• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ ৭ নভেম্বর


নিজস্ব প্রতিবেদক নভেম্বর ৭, ২০১৬, ১০:১৮ এএম
আজ ৭ নভেম্বর

আজ ৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক বিশেষ দিন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে এ দেশে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ করে নেয় স্বাধীনতাবিরুদ্ধ শক্তি। যে শক্তির রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়ার শুরুর দিন আজ। সংগত কারণেই দিনটির বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ ও তার সমমনা শক্তির কাছে এই দিনটি মুক্তিযোদ্ধা সেনাহত্যার দিন। আর সেই সময়ে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল জাসদের কাছে এদিনটি সিপাহি-জনতার বিপ্লব হিসেবে অভিধায়িত। আর ১৫ আগস্ট থেকে নভেম্বর এই গোটা সময়ের প্রধান বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান ও তার দল বিএনপির কাছে ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতির দিন।
 
১৯৭৫ সালের এই দিনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে রক্তাক্ত অভ্যুদয় সংঘটিত হয়। ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে এই দিনে দেশের ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হন জেনারেল জিয়াউর রহমান। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তা পাকাপোক্ত করতে গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দেশের রাজনীতিতে স্বাধীনতাবিরুদ্ধ শক্তি জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য সমমনা ইসলামি দলগুলোর পুনঃপ্রতিষ্ঠার সব  সুযোগ অবারিত করে দেন। রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজের সর্বস্তরে আনুষ্ঠানিকভাবে জেঁকে বসে পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির সদর্প প্রয়াস।   

এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, পঁচাত্তরের এই দিনে তথাকথিত বিপ্লবের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানীকরণের পথ পাকাপোক্ত করা হয়। আজ এত বছর পরও আরোপিত এই অভিশাপ থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। অভিশাপের বোঝা জাতির মাথা থেকে নামাতে হলে সেদিনের সেই ভয়ঙ্কর ঘটনার দিকে যেমন তাকাতে হবে, তেমনি সেই অশুভ শক্তির সুবিধাভোগদের সঠিকভাবে চিনতে হবে। ৭ নভেম্বরের পর মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তের ওপর পা রেখে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতদের দেশের সর্বোচ্চ আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু পঁচাত্তরের অভিশপ্ত ঘটনাবলির পরিণতি থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। আবার অভিশপ্ত ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে জন্ম নেয়া রাজনীতি ও এর সুবিধাভোগীরা দ্বিধাহীনভাবে এখনো এ রাষ্ট্রে অবস্থান করছে। বারবার ভূলুণ্ঠিত করার চেষ্টা করছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে। 

কথা হলো- যারা ৭ নভেম্বরকে বিপ্লব কিংবা সংহতি দিবস বলছে, তারা কী জানে বিপ্লবের মূল উপাদান হলো তার শীর্ষ নেতার সুনির্দিষ্ট আদর্শের ভিত্তিতে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা সৃষ্টি এবং তাতে জনমানুষের অংশগ্রহণ। কিন্তু আদতে এর কোনোটাই ৭ নভেম্বরে ছিল না। ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের কিছু উচ্ছৃঙ্খল সৈনিক সেনা ট্রাকে করে শহরে এসে ষড়যন্ত্রকারীদের জড়ো করা কিছু বেসামরিক লোক নিয়ে কয়েকটি স্লোগান দিলেই কী তাকে বিপ্লব বলা যায়? এই তথাকথিত বিপ্লবের ফলে জনগণের মৌলিক কোনো উপকার হয়েছে কি? আর সংহতি! কার সঙ্গে কার সংহতি হলো? এটি তো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার, ৭ নভেম্বরের মাধ্যমে যারা ক্ষমতায় এলেন, তাদের সঙ্গে সংহতি হলো একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াত- রাজাকার, আলবদরদের। পঁচাত্তরের অভিশাপ থেকে রাষ্ট্র এখনো মুক্ত হতে পারেনি বলেই মানুষ এখনো শঙ্কামুক্ত হতে পারছে না। বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল শাসন ক্ষমতায়। আমরা আশা করি, ৭ নভেম্বরের সব রহস্য এ সরকারের শাসনামলে উদ্ঘাটিত হবে। সমাপ্তি ঘটবে ইতিহাসের সব কলঙ্কজনক অধ্যায়ের।   

সোনালীনিউজ/ঢাকা 
 

Wordbridge School
Link copied!