• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি দুই হাত হারানো সিয়াম


শরীয়তপুর প্রতিনিধি অক্টোবর ২০, ২০১৭, ১০:৫৩ এএম
আজও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি দুই হাত হারানো সিয়াম

শরীয়তপুর: জেলায় পল্লী বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে জড়িয়ে দুই হাত হারানো কলেজছাত্র সিয়াম খান আজও ক্ষতিপূরণের টাকা পায়নি। তাকে ৩০ দিনের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ৪ জুলাই নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। এদিকে অর্থাভাবে সিয়ামের চিকিৎসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে ইতিমধ্যে তার পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ এপ্রিল ঝড়ে পল্লী বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের তার ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে যায়। ওই তারে জড়িয়ে যায় শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বিঝারী গ্রামের সিয়াম (১৭)। সে নড়িয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। দুর্ঘটনার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১২ ও ১৬ এপ্রিল তার দুটি হাত কনুইয়ের নিচে থেকে কেটে ফেলতে হয়।

তা ছাড়া, তার মেরুদণ্ডসহ শরীরে বিভিন্ন স্থানে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। ২৬ মে তাকে বার্ন ইউনিট থেকে ছাড়পত্র দেন চিকিৎসক। এরপর প্রতি সপ্তাহে একদিন চিকিৎসকের কাছে নিতে হতো। এ কারণে ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে হতো। তবে পরিবারের সদস্যরা তাকে নিয়ে ৪ অক্টোবর পাঁচক গ্রামে তার নানাবাড়িতে যান।

সিয়ামের চিকিৎসা করাতে গিয়ে তার পরিবার অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তার বাবা ফারুক খান কান্তা গ্রুপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের জাহাজে শ্রমিকের কাজ করতেন। সিয়াম দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর তিনি ছুটি নিয়ে চলে আসেন। দীর্ঘদিন কাজে অনুপস্থিত। এ কারণে চাকরি হারিয়েছেন।

জানতে চাইলে ফারুক খান সাংবাদিকের বলেন, ‘সিয়ামের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছি, ঋণগ্রস্ত হয়েছি। এখন সংসারের খরচ বহন করতে পারছি না। তার ওপর সিয়ামের প্রতিদিনের ওষুধের খরচ জোগাতে হচ্ছে। আরও দেড় বছর সিয়ামের চিকিৎসা চালাতে হবে।’

সিয়ামের মা নাজমা বেগম বলেন, ‘এ দুর্ঘটনায় আমাদের পুরো পরিবার পথে বসেছি। সিয়ামের বড় ভাই দোলন স্নাতক শ্রেণির ছাত্র। সে–ও পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। তারও পড়ালেখা বন্ধ হতে বসেছে। চারদিকে এখন শুধুই অন্ধকার দেখছি।’

সিয়াম বলে, চিকিৎসাধীন থাকায় সে দ্বাদশ শ্রেণিতে ওঠার পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে। সে ওই পরীক্ষায় অংশ নিতে চায়।

‘সিয়ামের’ এ দুর্ঘটনার নিউজ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর ২৫ এপ্রিল পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে লাইনম্যান আক্তার হোসেন ও উজ্জ্বল হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়। তা ছাড়া, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইনজীবী সিফাত মাহমুদ ৯ মে উচ্চ আদালতে রিট করেন। শুনানি শেষে আদালত গত ৪ জুলাই সিয়ামকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন।

আইনজীবী সিফাত মাহমুদ বলেন, উচ্চ আদালত ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এখনো ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়নি। সিয়ামের পরিবারের সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগও করেনি। বোর্ডের পক্ষ থেকে আপিল করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আবেদনটি এখনো শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ওঠেনি।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!