল থেকে ওপরের পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বড় একটা অংশ এবং ব্যতিক্রম বাদে বিএনপির সুশীলরা এক নম্বর নেত্রী খালেদা জিয়া এবং বিশেষভাবে দুই নম্বর নেতা মামলা মোকাবিলা করার সৎ সাহস না থাকা স্বেচ্ছাপ্রবাসী তারেক জিয়াকেই অভিযুক্ত করছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, বিএনপি যে চরম ও মারাত্মক ভুলগুলো করেছে এবং জামায়াতকে সঙ্গে রেখে এখনো করে চলেছে, দায় ভোগ করে তা থেকে নিজেদের নিজেদেরই উদ্ধার করতে হবে। যদি পারে তবে বিএনপির যেমন তেমনি গণতন্ত্রের বিদ্যমান সমস্যারও সমাধান হবে। সমস্যা সৃষ্টি করেছে বিএনপি, সমাধানও করতে হবে বিএনপিকেই। নতুবা বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে গণতন্ত্র যাবে এগিয়ে, বিএনপি পড়ে থাকবে ঠিক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির মতো ধ্বংসস্তূপ হয়ে। গণতন্ত্র ও উন্নয়ন যাবে এগিয়ে। প্রসঙ্গত একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে কম-বেশি গণসমর্থন নিয়ে যেমন নতুন দলের আবির্ভাব হয়েছে, তেমনি দলের বিলুপ্তি বা প্রায় বিলুপ্তিও ঘটছে। তাই বিএনপি কি করবে, তা বিএনপির নেতৃত্বকেই ভাবতে হবে।

এখানে বলতেই হয় যে, যখন নানা বাধাবিঘ্ন সত্ত্বেও উন্নয়ন এবং সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে গণতন্ত্র এগিয়ে যাচ্ছে, তখন গণতন্ত্র ও উন্নয়নের আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে নানা ধরনের চিন্তাভাবনা দাঁড়াচ্ছে। কয়েক দিন আগে বরেণ্য কবি  সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যুর পর শেষ শ্রদ্ধা জানতে গিয়েছিলাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। পথে দেখলাম একটা বিশাল সরকারি ব্যানার। তাতে লেখা- ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র শেখ হাসিনার মূলমন্ত্র’। কয়েক দিন পর এমনি অন্তত আরো একটি ব্যানার চোখে পড়ল। এই ধরনের স্লোগান মিছিলেও তোলা হচ্ছে। এমন একটি ধারণাও কোনো কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা মহল থেকে তোলা হচ্ছে যে, আমাদের মতো দেশে উন্নয়নের অবাধ অগ্রগতির জন্য গণতন্ত্রকে সংকুচিত করার প্রয়োজন পড়ে। ধারণা করা যায়, ওই চিন্তা থেকে উল্লিখিত স্লোগানটি উত্থাপিত হয়েছে।

উল্লিখিত স্লোগান সংবলিত ব্যানারটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ল, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর আমলের শেষ দিকের স্লোগানটি। ‘বঙ্গবন্ধুর মূলমন্ত্র শোষিতের গণতন্ত্র’। এখানে বলতেই হয় গণতন্ত্রের সঙ্গে নানা বিশেষণ যুক্ত করার প্রবণতা কিন্তু কেবল আমাদের দেশে নয়, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে রয়েছে। সেনাশাসক জিয়ার সময় ‘প্রকৃত গণতন্ত্র’ শব্দটি আমদানি করা হয়েছিল। তাছাড়া অংশীদারিত্বমূলক গণতন্ত্র, প্রলেতারিয়েত গণতন্ত্র, সাম্যভিত্তিক গণতন্ত্র প্রভৃতি শব্দগুলো হরহামেশা ব্যবহৃত হয়ে থাকে। প্রশ্ন হলো, এভাবে বিশেষণ যুক্ত করে গণতন্ত্রকে শর্তযুক্ত করা কিংবা কোনো কিছুর অধীন করা কি আদৌ যথাযথ ও সঠিক? একেবারেই সঠিক বলে মনে হয় না। তাতে গণতন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করা হয় এবং তা গণমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। শেষ পর্যন্ত তার ফলাফল হয় খারাপ। 

