• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আতঙ্ক কেটে গেছে নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি নভেম্বর ২১, ২০১৬, ০৪:৩৩ পিএম
আতঙ্ক কেটে গেছে নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি ও মন্দিরে হামলার পর আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা কেটে গেছে অনেকটাই। ঘরবাড়ি ও মন্দির মেরামত করছেন ক্ষতিগ্রস্তে হিন্দু পরিবারের লোকজন। প্রশাসন ও ব্যক্তিগত সহযোগীতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে তারা। আতঙ্ক কমে যাওয়ায় ও সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত হওয়ায় বর্তমানে হিন্দু পরিবারের লোকজন বাড়িঘর মেরামতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

এদিকে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখনো উপজেলাজুড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়াও সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নজরদারিতে আনার জন্য নাসরিনগরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোসহ উপজেলা সদরে ২০টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারের লোকজনদের আরও ত্রাণ সহায়তার কথা জানালেন উপজেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে নাসিরনগরের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে জানা যায়, ২৯ অক্টোবর হিন্দু সম্প্রদায়ের রসরাজ দাস নামের এক ছেলের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তার আইডি ব্যবহার করে পবিত্র কাবা শরীফ নিয়ে ব্যাঙ্গচিত্র করে একটি পোস্ট দেয়। এনিয়ে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিলে ওইদিনই সন্ধ্যায় তাকে পুলিশ আটক করে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৩০ অক্টোবর দুপুরে নাসিরনগর উপজেলা সদরে একটি সমাবেশ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও হেফাজত ইসলামের লোকজন। সমাবেশ শেষে উপজেলা সদরের দত্তবাড়ির মন্দির, নমসুদ্রপাড়া মন্দির, জগন্নাথ মন্দির ঘোষপাড়া মন্দির, গৌরমন্দিরসহ ৬টি মন্দির গুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীরা শতাধিক সংখ্যালঘু পরিবারের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। ঘটনার পর ৪ নভেম্বর আবারো হিন্দু পরিবারের একটি মন্দিরসহ ৫টি বাড়ির রান্নাঘর, গোয়াল ঘর, ১৩ নভেম্বর সকালে হিন্দু পরিবারের একটি পরিত্যক্ত ঘরের চালে ও ১৬ তারিখ রাতে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অঞ্জন কুমার দেব এর একটি গোয়াল ঘরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এনিয়ে এলাকায় চরম আতঙ্ক দেখা দিলে বিভিন্ন সময়ে ৬টি মামলা রুজু করে নাসিরনগর থানায়। এ ঘটনায় রসরাজ দাসসহ ৮৬ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এসব কারণে নাসিরনগরের হিন্দু পল্লীতে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করে। তবে বর্তমানে আতঙ্ক ও থমথমে অবস্থা অনেকটাই কেটে গেছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন অনুদানের টাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ও মন্দিরের মেরামত কাজ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার হিন্দু পরিবারের লোকজন। আগের মত আতঙ্ক নেই তাদের মনে।

হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কাশিপাড়ার বিমোল বিহারী চৌধুরী জানান, ৩০ অক্টোবরে আমার পরিবারের বেশ কয়েকটি ঘর ও পারিবারিক মন্দির ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। তবে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ত্রাণ সহায়তায় আবারো আমাদের ঘরবাড়ি ঠিক করছি। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে তিন বান্ডেল টিন ও ২১ হাজার টাকা ত্রাণ সহায়তা পেয়েছেন তিনি।

উপজেলা সদরের ক্ষতিগ্রস্ত অমূল্য দাশ জানান, আগে প্রতিনিয়ত হামলা ভাঙচুর ও আগুনের ভয় কাজ করত। এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। বর্তমানে আমরা আমাদের পরিবারের ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো ঠিক করছি।

ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করার কাজ করতে আসা কাঠ মিস্ত্রি লিটন সূত্রধর জানান, এখন আর ভয় নেই আমাদের মনের মধ্যে। সবাই বাড়িঘর ঠিক করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখন এলাকায় অনেক কাজ।

নাসিরনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মো. লিয়াকত আলী বলেন, এলাকায় বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে প্রায় শতাধিক পরিবারকে বিভিন্নভাবে পাওয়া অনুদান বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারিভাবে ৬ লাখ টাকা ও বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া ৯ লাখ টাকা ও ১১৪ বান্ডিল ঢেউটিন বিতরন করা হয়েছে। তারা তাদের ঘরবাড়ি ও মন্দির মেরামত করছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের আরও সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি।

এদিকে জেলা পুলিশের সহায়তায় নাসিরনগরে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা সদরের ২০টি স্থানে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। এছাড়াও নাসিরনগরে প্রায় তিনশ’ পুলিশ, ২ প্লাটুন র‌্যাব ও বিজিবি মোতায়েন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন জানান, নাসিরনগরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাদা পোশাকধারী পুলিশসহ প্রায় তিনশত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। যেকোন নাশকতা এড়াতে উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ২০টি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এইচএআর

Wordbridge School
Link copied!