• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ বার্সায় হতে পারত মেসি-রোনালদো জুটি!


ক্রীড়া ডেস্ক ডিসেম্বর ৩, ২০১৬, ১০:৪৭ এএম
আজ বার্সায় হতে পারত মেসি-রোনালদো জুটি!

আজ (০৩ ডিসেম্বর) শনিবার  রাত সোয়া ৯টায় ন্যু ক্যাম্পে মুখোমুখি হবে বার্সেলোনা ও রিয়াল মাদ্রিদ। চলতি মৌসুমের প্রথম এলক্লাসিকো ম্যাচ এটা। তাই দু’দলের কাছেই সমান গুরুত্বপূর্ণ এ ম্যাচটি। তবে বার্সার জন্য এ ম্যাচের গুরুত্ব আরও বেশি। কেননা লা লিগার পয়েন্ট টেবিলে রিয়ালের থেকে ৬ পয়েন্ট কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে তারা। মেসি-সুয়ারেজ-নেইমাররা অবশ্য কিছুদিন ধরে বন্দী ছন্দপতনের বৃত্তে। বার্সার লিগ জয়ের আশা বাঁচাতে হলে এমএসএন ত্রয়ীকে আজ জ্বলে উঠতেই হবে একসঙ্গে l আর বার্সার টার্গেট থাকবে  রোনালদোকে রক্ষণবৃত্তে আটকানো? 

মেসি-রোনালদো দুজনেই যাঁর যাঁর ক্লাবের প্রাণভোমরা। নিজ নিজ জাতীয় দলের অধিনায়কও। দুজনকেই এমন অপবাদ শুনতে হয়—ক্লাবের হয়ে যতটা উজ্জ্বল, ততটাই অনুজ্জ্বল জাতীয় দলের হয়ে। মিল আছে আরেকখানে, পারস্পরিক দ্বৈরথ নিয়ে দুজনেই কথা বলেন একই সুরে। মেসি বলেন, ‘রোনালদোর সঙ্গে আমার কোনো ব্যক্তিগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই।’ আর রোনালদোও বলেনে, ‘মেসির সঙ্গে আমার কোনো দ্বৈরথ নেই।’ 

এভাবেই ছুটছে দুজনের দ্বৈরথ। ছুটবে আজও। তবে সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, আজ তাঁরা দুজন খেলতে পারতেন বার্সেলোনাতেই! আগামীকালই বহু আকাঙ্ক্ষিত এল ক্লাসিকো। ন্যু ক্যাম্পে কাল বার্সেলোনার দুশ্চিন্তার মূল কারণ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। গত এল ক্লাসিকোতেই রিয়াল মাদ্রিদের জয় সূচক গোলটি ছিল তাঁর। অথচ দুর্দম্য এই ফরোয়ার্ড আজ হতে পারতেন রিয়াল মাদ্রিদের দুশ্চিন্তার কারণ। লিওনেল মেসির সঙ্গে জুটি বেধে আজ ত্রাস ছড়াতেন রিয়ালের রক্ষণে। কিন্তু বার্সেলোনা সভাপতির ভুলে তা আর হয়নি।

পর্তুগিজ তারকাকে এক সময় অল্প মূল্যে দলে ভেড়ানোর সুযোগ হেলায় হারিয়েছে বার্সা। রোনালদো তখন স্পোর্টিং ক্লাব ডি পর্তুগালের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন। ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর চোখ ছিল তাঁর ওপর। বার্সেলোনাও ছিল সে দলে।

২০০৩ সালে সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর বার্সাকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নেন হুয়ান লাপোর্তা। তারই অংশ হিসেবে দলে ভিড়িয়েছিলেন রোনালদিনহো, রাফায়েল মার্কেজকে। সেই সময়ে ১৮ বছর বয়সী রোনালদোর প্রতিভাও মুগ্ধ করেছিল লাপোর্তাকে। তবে তাঁকে পেতে বার্সেলোনাকে খরচ করতে হতো ১ কোটি ৭০ লাখ ইউরো। সেই সময়ে কাতালান ক্লাবটি রোনালদোর জন্য এই অর্থ খরচ করতে রাজি হয়নি।

অ্যালেক্স ফার্গুসন অবশ্য ভুল করেননি। আরও ২০ লাখ ইউরো বেশি খরচ করে ২০০৩ সালে রোনালদোকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে দলে ভেড়ান তিনি। স্পেনের ক্রীড়া দৈনিক এএসে লাপোর্তা জানালেন রোনালদোকে চুক্তিবদ্ধ করতে না পারার আক্ষেপের গল্প, ‘আমরা যখন বার্সেলোনার প্রশাসনে আসি তখন রোনালদিনহো, মার্কেজ আর রিকার্ডো কারেসমাকে চুক্তিবদ্ধ করেছিলাম। আমরা নতুন করে দলটি সাজাচ্ছিলাম। ক্রিস্টিয়ানো স্পোর্টিং সিপিতে ছিল আর সে ইউনাইটেডের সঙ্গে প্রায় চুক্তি করে ফেলেছিল।’

বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া মার্কেজ আর কারেসমার এজেন্ট ছিলেন হোর্হে মেন্ডেজ। এই পর্তুগিজ রোনালদোরও এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেজ। লাপোর্তাকে রোনালদোর খবরটি তিনিই দিয়েছিলেন, ‘আমরা বলেছিলাম আমরা রোনালদোর ব্যাপারে জানি। সে (হোর্হে) ইউনাইটেডের চেয়ে আমাদের ২০ লাখ ইউরো কম প্রস্তাব করেছিল। পরে ইউনাইটেড ১ কোটি ৯০ লাখ ইউরোতে রোনালদোকে নিয়ে নিয়েছিল।’

ইউনাইটেডের হয়ে রোনালদো প্রায় তিনশ’ ম্যাচ খেলে ১১৮টি গোল করেন। এর পর তিনি নাম লেখান রিয়ালে। ট্রান্সফার ফির বিশ্ব রেকর্ড (৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরো) গড়ে ২০০৯ সালে তাঁকে দলে ভিড়িয়েছে বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। তাতেই মেসি-রোনালদো স্বপ্নের জুটিটা আর দেখা হলো না ফুটবল বিশ্বের।

দুই দলের অবস্থা
গ্যারেথ বেল, টনি ক্রুস নেই। তবে রিয়ালের জন্য খুশির খবর, চোট কাটিয়ে গত বুধবার স্প্যানিশ কাপের ম্যাচেই ফিরেছেন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কাসেমিরো। ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডারকে নিয়ে জিদান ফিরে যেতে পারেন ৪-৩-৩ ফর্মেশনে। মিডফিল্ডে তাঁর সঙ্গে লুকা মডরিচ ও মাতেও কোভাচিচ। আক্রমণে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পাশে থাকতে পারেন করিম বেনজেমা, আর বেলের জায়গায় লুকাস ভাসকেজ।

বার্সেলোনার স্বস্তি, ফিরতে পারেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। গত অক্টোবরে হাঁটুতে চোট পাওয়া স্প্যানিশ মিডফিল্ডার কয়েক দিন হলো অনুশীলনে ফিরেছেন। বার্সেলোনার ফর্মের পড়তির পেছনে ইনিয়েস্তার না থাকাটাকেও অনেকে দেখছেন বড় কারণ হিসেবে। চোট কাটিয়ে ফিরতে পারেন দুই ডিফেন্ডার জর্ডি আলবা ও স্যামুয়েল উমতিতি। নিষেধাজ্ঞার কারণে লিগের সর্বশেষ ম্যাচে বাইরে থাকা লুইস সুয়ারেজও দলে ফিরছেন আজ।

মেসি-ম্যাজিক, না রোনালদো–ফ্যাক্টর?
এল ক্লাসিকো নিয়ে কথা হবে আর তাঁরা দুজন থাকবেন না, তা কী করে হয়? বার্সেলোনার ফর্ম যতই অধারাবাহিক হোক, লিওনেল মেসি আছেন তাঁর মতোই। অক্টোবরের মাঝামাঝি চোট কাটিয়ে ফেরার পর আট ম্যাচের সাতটিতেই গোল করেছেন। সব মিলিয়ে লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগে ১০ ম্যাচে ১৮ গোল। রোনালদোই বা কম কী? এল ক্লাসিকো উপলক্ষেই কিনা মৌসুম শুরুর অধারাবাহিকতা ঝেড়ে ফেলেছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ সর্বশেষ তিন ম্যাচে ৫ গোল।

কোচ উবাচ

এটা পরিষ্কার আমাদের আরও উন্নতি করতে হবে। আমাদের ধারাবাহিকতা নেই। তবে দয়া করে ব্যাপারটিকে অতিরঞ্জিত করবেন না। বার্সায় আমার প্রথম মৌসুমেও আপনারা (সংবাদমাধ্যম) শুরুতে সমস্যাগুলোকে বাড়িয়ে বলেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা ট্রেবল জিতেছি।

লুইস এনরিকে, কোচ, বার্সেলোনা

ফল নিয়ে ভাবছি না। শুধু ম্যাচের জন্য ভালোভাবে তৈরি হওয়ার কথাই ভাবছি এখন। ফল যা-ই হোক, এটাই কোনো কিছু নির্ধারণ করে দেবে না

