• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আখেরি মোনাজাতে প্রথম পর্বের ইজতেমা সমাপ্ত


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ১৪, ২০১৮, ১২:১০ পিএম
আখেরি মোনাজাতে প্রথম পর্বের ইজতেমা সমাপ্ত

ঢাকা : ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে নিয়ে বিতর্ক ওঠায় এবার তার পরিবর্তে বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের ইমাম হযরত মাওলানা যোবায়ের হাসান বাংলা ভাষায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন।

হে আল্লাহ মুসলিম দেশগুলোকে হেফাজত করুন। মুসলমানদের এক শরীরে পরিণত করে দিন। মুসলমানদের দিলের মধ্যে মহব্বত প্রতিষ্ঠা করে দিন। হে আল্লাহ বিবাদ, মারামারি, হানাহানি খতম করে দিন। এ দুনিয়ার জীবনকে শান্তির জিন্দেগি, জান্নাতের জিন্দেগি বানায়ে দিন। হে আল্লাহ আমাদেরকে আপনার বন্দেগি করার তৌফিক দিন। আপনার প্রিয় হাবিবের (সা.) সুন্নাত অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তৌফিক দিন।

এভাবেই ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথমবারের মতো বাংলা ভাষায় আখেরি মোনাজাত পরিচালিত হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মোনাজাতের নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদের মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের।

মাওলানা জোবায়েরের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে আবেগ-আপ্লুত লাখো মুসল্লি ‘আমিন’ ‘আমিন’ ধ্বনিতে মুখরিত করে তোলেন টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা প্রাঙ্গণ। আখেরি মোনাজাতকে ঘিরেআশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লাগানো মাইকে সেই ধ্বনি তুরাগ নদের চারপাশের আরও বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) বেলা পৌনে ১১টায় আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। মুসল্লিরা প্রায় ৩৫ মিনিটের এই মোনাজাতে আল্লার দরবারে দু’হাত তুলে ফরিয়াদ জানান। মোনাজাতে ময়দান ও আশপাশের সড়কগুলোতে অবস্থান নেন লাখো মুসল্লি।

আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণে ব্যাকুল হয়ে ইজতেমা ময়দানে ছুটে আসা ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা অশ্রুসিক্ত নয়নে নিজ নিজ গুনাহ মাফ ও আত্মশুদ্ধির পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর সমৃদ্ধি, সংহতি, অগ্রগতি এবং দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ কামনা করেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বঙ্গভবনে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ইজতেমা প্রাঙ্গণে সশরীরে এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসভবন থেকে আখেরি মোনাজাতে শরিক হন।

এদিকে আখেরি মোনাজাতকে কেন্দ্র করে রোববার ভোর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। তবে এরপরও ভোরের কুয়াশা ও তীব্র শীত উপেক্ষা করে মোনাজাতে শরিক হতে দলে দলে হাজারো মানুষ পায়ে হেঁটে ইজতেমা ময়দানে পৌঁছান।

ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে বহু নারীও এসেছেন মোনাজাতে অংশ নিতে। তবে ময়দানে ঢোকার অনুমতি না থাকায় তারা আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ও আবাসিক ভবনের ছাদে অবস্থান নিয়ে এতে শরিক হন।

এদিকে ইজতেমার মাঠে পৌঁছাতে না পেরে হাজার হাজার মানুষকে কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর ও উত্তরা থেকেও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন।

আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ আশপাশের এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কারখানা, বিপণি বিতান ও অফিস ছিল বন্ধ। মোনাজাত শেষে ইজতেমাস্থল থেকে বাড়ি ফেরার সুবিধবার জন্য বিশেষ পরিবহনের ব্যবস্থা থাকলেও সবার একসঙ্গে বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়ায় টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী- কালীগঞ্জ সড়কের আহসান উল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।

চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার শুরু হবে তিন দিনের বিশ্ব এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এবারও বিশ্ব এজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি।

এবারে টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভি অংশ নিতে পারেন নি। ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভি গত বুধবার বাংলাদেশে এলেও তাকে নিয়ে বিতর্ক ওঠায় টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমায় অংশ না নিয়েই শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ থেকে ফিরে গেছেন।

ভারতের মাওলানা জোবায়রুল হাসান মারা যাওয়ার পর তিনিই (মাওলানা সাদ) বিশ্ব এজতেমায় তার হাল ধরেছিলেন। বিশ্ব এজতেমায় উর্দুতে বয়ান করা ছাড়াও তিনি একই ভাষায় আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করতেন। জানা গেছে, প্রায় ১০০বছর আগে ইসলামের দাওয়াতি কাজকে ত্বরান্বিত করতে মাওলানা ইলিয়াছ শাহ (রহ.) দিল্লীর নিজামুদ্দিন মসজিদ থেকে তাবলিগের কাজ শুরু করেন। মাওলানা ইলিয়াছের (রহ.) ছেলে মাওলানা হারুন (রহ.)। তারই ছেলে হলে মাওলানা সাদ কান্ধলভী।

২০১৫ সাল থেকে মাওলানা সাদ আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করে আসছেন। এরআগে তিনি টঙ্গীর বিশ্ব এজতেমা ময়দানে শুধু তাবলিগের বয়ান দিতেন। বিশ্ব এজতেমা আগামী বছর শুরু হবে ১১ জানুয়ারি। শুক্রবার রাতে কাকরাইল মসজিদে তাবলিগ মুরুব্বিদের এক পরামর্শ সভায় ওই তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

বিশ্ব এজতেমার মুরুব্বি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, তাবলীগ জামাতের শীর্ষ মুরুব্বিদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী বিশ্ব এজতেমার প্রথম পর্ব ১১, ১২ ও ১৩ জানুয়ারি এবং চারদিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব ১৮, ১৯ ও ২০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!