• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু


বিশেষ প্রতিনিধি অক্টোবর ২৪, ২০১৬, ০৭:২৯ পিএম
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু

রাজনীতি এখন অনেকটাই নির্বাচনমুখী। আওয়ামী লীগের সম্মেলনেও প্রতিফলিত হয়েছে নির্বাচনী পরিকল্পনার ছক। আর সম্মেলনের মাধ্যমেই নির্বাচনমুখী নেতৃত্ব বাছাই শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনে দলকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারেন, এমন নেতাদেরই জায়গা হচ্ছে নতুন কমিটিতে। 

রোববার (২৩ অক্টোবর) শেষ হলো আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। এ দিন শেখ হাসিনাকে অষ্টমবারের মতো সভাপতি পুনঃনির্বাচিত করেন দলের কাউন্সিলররা। আর প্রধমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন এক সময়ের ডাকসাইটের ছাত্রনেতা, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলের ২০তম সম্মেলনে গঠিত কমিটিই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে নেতৃত্ব দেবে। তাই নেতৃত্ব বাছাই প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও নির্বাচনকেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কাজপাগল ও ক্লিন ইমেজ, সৎ ও দক্ষ এবং তৃণমূলের নেতাকর্মীদের পছন্দের নেতারাই জাতীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছে।

গেল ২২ ও ২৩ অক্টোবর দুদিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলনের শেষ দিনে ৮১ সদস্যের কার্যনির্বাহী সংসদের ২৩ পদের নেতা নির্বাচন করা হয়েছে। অর্থাৎ দলের কার্যনির্বাহী সংসদের আংশিক নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে সভাপতি কমিটির বাকি সদস্যদের নাম ঘোষণা করবেন।

অভিজ্ঞরা বলছেন, যারা দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ, আর যারা বিগত সময়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে গেছেন তাদেরই পদোন্নতি হয়েছে। 

তবে দলের সভাপতিমণ্ডলীতে পাঁচজনের পদোন্নতি হলেও বাদ পড়েছেন নুহ-উল-আলম লেনিন ও সতীস চন্দ্র রায়। বিগত সময়ে দলের জন্য নিষ্ক্রিয় কর্মকাণ্ডের জন্যই তারা পদচ্যুত হন।

ঘোষিত কমিটিতে পদোন্নতি পেয়েছেন- নুরুল ইসলাম নাহিদ, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। এসব নেতা প্রত্যেকেই পেয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর পদ। আর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা আবদুর রহমান। এরা সবাই দলের জন্য ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তাই পুরষ্কার হিসেবে পেয়েছেন দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী পদ।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারেন এমন সম্ভাব্য নেতাদের বিষয়েও মূল্যায়ন চলছে। দলের হাইকমান্ড মনে করে, তরুণ নেতৃত্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করেছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। 

তবে যে কয়েকজন নিজেদের কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়েছেন বা নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি তাদের আর স্বস্থানে রাখা হবে না নতুন কমিটিতে। এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখেই কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা নির্বাচন হবে। যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব পাবেন তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করবেন এমনটি মাথায় রেখেই তাদের দায়িত্ব দেয়া হবে।

সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে সরকারের উন্নয়ন চিত্র ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার উল্লেখ আছে। ‘ভিশন-২০৪১’ লক্ষ্য ধরে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। এটাকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারও বলা চলে। 

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেক্ষেত্রে ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন নেতৃত্ব বাছাই শুরু হয়েছে, তারাই আগামী নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করবে। সেই নেতৃত্বের হাত ধরে আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ জয়ী হবে। 

আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, প্রতিটি নির্বাচনের আগে নিজস্ব দলীয় টিম নির্বাচনী এলাকাগুলোতে যে জরিপ চালায় তা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। দলের নির্বাচনী পরিচালনা কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ভোটারদের অবস্থান, মানসিকতা, দলের প্রতি সমর্থনের হার, প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহ শেষে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দলীয় হাইকমান্ডের কাছে তুলে ধরা হবে। কেবল নিজ দলের প্রার্থীদেরই নয়, প্রতিপক্ষ দল এবং প্রার্থীদের খবরও নেয়া হচ্ছে।

পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে, দল ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপও নির্বাচনমুখী। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে জনসম্পৃক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলোকে। ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ১০ টাকায় চাল বিক্রি কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন। ইতিমধ্যে ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পথে দেশ অনেকদূর এগিয়েছে। উদ্বোধন হয়েছে পায়রা বন্দর। রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র দৃশ্যমান উন্নয়নও সরকারকে আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে।
 
২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ১৯তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই কমিটির মেয়াদ গত ২৯ ডিসেম্বর শেষ হয়। পরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ বাড়ানো হয়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের ৬ মাস পর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের ১৮তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলকে ঢেলে সাজান দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

ওই সময় দল থেকে ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগের বেশ কিছু হেভিওয়েট নেতা। তাদের স্থলে অপেক্ষাকৃত নতুনদের দিয়ে দল সাজানো হয়। শুধু তাই নয়, পরবর্তী সময়ে ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত দলের ১৯তম জাতীয় সম্মেলনেও দুয়েকটি পদে রদবদল করে ওই কমিটিকেই বহাল রাখা হয়। 

ওই কমিটির নেতারাই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নির্বাচন বয়কট- নির্বাচনবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রাজপথে আন্দোলন মোকাবিলায় ছিলেন। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন-অবরোধ-হরতালের মধ্যেও সারা দেশের প্রায় সব সাংগঠনিক ইউনিয়ন-উপজেলা এবং জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে ঢেলে সাজিয়েছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআরসি

Wordbridge School
Link copied!