আট মেগা প্রকল্পে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা

ঢাকা : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ‘ভোটার আকর্ষণে’ অবকাঠামো খাতের বড় প্রকল্পগুলো বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে বাজেটে। গতকাল প্রস্তাবিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অবকাঠামোর আট বড় প্রকল্পে ৩০ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একক প্রকল্প হিসেবে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পাচ্ছে ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল নির্মাণ, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও রামু থেকে ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত রেলপথ ও পায়রা বন্দর প্রকল্প।

জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রবৃদ্ধি সঞ্চালক ১০টি বৃহৎ প্রকল্পকে মেগা প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরদারিতে আনা হয়েছে। এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পরিবীক্ষণে ‘ফাস্ট ট্র্যাক প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি’ নামে উচ্চপর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে। পাশাপাশি কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের জন্য গঠন করা হয়েছে ‘ফাস্ট ট্র্যাক টাস্কফোর্স’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের আগে আগামী অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে ৬ মাস সময় পাচ্ছে সরকার। এ সময় বাড়তি অর্থ দিয়ে প্রতিশ্রুত মেগা প্রকল্পগুলো দৃশ্যমান করার চেষ্টা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পগুলোতে বড় অঙ্কের বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

আগামী অর্থবছর একক প্রকল্প হিসেবে সর্বোচ্চ ১১ হাজার ৯৯ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে। চলতি অর্থবছর এতে বরাদ্দ আছে ৮ হাজার ৯০৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর প্রকল্পটিতে বরাদ্দ বাড়ছে ২ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ১ লাখ ১৩ হাজার ৯২ কোটি ৯১ লাখ টাকার প্রকল্পটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। স্বপ্নের ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে আগামী এডিপিতে ৪ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে চারটি পিলারের উপর তিনটি স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে সেতুটি দৃশ্যমান হয়েছে। ভোটের আগে বেশ কয়েকটি স্প্যান বসানোর মাধ্যমে বড় অংশ দৃষ্টিগোচর করার চিন্তা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ শেষ হলে একই সঙ্গে গাড়ি ও রেল পারাপারের ঘোষণা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। বিষয়টি বিবেচনায় আগামী অর্থবছর পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা।  

মেট্রোরেল দৃশ্যমান করতে কাজ চলছে বেশ জোরেশোরেই। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক এ প্রকল্পে আগামী অর্থবছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৯০২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকার এ প্রকল্পে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জীভ‚ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম পর্যায়ে এয়ারপোর্ট থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার কথা ২০১৯ সালে। চট্টগ্রামের দুই অংশের যোগাযোগ সুগম করতে দেশের প্রথম টানেল নির্মাণের কাজ চলমান আছে।

এ লক্ষ্যে নেওয়া কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়ক টানেল নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে আগামী অর্থবছর ১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি অর্থবছর বরাদ্দ আছে ১ হাজার ৮৯৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। প্রায় ৮ হাজার ৪৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকার এ প্রকল্পে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। রেল অবকাঠামোর অন্যতম প্রকল্প চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও রামু হয়ে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণে নেওয়া প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার এ প্রকল্পে এ বছর বরাদ্দ আছে ১ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ বাড়ছে ৪৫০ কোটি টাকা।  

মাতারবাড়ীতে ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার শীর্ষক প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২ হাজার ১৭১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর মাতারবাড়ী প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

অন্যদিকে পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো/সুবিধাদির উন্নয়ন (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকছে ৫০০ কোটি টাকা। ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পটিতে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৬১০ কোটি টাকা। চলতি এডিপিতে বরাদ্দ রয়েছে ৫৫২ কোটি টাকা।  

সোনালীনিউজ/এমটিআই