• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বাজেটে একগুচ্ছ কর সুবিধা চায় ঢাকা চেম্বার


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৩, ২০১৭, ০৮:২৭ পিএম
আগামী বাজেটে একগুচ্ছ কর সুবিধা চায় ঢাকা চেম্বার

প্রাক-বাজেট আলোচনায় ডিসিসিআই ও এনবিআর কর্মকর্তারা

ঢাকা: পণ্যর মান উন্নয়ন ও গবেষণা কাজে কোম্পানির মোট মুনাফার ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয়ে কর মওকুফ, ব্যক্তিশ্রেণির করের হার সাড়ে তিন লাখ টাকা ও সন্তানদের শিক্ষা ব্যয় এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত কর বহির্ভূত রাখার আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। একইসঙ্গে আগামী অর্থ-বছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে পুনরায় বিনিয়োগে ছাড়সহ ব্যবসায়ীদের ৪৯টি প্রস্তাব বিবেচনায় আনার দাবি করেছেন তারা।

সোমবার (১৩ মার্চ) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর সঙ্গে ২০১৭-১৮ অর্থ-বছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় এই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) নেতারা।

বাজেট উপস্থাপনের কয়েক মাস পূর্ব থেকেই দেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ও অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা করে থাকে সরকারের রাজস্ব সংগ্রহকারি জাতীয় সংস্থা এনবিআর। এসময় ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবির বিষয় ও সরকারের নীতি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও আগামী অর্থ-বছরের জন্য প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছে এনবিআর। ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান আজ এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের কাছে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন দাবি সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

এসময় ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগী দেশগুলোর রাজস্ব কাঠামোতে মিল রেখে পণ্যর ওপর ভ্যাট আরোপ করলে ব্যবসার উন্নয়ন হবে। নতুন ভ্যাট এবং সাপ্লিমেন্টারী অ্যাক্ট ২০১২ আইনে সমন্বিত ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৭ শতাংশ করা দরকার। বর্তমানে ব্যক্তি পর্যায়ে করদাতাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষা ভাতা নেই। তাই আগামী অর্থ-বছর থেকে দুই সন্তানের পেছনে বছরে এক লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত শিক্ষা ব্যয় কর অব্যাহতি দেয়া হউক।

ব্যবসায়ীদের করসুবিধা দিতে আগামী বাজেটে অন্তর্ভূক্তির জন্য ৪৯টি প্রস্তাব করা হয় ডিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে। এরমধ্যে ব্যবসায়ী নেতারা উল্লেখ করেন, পণ্যসহ বিভিন্ন ধরণের গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যয় কোম্পানির মোট মুনাফা থেকে ২.৫ শতাংশ পর্যন্ত কর মওকুফ করা হোক। এই অর্থের মধ্যে কোনো অংশ অব্যবহৃত থাকলে তা পরের বছরের রির্জাভ সৃষ্টি খাতে যাবে। এতে ব্যবসায় গবেষণা খাত উন্নত ও সবাই গবেষণায় আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। করদাতার বিনিয়োগ জনিত আয়ের ৩০ শতাংশের ওপর থেকে ১৫ শতাংশ আয়কর রেয়াত বা ৩ কোটি টাকার বিনিয়োগের মধ্যে যেটি কম তা বিনিয়োগযোগ্য আয়কর রেয়াত হিসেবে গণ্য করার প্রস্তাব করা হয়। একইসঙ্গে মুনাফার যতটুকু পুণরায় বিনিয়োগ হবে তার ওপর কর মওকুফ বা রেয়াতের সুবিধা দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের দেয়া প্রস্তাবে ব্যক্তিশ্রেণির কর হার সীমা আড়াই লাখ টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বার্ষিক টার্নওভার ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত কর মুক্ত রাখা এবং ৫০ লক্ষ হতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ৩ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব করেন তারা। এসময় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমকে করের আওতার বাইরে রাখার প্রস্তাব করেন। এছাড়াও পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে ব্রোকারেজ কোম্পানীর কর্পোরেট কর হার ৩৫ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ, মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হার ৩৭.৫ থেকে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন ব্যবসায়ী নেতারা।

ভ্যাট রেজিস্ট্রেশনকারী ব্যবসায়ীদের সরকারি খরচে ইসিআর মেশিন প্রদান ও ভ্যাট স্মার্ট কার্ড প্রবর্তনের প্রস্তাব করেন ডিসিসিআই সভাপতি। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, অর্থ-বছরের মাঝে এসআরও জারীর কারণে উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড পরিচালনা ব্যাহত হয়, এজন্য ৩ থেকে ৫ বছরের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট কর কাঠামো প্রবর্তন করা যেতে পারে।

বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, আগামী বাজেট অধিকতর ব্যবসা ও শিল্পবান্ধব করতে চায় সরকার। জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এনবিআর সারাদেশে কর বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করের আওতা বাড়ানোর জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ট্যাক্স/আয়কর ক্যাম্প চালু করা হবে।

তিনি আরো বলেন, রাজস্ব সংগ্রহের হার বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ী ও এনবিআর কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগ আরো দৃঢ় করা দরকার। এজন্য বিভিন্ন চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের কর কর্মকর্তাদের জন্য ইন্টার্নশীপ চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে রাজস্ব বোর্ড। এনবিআর প্রতিবছর নভেম্বর মাসের ২৬ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত সময়কে ‘আয়কর সপ্তাহ’ পালন করবে।

বিকেল চারটায় এনবিআরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ডিসিসিআই এর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার, পরিচালক আসিফ এ চৌধুরী, ইঞ্জিঃ আকবর হাকিম, ইমরান আহমেদ, খ. আতিক-ই-রাব্বানী, কে এম এন মঞ্জুরুল হক, মামুন আকবর, আলাউদ্দিন মালিক, মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির ও এনবিআর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সোনালীনিউজ/আতা

Wordbridge School
Link copied!