প্রসঙ্গত কেবল গণতন্ত্র নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত আমাদের জাতীয় চারনীতির কোনোটিই কোনোটির অধীনস্থ বা শর্তযুক্ত নয়। প্রতিটি মূলনীতি নিজ অবস্থান নিয়েই গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত এবং এক ও অভিভাজ্য। একটু খেয়াল করে বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতা পড়লেই দেখা যাবে যে, বঙ্গবন্ধু তখনকার সমাজতন্ত্র-ধনতন্ত্র ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঠাণ্ডাযুদ্ধ যুগে জাতীয় বাস্তবতায় গণতন্ত্রকে শর্তাধীন করার জন্য নয়, গণতন্ত্রকে শত্র“দের অপব্যবহার থেকে রক্ষা করার জন্য অন্তর্বতী ব্যবস্থা হিসেবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে নেমেছিলেন এবং তা থেকেই ‘শোষিতের গণতন্ত্র’ শব্দটি সামনে এসেছিল। যার পরিণাম ভালো হয়নি। আর বর্তমান দিনগুলোতে পরাজিত শত্রুরা যখন গণতন্ত্রকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিতে অতিতৎপর, তখন কষ্টার্জিত গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্যই বিগত নির্বাচনের ভেতর দিয়ে বর্তমানে গণতন্ত্র এমন রূপ পেয়েছে। যদি ‘উন্নয়নের গণতন্ত্র’ স্লোগানটি তোলা হয় তবে কিন্তু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিএনপির দোষের দায়টা গিয়ে পড়ে জাতীয় রাজনীতির মূলধারার প্রধান দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপরেই। কেননা মনে হয় নিজেদের ক্ষমতায় রেখে উন্নয়নের জন্য আওয়ামী এমন নির্বাচন করেছে।

নিঃসন্দেহে বর্তমানে উন্নয়ন নিয়ে জনগণের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা সৃষ্টি হয়েছে। এই উৎসাহ-উদ্দীপনাকে সর্বোতভাবে এগিয়ে ইপ্সিত লক্ষ্যের দিকে জাতিকে অগ্রসর করে নিতে হবে। 
এক্ষেত্রে অতি উৎসাহ থেকে ভ্রান্তিমূলক স্লোগান উত্থাপন পরিহার করার প্রয়োজন রয়েছে। অতি সব সময়েই খারাপ ফল বয়ে আনে। সবশেষে ক্ষুদ্র এ কলামে বলতে হয়, যখন উন্নয়ন ধারাবাহিকভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং সম্ভাবনার দিগন্ত ক্রমে প্রসারিত হচ্ছে আর সেই সঙ্গে গণতন্ত্রও অতীতের মতো অবৈধ হস্তক্ষেপকে পেছনে ফেলে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে; তখন জনগণের ভাগ্যোন্নয়ন ও বিশ্বের বুকে জাতিকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য এ দুয়ের বাধাবিঘ্নগুলোকে দূর করা জাতীয় দেশপ্রেমিকের কর্তব্য। দেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ আসন্ন সম্মেলনের ভেতর দিয়ে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের বাধাবিঘ্নগুলো দূর করার কর্মসূচি নিয়ে যথাযথভাবে অগ্রসর হোক এবং জাতির জীবনে সাফল্যের দুয়ার অবারিত হোক, এটাই আজকের কামনা।

লেখক : রাজনীতিক, কলাম লেখক
 

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব ভাবনার প্রতিফলন। সোনালীনিউজ-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে লেখকের এই মতামতের অমিল থাকাটা স্বাভাবিক। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য সোনালীনিউজ কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না। এর দায় সম্পূর্ণই লেখকের।

Wordbridge School
Link copied!