• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগাম বর্ষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে, চলতি মাসে বন্যার শঙ্কা


নিজস্ব প্রতিবেদক জুন ১৩, ২০১৮, ১১:৪০ এএম
আগাম বর্ষণ মাত্রা ছাড়িয়েছে, চলতি মাসে বন্যার শঙ্কা

ফাইল ছবি

ঢাকা : চলতি জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে দেশে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করছে আবহাওয়া অধিদফতর। সংস্থাটি জানাচ্ছে, এপ্রিল-মে মাসের মতো জুন মাসেও স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ার আশঙ্কা আছে। কোথাও কোথাও বর্ষণের মাত্রা ভারী থেকে অতি ভারী পর্যায়ে পৌঁছতে পারে।  চলতি বাংলা বছরে জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি সময়ে দেশের ওপর দিয়ে মৌসুমি বায়ু বিস্তার লাভ করায় বর্ষা মৌসুমের আগেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে।

আবহাওয়া দফতর বলছে, গত মে মাসে সারা দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতা থাকতে পারে পুরো জুন জুড়েই। তাই মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু জায়গায় স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।  

আবহাওয়া দফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর মে মাসে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি ছিল। ঢাকায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ২৯২ মিলিমিটার থাকলেও তা ২৭ দশমিক ২ শতাংশ বেশি হয়েছে। ময়মনসিংহে ২৩ দশমিক ৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, সিলেটে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, খুলনায় ১৫ শতাংশ, বরিশালে ১৫ দশমিক ৯ শতাংশ স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টি বেশি হয়েছে। তবে রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ দশমিক ৯ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।  

জুন মাসের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকাতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩৫৬ মিলিমিটার থাকলেও তা বেড়ে ৩৯০ মিলিমিটারে পৌঁছতে পারে। এ বিভাগের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ১৪ দিন নির্ধারণ করা হলেও তা বেড়ে ১৫ থেকে ২০ দিনে পৌঁছতে পারে। ময়মনসিংহে ১৫ দিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ৪৩২ মিলিমিটার নির্ধারিত থাকলেও তা ১৮ থেকে ২২ দিনে হতে পারে ৪৭৫ মিলিমিটার। চট্টগ্রামে ১৭ দিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮৯ মিলিমিটার, যা বেড়ে ২০ দিনে ৬৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

সিলেটে ২০ দিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩৪ মিলিমিটার, যা বেড়ে ২৬ দিনে ৭০০ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। রাজশাহীতে ১২ দিনের ৩০৫ মিলিমিটার বৃষ্টি বেড়ে ২০ দিনে ৩৩৫ মিলিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। রংপুরে ১৪ দিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত ধরা হয়েছে ৩৮৯ মিলিমিটার, যা ২০ দিনে ৪৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে।

খুলনাতে ১৪ দিনে ২৯৬ মিলিমিটার স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকলেও তা ১৮ দিনে ৩২৫ মিলিমিটার পর্যন্ত ছুঁতে পারে। আর বরিশালে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের দিন নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ দিনে ৪৮৩ মিলিমিটার, যা মাসের ২০ দিনে ছুঁতে পারে ৫৩০ মিলিমিটার পর্যন্ত। বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ার পাশাপাশি এ মাসে বঙ্গোপসাগরে ১ থেকে ২টি লঘুচাপ নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে।

আবহাওয়া দফতর বলছে, গত ৩০ মে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। যেটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে মিয়ানমারের রাখাইন উপকূল অতিক্রম করে চলে যায়। জুনে উজ্জ্বল সূর্যকিরণ দিনে সাড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। ফলে গড় বাষ্পীভবন বেড়ে ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

আবহাওয়া সদর দফতরের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এ বছর বর্ষা মৌসুম অন্যান্য বছরের তুলনায় সপ্তাহখানেক আগে শুরু হয়েছে। আমরা স্বাভাবিকভাবে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসকেই বর্ষা মৌসুম ধরে থাকি। কিন্তু আবহাওয়াবিদদের মতে বর্ষা মৌসুম প্রকৃতপক্ষে শুরু হয় জুন থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। সেই হিসাবে এবার যথাসময়েই দেশের ওপর মৌসুমি বায়ু প্রবাহ শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, গত এপ্রিল ও মে মাসের তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায় দেশে এ বছর স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি, যা জুন, জুলাই ও আগস্ট মাস পর্যন্তও একই রকম থাকতে পারে। এতে করে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বেশ কয়েকটি নদী অববাহিকায় স্বাভাবিকের তুলনায় প্রবাহ বেশি হতে পারে। ফলে সৃষ্টি হতে পারে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা। এই অবস্থা হতে পারে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেও।

তিনি বলেন, মৌসুমি বায়ু দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে প্রবাহিত হয়ে ভারতের আসাম ও মেঘালয় পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশসহ এসব অঞ্চলে এ সময় মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ভারতের ওইসব অঞ্চল থেকে পাহাড়ি ঢল নদ-নদী হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়েও প্রবাহিত হতে পারে। এতে দেশে সাময়িক বন্যা দেখা দিতে পারে।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!