ঢাকা: আদিকাল থেকেই বৃষ্টির সঙ্গে প্রেম মানুষের। অনেক রোমান্টিক স্মৃতি জড়িয়ে থাকে বৃষ্টি-বাদলের দিন ঘিরে। কত গান-কবিতা লেখা হয়। নগর জীবনে ছুটে চলা ব্যস্ত মানুষটাও বৃষ্টির দিনে তাকায় আকাশের দিকে। কখনও মনে মনে গুন গুন করে গেয়ে ওঠেন বৃষ্টিমাখা প্রিয় গান। কি রবিঠাকুর কি আধুনিক- সবাই বৃষ্টি ধারায় একাকার হয়ে যায়।
১। আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না॥
এই চঞ্চল সজল পবন- বেগে উদ্ভ্রান্ত মেঘে মন চায়
মন চায় ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥
মেঘমল্লার সারা দিনমান।
বাজে ঝরণার গান।
মন হারাবার আজি বেলা, পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়
মন চায় হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবিঠাকুর একজন অসাধারণ বর্ষা প্রেমিক ছিলেন। শতাধিক বর্ষার গান লিখেছেন। তাই বাদল দিনের গানের তালিকা করতে গেলে সেখানে স্বাভাবিকভাবেই কবি গুরুর লেখা গান সংখ্যা গরিষ্ঠের আসন পেয়ে যায়। বর্ষার দিনে কাজে কারো মন বসে না, এই চিরন্তন সত্য দিয়েই গানটির শুরু। আরেকটা গান বড় অদ্ভুত-
২। এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়।
এমন দিনে মন খোলা যায়--
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরোঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়॥
সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারি ধার।
দুজনে মুখোমুখি গভীর দুঃখে দুঃখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার--
জগতে কেহ যেন নাহি আর॥ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বর্ষার দিনে এই গান গুনগুন করেন বহু বর্ষা প্রেমিক, বহু রবীন্দ্র প্রেমিক। গানটি না শুনে শুধু গানের কথাও যদি কেউ পড়ে, সে এই গানের প্রেমে পড়তে বাধ্য।
৩। এই মেঘলা দিনে একলা
ঘরে থাকে না তো মন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।।
যুঁথী বনে ওই হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া।
হায় হায়রে দিন যায়রে
ভরে আঁধারে ভুবন
কাছে যাবো কবে পাবো
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।– হেমন্ত মুখোপাধ্যায়
অনেক পুরনো একটি গান। কিন্তু এতদিন পরেও আবেদন কিছু মাত্র কমেনি। চিরদিনের বৃষ্টির গানের তালিকায় এ গানটি পাকাপোক্ত আসন করে নিয়েছে।
৪। যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়…………….(।।)
এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়।
যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরি
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি। -শাওন
অসম্ভব জনপ্রিয় এ গানটি জনপ্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের লেখা। হুমায়ূন আহমেদের ছিল অসম্ভব রকমের বর্ষা প্রেম। তার অনেক লেখাতেই বৃষ্টি এসেছে। যতটুকু জানা যায় নুহাশ পল্লীতে বসেই এই গানটি লিখেছিলেন। এক বর্ষার রাতেই সেটি গেয়ে শোনান শাওন।
৫। বর্ষা মানে না ঝরছে জলধারা
জানি না জানি না কাটবে কি ঘনঘটা!
অনুনয় মানে না অবারিত মন-কথা
জানি না জানি না থামবে কি ঘনঘটা!
নির্ঝর গগনে অপলক চেয়ে রই
বিস্মৃত কবিতায়, আনকা পবনে;
মেঘলা কবেকার স্মৃতিময় বাতায়ন
বলে যায়, ‘তোমায় অনব ভালবাসি’!বর্ষা- শিরোনামহীন
‘শিরোনামহীন’ তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয় একটি ব্যান্ড। ‘বর্ষা’ গানটি ২০০৬ সালে বের হওয়া তাদের দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘ইচ্ছেঘুড়ি’ থেকে নেয়া। গানটির কথা ও সুর চমৎকার। বর্ষার দিনে শোনার মতই একটি গান।
৬। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান,
বানের জলে ভাসলো পুকুর ভাসলো আমার গান।
বন্ধু আইসোরে...