জিনেদিন জিদান, কোচ, রিয়াল মাদ্রিদ


নাচবে-গাইবে ন্যু ক্যাম্প
ইউরোপের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম ন্যু ক্যাম্পের দর্শক ধারণক্ষমতা প্রায় ৯৯ হাজার। তবু বার্সেলোনার স্টেডিয়ামটি নিয়ে সমালোচনা—মেসিরা যেমনই খেলুন, এটির আবহটা ঠিক গমগমে থাকে না। তবে এ মৌসুমে এল ক্লাসিকোতে বার্সার সমর্থক গোষ্ঠী ‘সেগুইমেন্টএফসিবি’ পুরো ৯০ মিনিট নেচে-গেয়ে আবহটাকে প্রাণবন্ত করে রাখবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সমর্থক গোষ্ঠীর প্রধান চার্লেস অর্দিয়ালেস বলেছেন, ‘ন্যু ক্যাম্প কখনোই খুব গমগমে স্টেডিয়াম ছিল না। কাতালান মানুষদের চরিত্রই এমন, খুব বেশি উৎসবমুখর তাঁরা নন, তাঁদের উত্তেজিত করার উপলক্ষটাও তেমন হতে হয়।’ এল ক্লাসিকো তো ঠিক তা-ই।

৮ হাজার ৮০০ কোটি!
ফুটবলের রোমাঞ্চ যেমন আছে, তেমনি এল ক্লাসিকোতে আছে অর্থের খেলও। যেন বিলিয়ন ইউরোর ম্যাচ। আজকের ম্যাচই দেখুন, রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার স্কোয়াডের মিলিত দাম প্রায় ১০৪ কোটি ৯০ লাখ ইউরো। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
রিয়ালের স্কোয়াডের দামই প্রায় ৬১ কোটি ইউরো। ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর জন্য খরচ ৯ কোটি ৪০ লাখ ইউরো, গ্যারেথ বেলের জন্য ১০ কোটি, আর রদ্রিগেজের জন্য ব্যয় ৮ কোটি।
যুব একাডেমির সৌজন্যে মেসি-ইনিয়েস্তাদের বলতে গেলে কিনতেই হয়নি বার্সাকে। তারপরও অবশ্য কম টাকা ঢালছে না কাতালান ক্লাবটিও। লুইস সুয়ারেজের জন্যই খরচ করেছে ৮ কোটি ১০ লাখ ইউরো। কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও নেইমারের দলবদল অঙ্কটাও বিশাল—প্রায় ৮ কোটি ৫৪ লাখ ইউরো। মার্কা।

এল ‘ফোরকে’ ক্লাসিকো

এবারই প্রথম অত্যাধুনিক সুপার জুম প্রযুক্তিসহ আটটি ‘ফোরকে আলট্রা এইচডি’ ক্যামেরায়ও (সবচেয়ে আধুনিক ভিডিওচিত্রের প্রযুক্তি) ধারণ করা হবে এল ক্লাসিকো।

১৮৫ দেশে ৬৫০ মিলিয়ন দর্শক দেখবেন ম্যাচটি। তা সেটির জন্য প্রস্তুতিও কম নয়। ওই আটটি ক্যামেরার বাইরেও স্টেডিয়ামজুড়ে ৩৭টি ক্যামেরা থাকবে। আলাদা দুটি ক্যামেরা থাকবে দুই কোচ লুইস এনরিকে ও জিনেদিন জিদানের ওপর। আর ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসি তো আছেনই, তাঁদের ওপরও সার্বক্ষণিক থাকবে দুটি ক্যামেরা।

* মেসি এল ক্লাসিকোর ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা। নামের পাশে ২১ গোল।
* অবশ্য রিয়ালের বিপক্ষে গত পাঁচ ম্যাচে গোল পাননি মেসি।
* ন্যু ক্যাম্পের চেয়ে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতেই বেশি গোল মেসির। ২১ গোলের ১২টি (৫৭ শতাংশ) রিয়ালের মাঠে।
* শুধু গোল করে নয়, করাতেও মেসি এগিয়ে। ৩২ ম্যাচে ১৩টি অ্যাসিস্ট করেছেন।
* ২৫টি এল ক্লাসিকো খেলে মাত্র ৭ জয় পেয়েছেন রোনালদো।
* রোনালদো গোল করেছেন ১৬টি। মেসি ও তাঁর গোলগড় প্রায় সমান। ম্যাচপ্রতি রোনালদোর গোল দশমিক ৬৪ শতাংশ, মেসির দশমিক ৬৫ শতাংশ।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!