• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগাম নির্বাচনের পথে সরকার!


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ৫, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম
আগাম নির্বাচনের পথে সরকার!

ঢাকা : আগাম নির্বাচনের পথে এগুচ্ছে সরকার। বিরোধীদল ঘর গোছানোর আগেই নির্বাচন করতে চাইছে ক্ষমতাসীনরা। যাতে করে কোন ইস্যুতে বিরোধী শক্তিগুলো আন্দোলন করতে না পারে। এজন্য বর্তমান ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকার আগাম নির্বাচনে অংশ নিতে এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী ইসলামিক দল, বাম দল, জাতীয় পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এসব দলও আগাম নির্বাচনে অংশ নেবে। পাশপাশি নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকতেই নিজ দলের নেতা কর্মীদের নির্বাচনের প্রচারণা এবং প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে। এরই মধ্যে নিরর্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রচার শুরু হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও পিরোজপুর উপজেলায় এক সমাবেশে মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে বলে আমি আশা করছি। তিনি বলেছেন, নির্ধারিত সময়ের আগেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। নির্বাচন বর্তমান সরকারের অধীনে হলেও তা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে। যারা বর্তমান সরকারের বিরোধীতা করেন, তারাও একথা স্বীকার করছেন। বাংলাদেশকে এখন আর বিদেশীদের মুখাপেক্ষী হতে হয় না। নিজেদের অর্থেই আজ এ দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। যেভাবে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এটা অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের আগেই এদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে, ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে।

একই বছর দুয়েক আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, সরকার আগাম নির্বাচনের পথে এগুচ্ছে। তিনি ওই সাক্ষাতকারে বলেন, বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার আগেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন দিতে চায়। সেদিকেই ক্ষমতাসীনরা এগুচ্ছে।

আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য এই বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমরা নির্বাচন দিতে চাই। এটা একটা নির্বাচনী কৌশল। ওই নেতা বলেন, বিএনপি অগোছালো থাকা অবস্থায় নির্বাচন দিতে পারলে বিজয় অনেকটা সুনিশ্চিত। তবে নির্বাচন যখনই হোক না কেন বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জানা গেছে, নির্দিষ্ট মেয়াদের দুই তিন মাস আগে নির্বাচন দেয়া হতে পারে। এতে করে নির্বাচন নিয়ে কোন বির্তক তৈরি হলে তা মীমাংসা করতে হাতে সময় পাবে ক্ষমতাসীনরা। ফলে যেকোন ধরনের ঘটনাই ঘটুক না কেন তা মোকাবেলা করা সহজ হবে।

রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকদের আলাপ করে জানা গেছে, আগাম নির্বাচন দিতে বর্তমান মহাজোট সরকার এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এরই মধ্যে গত ২১ মে আওয়ামী লীগ বিশেষ বর্ধিত সভা করে। এই সভায় দলের সভাপতি  ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছে। কিভাবে সরকারের উন্নয়ন কাজের প্রচার করতে হবে, প্রচারের কি কি থাকবে সে বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন দলীয় প্রধান।

দলের একাধিক সুত্র জানায়, বর্ধিত সভার আগেই দলের সভাপতি নিজ উদ্যোগে প্রতিটি সংসদীয় আসনে দলের সংসদ সদস্যের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছেন। এখনো একাধিক জরিপের কাজ চলছে। বর্ধিত সভার আগে সংসদীয় দলের সভায় তিনি সংসদ সদস্যদের সাবধান করে দিয়ে বলেন, সকলের কাজের খতিয়ানা আমার কাছে আছে। এসময় সবাইকে নিজ নিজ সংসদীয় আসনে গিয়ে জনগনের উন্নয়নে কাজ করার পরামর্শ দেন।

পরে তৃণমুলের বর্ধিত সভায় তিনি নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমরা দেশের অনেক উন্নয়ন কাজ করেছি। এর সবই আমরা বুকলেট আকারে তৈরি করেছি। এগুলো আপনাদের দেয়া হয়েছে। আপনারা পড়বেন এবং দেশের মানুষের কাছে প্রচার করবেন। তিনি বলেন, আজকে আপনাদের হাতে যেসব অডিও, ভিডিও সিডি হাতে দেয়া হয়েছে তা গ্রামে গঞ্জে, হাটে বাজারে প্রচার করতে হবে। একদিকে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচার করতে হবে, অন্যদিকে, বিএনপি কী করেছে তাদের সেসব অপকর্ম জনসমক্ষে ব্যাপকভাবে তুলে ধরতে হবে।    
      
শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে তথ্য আছে, দল ভারির জন্যে অন্য দল থেকে সুবিধাবাদীদের দলে টানা হচ্ছে, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমি সার্ভে করে দেখেছি প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় গ্রুপ করার স্বার্থে, দল ভারি করার স্বার্থে বিএনপি-জামায়াতের দাগীদের- যারা আমাদের নেতাকর্মীদের ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে অত্যাচার নির্যাতন করেছেন তাদের টেনেছে। এরা দলের ভেতরে এসে দলের ক্ষতি করে। এমনকি আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যার সঙ্গে পর্যন্ত জড়িত হয়।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীতে নৌকার প্রতীক যাদের দেবো সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে তার পক্ষে কাজ করতে হবে। কেউ অন্য কাউকে সমর্থন দেবেন না। দলীয় সভাপতি বলেন, আজকের বর্ধিত সভা থেকে দেয়া ল্যপটপগুলো কেউ ঘরে ফেলে রাখবেন না। সবাই দলীয় কার্যালয়ে ব্যবহার করবেন।বর্ধিত সভার পরদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে তৃণমুলের নেতাকর্মীদের সমামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারের কৌশল সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

এদিকে, দলীয় সভাপতির এই নির্দেশনার পাওয়ার পর বিভিন্ন  জেলার তৃণমুলের নেতাকর্মীরা সরকারের উন্নয়ন কার্মকান্ডের প্রচার শুরু করেছে। পাশাপাশি চলমান উন্নয়ন কাজ গুলো চালু রাখা ও সম্পন্ন করার জন্য আগামীতে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করতে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। বিশেষ করে ফেসবুকে এই প্রচারণা চালানো হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। তৃণমুলের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উপস্থাপন করে পুর্বেকার সরকারের সঙ্গে তুলনা করে জনগনের কাছে নৌকায় ভোট চাইছে।

অন্যদিকে, সরকারের আগাম নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহনে নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বিভিন্ন দলের সঙ্গে যোগযোগ রক্ষা করছে। এরমধ্যে রয়েছে প্রভাবশীল কয়েকটি ইসলামী দল, বাম দল । এছাড়া জাতীয় পার্টিও রয়েছে। ইতিমধ্যে এসকল দল থেকে আগাম নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে সম্মতি নিয়েছে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান। এসব নেতারা বলেন, সরকারের দেয়া আগাম নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে না চাইলেও দলটির একাধিক নেতা দল ত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে এখন হতাশা বিরাজ করছে।  

প্রসঙ্গত, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে পুনরায় সরকার গঠনের সুযোগ পায়। ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করা হয়। সেই হিসাবে বর্তমান সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হবে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি। সেক্ষেত্রে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারির পূর্বের ৯০ দিনের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা আছে। সংবিধানের ১২৩(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!