কোলেতে বসতে দেবো, মুখে দেবো পান।
ইষ্টি-কুটুম বৃষ্টি এলো সৃষ্টি হলো সুর,
ভালোবাসায় ভাসলো খেয়া— ঐতো পাখিপুর। বৃষ্টির গান- জলের গান
একটু ভিন্ন ধরণের বাদ্য যন্ত্র, গানের কথা, সুর নিয়ে এ গানটি গাওয়া হয়। অনেক জনপ্রিয়তা পেয়েছে গানটি। তাদের গানে পাওয়া যায় সোঁদা মাটির গন্ধ, টাপুর টুপুর বৃষ্টির সুর। যে ব্যান্ডের নাম ‘জলের গান’ বৃষ্টি নিয়ে তাদের গান থাকবে না, তা তো হয় না। গানটিতে চমৎকার বাঁশির সুর যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
ক্লাসিক ধারার এই গানগুলোর পাশাপাশি তরুণদের কাছে অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আরো অনেক গান। যেমন-
৭। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে তুমি নেই বলে
সময় আমার কাটে না
চাঁদ কেনো আলো দেয় না
পাখি কেনো গান গায় না
তারা কেনো পথ দেখায় না
তুমি কেনো কাছে আসো না....- আর্টসেল
আর্টসেল তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ব্যান্ড। বৃষ্টি নিয়ে তাদের একটিই গান। অসাধারণ লিরিকের জন্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। গানটির প্রেক্ষাপট বৃষ্টি ভেজা রাত আর সেই চিরন্তন আক্ষেপ। এই বর্ষায় আপনজন পাশে না থাকার বেদনা।
৮। বৃষ্টি ভেজা এই বেলায় আমি তো স্বাধীন
রংধনু রঙের মেলায় এলো নতুন দিন। বৃষ্টি- রাগা (এলিটা)
গানের শুরুতেই এক পশলা বৃষ্টি এসে যেন ভিজিয়ে দেয়। এরপর খুব দারুণ সুর দিয়ে শুরু হয় গান। এলিটা করিমের গাওয়া ‘বৃষ্টি’ অনেক জনপ্রিয়।
৯। চলো বৃষ্টিতে ভিজি- হাবিব
এই গানের টাইটেলটি এক জীবনে আমরা কতবারই না উচ্চারণ করেছি। যখনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে কাছের মানুষকে বলেছি, ‘চলো বৃষ্টিতে ভিজি।’
১০। বৃষ্টি নেমেছে আজ আকাশ ভেঙে
হাঁটছি আমি মেঠোপথে। এপিটাফ- অর্থহীন (সুমন)
বৃষ্টির দিনে ফেসবুকে একটু ঘোরাফেরা করলেই এই গানের লাইনগুলো স্ট্যাটাস হিসেবে পাওয়া যাবে। ‘অর্থহীন’ ব্যান্ডের গানগুলো অনেক দিন থেকেই শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয় আর ‘এপিটাফ’ তাদের মধ্যে অন্যতম।
বৃষ্টির দিনের গানের তালিকা করতে গিয়ে বেশ ধন্দেয় পড়তে হয়। কোনটা ছেড়ে কোনটা রাখি। আসুন জেনেই নেই অনেকের চোখে ভালোলাগা বৃষ্টি দিনের আরো কিছু গানের লাইন-
পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
আজি ঝড় ঝড় মুখর বাদল দিনে - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাদলা দিনে মনে পড়ে - হাবিব ওয়াহিদ
আমি বৃষ্টি দেখেছি - অঞ্জন দত্ত
একদিন বৃষ্টিতে ভিজে - অঞ্জন দত্ত
আমার সারাটা দিন মেঘলা আকাশ - শ্রীকান্ত আচার্য
শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হল আকাশে - ডিফারেন্ট টাচ
আষাঢ় শ্রাবণ মানে নাতো মন - লতা মুঙ্গেশকার
ওগো বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না - হৈমন্তী
আকাশ এতো মেঘলা - সতীনাথ মুখোপাধ্যায়
এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না - রুনা লায়লা
অনেক বৃষ্টি ঝড়ে তুমি এলে - রুনা লায়লা
একটু দাঁড়াবে কি - হাবিব ওয়াহিদ
আমি বৃষ্টির কাছ থেকে কাদঁতে শিখেছি - সুবীর নন্দী
ঝুম ঝুম বৃষ্টি - কুমার বিশ্বজিৎ
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর - সেলিম চৌধুরী
কখনো মেঘ ঘুঙুর পরে, নাচবে বলে - কবীর সুমন
বৃষ্টি ঝড়ে যায় - তৌসিফ
বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি - পার্থ
আজ এই আকাশ কালো হয়ে - অদিত
ধিন তানা - কণা
সোনালীনিউজ/এন
আপনার মতামত লিখুন :