• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস


নিজস্ব প্রতিবেদক ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬, ১২:২৪ পিএম
আজ আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস

সোনালীনিউজ ডেস্ক

আজ আন্তর্জাতিক শিশু ক্যানসার দিবস। প্রতিবছর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ১৫ ফেব্রুয়ারি এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দেশে প্রায় ১৩ লাখ থেকে ১৫ লাখ ক্যানসার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। আর মৃত্যুর হারও আশঙ্কাজনক। কেবল ২০০৫ সালেই ক্যানসারে মৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই সচেতন না হলে ২০৩০ সাল নাগাদ মৃত্যুর হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে। বিস্ময়কর হলেও সত্য—শিশুদের ক্যানসার হওয়ার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কারণ জানা যাচ্ছে না।  বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট কোনও কারণও নেই। তবে, কিছু কিছু বিষয়কে শিশুদের ক্যানসারের পেছনে দায়ী হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে- জেনিটিক্যাল কারণ, ভাইরাস, খাবারে টক্সিনের উপস্থিতি, ক্যামিকেলস, পরিবেশগত সমস্যা। তাদের মতে,  প্রাথমিকভাবে এ রোগ শনাক্ত করা গেলে বেশিরভাগ শিশুরই ভালো হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। শিশুদের ক্যানসার মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

এদিকে, ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যানসারের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে প্রতিবছর ২ লাখ শিশু ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। আর এর মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশগুলোতেই আক্রান্ত হয় শতকরা ৮০ ভাগ। এখানে ক্যানসার আক্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার হার মাত্র ৫ ভাগ। অন্যদিকে, উন্নত দেশগুলোয় এই বেঁচে থাকার হার শতকরা ৮০ ভাগ।

ক্যানসারে আক্রান্ত সাত বছরের শিশু আল আমিনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন বাবা রহমান মিয়া। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন,  ‘চিকিৎসার জন্য ভর্তি প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে এরই মধ্যে। প্রতিদিন পরীক্ষা করাতে হয়। পরীক্ষার করানোর পর এখানে ভর্তি করছি, এখন তো প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা, মেরুদণ্ডে ইনজেকশন, এক্সরে করাতে হয়। রক্ত দিতে হয়। এত টাকা কি আমাদের পক্ষে সম্ভব জোগাড় করা?’ বলতে-বলতে পঞ্চাশোর্ধ্ব রহমান মিয়ার চোখ জলে ভরে ওঠে। কথা বলতে-বলতে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন তলায় শিশু ক্যানসার বিভাগের বিছানায় শুয়ে থাকা শিশুসন্তানের দিকে বার বার তাকাচ্ছিলেন তিনি।  

নোয়াখালীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রহমান মিয়া ছেলেকে ভর্তি করেয়িছেন ৪ ফেব্রুয়ারি। বাড়িতে রয়েছে আরও দুটি ছেলে-মেয়ে। সব ফেলে রহমান মিয়া ও তার স্ত্রী ছেলেকে আঁকড়ে আছেন দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে—ছেলে সুস্থ হলেই তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন।

চোখের পানি মুছে আবার বলেন, ‘বাইরে খাইতে হয়, কষ্ট করে থাকতেছি দুজন মিলে। রোগী তো একজন, একজনের সঙ্গে একজনই থাকার নিয়ম। কিন্তু ওর মা তো কিছুই চেনেন না, ডাক্তারগো সঙ্গেও কথা কইতে পারবেন না, তাই আমিও আছি।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেডিয়াট্রিক হেমাটোলজি ও অনকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এটিএম আতিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন,  নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে, ঠিক কী কারণে শিশুদের ক্যানসার হয়ে থাকে। ক্যানসারের জন্য কোনও নির্দিষ্ট জীবাণুকেও দায়ী করা যাবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত মোট শিশুর সংখ্যা কত—এ নিয়ে সঠিক কোনও পরিসংখ্যান নেই। প্রতিবছর বাংলাদেশে প্রায় তিন হাজার শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হয় বলে বিভিন্ন হাসপাতালের রেজিস্ট্রার বই থেকে ধারণা করা হয়। তবে, মোট সংখ্যা জানা যাবে আরও কয়েকবছর পরে। বর্তমানে আমাদের কোনও কমিটি বেইজড স্টাডি নেই।  

ডা. আতিকুর রহমান বলেন, শিশুদের ক্যানসার সব সময়ই ছিল। আগে রোগ শনাক্ত করা যেত না। এখন রোগ নির্ণয়ের উন্নত প্রযুক্তি, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে সেটি ধরা পড়ে। গ্রামে-গঞ্জে হেল্থ কমপ্লেক্স, সাব সেন্টার, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় রোগ ধরা পড়ার পর তারা চিকিৎসা নিতে পারে।  এ কারণেই  মনে হয়, এখন শিশুদের ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। আগেও ক্যানসার ছিল, কিন্তু নির্ণয় করতে না পারায় বোঝা যেত না। আরেকটি কারণ রয়েছে ক্যানসারের পেছনে। সেটি হলো পরিবেশ বিপর্যয়। টক্সিন, বায়ু ও শব্দ দূষণ। এ সব কারণেও রোগটির আধিক্য বেড়েছে।

শিশুদের ক্যানসার চিকিৎসা প্রথম এই বিএসএমএমইউতে শুরু হয় জানিয়ে ডা. আতিক বলেন, এখন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসা শুরু হয়েছে অনেক বেশি উন্নত চিকিৎসা নিয়ে। এর পাশাপাশি সীমিত আকারে চিকিৎসা হচ্ছে, ঢাকা শিশু হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউটে। তিনি বলেন, শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

জানতে চাইলে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক ও অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. মমতাজ বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ক্যানসারে আক্রান্ত শিশুদের সঠিক সংখ্যা এখনও জানা যায়নি। তবে, আমাদের হাসপাতালের রেজিস্টার্ড খাতা দেখে বলতে পারি, প্রতিবছর এ সংখ্যা বাড়ছে। শিশুদের সাধারণত ব্লাড ক্যানসারটাই বেশি হচ্ছে। তারপর রয়েছে কিডনি ক্যানসার, চোখের ক্যানসার।  আমাদের হাসপাতালে চোখের ক্যানসারে আক্রান্তদের বেশি পাই।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!