• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ গাজীপুরে ভোট, কঠিন পরীক্ষায় ইসি


গাজীপুর প্রতিনিধি জুন ২৫, ২০১৮, ১১:৩০ পিএম
আজ গাজীপুরে ভোট, কঠিন পরীক্ষায় ইসি

গাজীপুর : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর গাজীপুর সিটি করপোরেশন (জিসিসি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মঙ্গলবার (২৬ জুন)। দেশের বৃহত্তম এই সিটি করপোরেশনের এটি দ্বিতীয় নির্বাচন। এই নির্বাচন নিয়ে গাজীপুরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে বিরাজ করছে টান টান উত্তেজনা। আওয়ামী লীগ গাজীপুরে তাদের বিজয় নিশ্চিত করতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আর বিএনপি মেয়র পদ ধরে রাখতে মরিয়া। ভোট গণনা শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানা যাবে, কে হচ্ছেন গাজীপুর সিটির ‘নগরপিতা’।  

এদিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫ মাস আগে দেশে-বিদেশে নিজেদের নিরপেক্ষ প্রমাণের শেষ সুযোগ নির্বাচন কমিশনের সামনে। বিএনপি আগেই ঘোষণা দিয়েছে গাজীপুরের নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে তারা আসন্ন তিন সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাই গাজীপুরের ভোট ঘিরে আজ ইসির সামনে কঠিন পরীক্ষা।

জিসিসি নির্বাচনে মঙ্গলবার (২৬ জুন) সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সিটির ৪২৫টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আজকের জিসিসি নির্বাচন জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় ৫ মাস আগে অনুষ্ঠিত এ স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশে-বিদেশের নানা মহলের দৃষ্টি এখন গাজীপুরে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের আশাবাদ ব্যক্ত করলেও গাজীপুরে খুলনার মতো ‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের চেষ্টা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিএনপি।  

গাজীপুরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ সংস্থা। সোমবার (২৫ জুন) এক অনুষ্ঠানে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার জিসিসি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসিকে সর্বশক্তি নিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। কারণ এই নির্বাচন নির্ধারণ করবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে।

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ সোমবার (২৫ জুন) বলেন, তার আশা ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে এসে নিজেরাই ভোট দিতে পারবেন। নির্বাচন মনিটরিং করে তা পর্যালোচনা করে মতামত ব্যক্ত করবেন বলেও জানান তিনি।  

গাজীপুর সিটিতে মেয়র পদে সাতজন প্রার্থী থাকলেও মূলত লড়াই হবে আওয়ামী লীগের মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা) ও বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকারের (ধানের শীষ) মধ্যে। অপর পাঁচ মেয়র প্রার্থী হলেন ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)। ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠিত। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ৩৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন। এর মধ্যে ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বী করছেন ২৫৪ জন।

এ ছাড়া সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৮৪ নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন। তবে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে ইতোমধ্যেই কাউন্সিলর পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় মাজহারুল ইসলাম দিপু নির্বাচিত হয়েছেন।  

নির্বাচনের একদিন আগে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর। তবে বিএনপির প্রার্থী হাসান অভিযোগ করে বলেছেন, নির্বাচনে কারচুপি হলে এমন কিছু করা হবে যাতে বিশ্ববাসীর নজরে আসে বিষয়গুলো।  

সোমবার (২৫ জুন) নির্বাচন কমিশন সচিব হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গাজীপুরে ৬টি ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট নেওয়া হবে। ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।  

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টি ভোটকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে। এবার মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৭ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন।  

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা প্রচার-প্রচারণা গত ১৮ জুন শুরু হওয়ার পর থেকেই ব্যাপক মাত্রা পায়। এ ক্ষেত্রে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর পরস্পরের বিরুদ্ধে বাগ্যুদ্ধের বিষয়টিই ছিল লক্ষণীয়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও নির্বাচনী আচণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তাদের এ অবস্থানে সাধারণ মানুষ ও কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা রয়েছে।  

এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের কাছে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় অভিযোগ করেছেন ভোটের আগের রাতে ভোট ডাকাতির পরিকল্পনা করছে ক্ষমতাসীন দল।

তিনি বলেন, পুলিশের নেতৃত্বে রাতেই ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরানোর ষড়যন্ত্র চলছে। একটি সুন্দর নির্বাচনকে নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার অপচেষ্টায় মরিয়া সরকারি দল। অবশ্য নির্বাচন কমিশন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করা হয়েছে।  

এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়কারী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমতউল্লা খান বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর একটি কাজ সকালে উঠে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো। কিন্তু তিনি এসব মিথ্যা তথ্য দিয়ে নির্বাচনে কোনো সুফল আনতে পারবেন না।  

গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পুলিশ বিএপির কোনো নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করছে না। তবে ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে করতে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।  

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। অন্য যেকোনো সিটি নির্বাচনের তুলনায় গাজীপুরে অধিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।  

গত রোববার মধ্যরাত থেকে আনুষ্ঠানিক প্রচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল প্রায় সারাদিনই প্রধান দুই মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম ও হাসান উদ্দিন সরকার বাসায় অবস্থান করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় আঞ্চলিক সড়কে অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গাড়ি ছাড়া অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করেছে নির্বাচন কমিশন।

রিটার্নিং কার্যালয়ের তথ্যমতে, ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তায় ১২ হাজার আনসার ও পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছাড়াও সড়কে টহল জোরদারের লক্ষ্যে বিজিবির ২৯ প্লাটুন সদস্য কাজ করছে। বিজিবির ৭ প্লাটুন কোনাবাড়ী ও কাশিমপুর এলাকায়, ১০ প্লাটুন টঙ্গী এলাকায় এবং ১২ প্লাটুন জয়দেবপুর, বাসন চান্দনা চৌরাস্তা ও কাউলতিয়া এলাকায় দায়িত্ব পালন করবে।

এ ছাড়া পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসার সমন্বয়ে ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৮টি মোবাইল ফোর্স এবং ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। প্রায় ৩৩০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৩ সালের ৬ জুলাই। এতে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন বিএনপি সমর্থিত সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।

এবার নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গত ২৪ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়। ১৫ মে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে স্থগিতাদেশ এবং পরে আপিল বিভাগের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন থেকে পুনরায় আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয় এবং সে অনুযায়ী আজ ২৬ জুন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হচ্ছে।   

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!