• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আঞ্চলিক বাণিজ্যে বিমসটেক নতুন দুয়ার খুলবে


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ২২, ২০১৮, ১১:৪৪ এএম
আঞ্চলিক বাণিজ্যে বিমসটেক নতুন দুয়ার খুলবে

ঢাকা : অর্থনৈতিক উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলতে পারে ‘বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন’ (বিমসটেক)। এ জোটের দেশগুলো আরেকটু সচেষ্ট হলে এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য একলাফে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। বিমসটেক প্রতিষ্ঠার ২০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী মঙ্গলবার (২০ মার্চ) এ কথা বলেন। রাজধানীর গুলশানে বিমসটেকের স্থায়ী কার্যালয়ে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও মিয়ানমার স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চলের জন্য বিমসটেক বিকল্প ফোরাম হতে পারে। তবে প্রতিষ্ঠার ২০ বছর পার হলেও বিমসটেক যতটুকু কার্যকর ও গতিশীল হওয়ার কথা তা হয়নি। এই জোট আরো গতিশীল ও কার্যকর হলে এ অঞ্চলের বর্তমান আঞ্চলিক বাণিজ্যের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে ২১ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।

তিনি বলেন, বিমসটেক দেশগুলোর মধ্যে বিনিয়োগ ও জ্বালানি বিনিময় এ অঞ্চলের উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে এর মধ্যে উন্নয়ন ও প্রগতির যে গতি সৃষ্টি হয়েছে তা ধরে রাখতে হলে আমাদেরকে বাণিজ্য ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে হবে।

মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশ শুরু থেকেই এ জোটের সদস্য। অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই জোটকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকে ঢাকা। বাংলাদেশ মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেতু হিসেবে কাজ করতে পারে আঞ্চলিক এই জোট। এ জন্য বাংলাদেশ লাগাতার কাজ করে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এলডিসি দেশ হিসেবে আমরা যেসব অর্থনৈতিক সুফল পেতাম বিমসটেক প্রক্রিয়ার অধীনে দ্রুত অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার মাধ্যমে আমরা সেগুলো পেতে পারি। বিমসটেক এ অঞ্চলে উন্নয়নের একটি বিকল্প জোট হতে পারে।

স্বাগত বক্তব্যে বিমসটেক মহাসচিব এম শহিদুল ইসলাম বলেন, বিমসটেক দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সেতু হিসেবে যোগাযোগে অতুলনীয় ভূমিকা রাখছে। ঢাকায় বিমসটেকের স্থায়ী কার্যালয় প্রতিষ্ঠা এবং গোয়া কনফারেন্সের ঘোষণা এই জোটকে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছে। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর আন্তরিকতায় সামনের দিনগুলোতে এই জোট আরো এগিয়ে যাবে।

সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের বক্তব্য পাঠ করেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পিয়ুস শ্রীবাস্তবা। এতে সুষমা স্বরাজ বলেন, ভারত বিমসটেককে গুরুত্বপূর্ণ জোট মনে করে। কেননা এই জোটের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চলের বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সম্ভব। এ ছাড়া এই অঞ্চলের জ্বালানি খাতের সহযোগিতা এই জোটের মধ্য দিয়ে করা যায়। বিমসটেক বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রতিশ্রুত সংস্থা।

নয়াদিল্লি মনে করে, এই জোটের মধ্য দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর উন্নয়ন সম্ভব। তাই ভারত বিমসটেককে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদ এ এলাকার সবচেয়ে বড় হুমকি। এর সঙ্গে লড়াই এবং বিভিন্ন খাতে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।

বিমসটেকের বর্তমান সভাপতি নেপালের হাইকমিশনার অধ্যাপক ড. চোপ লাল ভুষাল বলেন, বিমসটেক এমন একটি সংস্থা যা দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে বিশেষ লাভবান করবে। সার্ক ও আসিয়ানের মতো সংস্থাগুলোর সাফল্য ও ব্যর্থতা থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন আছে।

তিনি বলেন, এই জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কানেক্টিভিটি তৈরি হলে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে জ্বালানি ও যোগাযোগ খাতে বিপ্লব ঘটবে। এজন্য আঞ্চলিক এই জোটকে কার্যকরভাবে গড়তে কাজ করতে হবে।

সম্মেলনের চার অধিবেশনে আলোচকরা বিমসটেকে সংযোগ, মানুষে-মানুষে যোগাযোগ, জ্বালানি ও নিরাপত্তা সহযোগিতা এবং বঙ্গোপসাগরে অর্থনৈতিক সংহতির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিমসটেক দেশগুলো থেকে আগত প্রতিনিধি এবং তাদের দূতরা এতে অংশ নেন। বিকালে সমাপনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী।

১৯৯৭ সালে বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) গঠিত হয়। ব্যাংকক ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ড এই উদ্যোগ শুরু করে। পরে মিয়ানমার, নেপাল ও ভুটান এতে যোগ দেয়। ২০১৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে এর প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!