• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
রাঙ্গামাটিতে ১১ ও কক্সবাজারে নিহত ১

আতঙ্কের ১২ জুনেই পাহাড়ধস


নিউজ ডেস্ক জুন ১২, ২০১৮, ১১:৫৩ পিএম
আতঙ্কের ১২ জুনেই পাহাড়ধস

ঢাকা : টানা বৃষ্টিতে আতঙ্কের মধ্যেই মঙ্গলবার (১২ জুন) রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড়ধসে অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর একই তারিখে (১২ জুন) ভয়াবহ পাহাড়ধসে এ জেলায় মারা যায় অন্তত ১২০ জন। ওই ঘটনার বছরপূর্তির দিনটিতে নানিয়ারচরে একইভাবে প্রাণহানির ঘটনা ঘটল।

কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে পাহাড়ধসে একজনের মৃত্যু হয়েছে। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আর চট্টগ্রামে বুধবার (১৩ জুন) ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদফতর বলছে সেখানেও পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে প্রবল বর্ষণে সারা দেশের সঙ্গে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। আংশিক বন্ধ রয়েছে বান্দরবানের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ। টানা দুই দিনের প্রবল বর্ষণে খাগড়াছড়ি শহরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে; যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা।

আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো এবং জেলা প্রতিনিধিরা এসব তথ্য জানিয়েছেন-

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসে ১১ জনের প্রাণহানি : গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে মঙ্গলবার (১২ জুন) সকালে পাহাড়ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে নিশ্চিত করেছেন নানিয়ারচর উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা।

তিনি বলেন, উপজেলার বড়পুল পাড়ায় দুই পরিবারের চারজন, ধর্মচরণ কার্বারিপাড়ায় একই পরিবারের চারজন, হাতিমারা এলাকায় দুজন ও গিলাছড়ি ইউনিয়নের মনতলা এলাকায় একজন মারা গেছেন। নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল­াহ আল মামুন ও নানিয়ারচর থানার ওসি আবদুল লতিফ পাহাড়ধসের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে কতজন মারা গেছেন, তা তারা জানাতে পারেননি।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন, তারা আটজনের মৃত্যুর খবর শুনেছেন। পাহাড়ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক না থাকায় নিহত বা নিখোঁজের সঠিক তথ্য পেতে কিছুটা সময় লাগছে।

উল্লেখ্য, গত বছরের ভয়াবহ পাহাড়ধসে ১২০ জন মারা গেলেও নানিয়ারচরে কেউ মারা যায়নি। ওই ধসের পর জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের যে তালিকা করেছে, তাতে নানিয়ারচর উপজেলার চার ইউনিয়নে ২৩৯ পরিবারের এক হাজার ১১১ জনকে রাখা হয়।

কক্সবাজারে পাহাড়ধসে একজন নিহত : জেলার মহেশখালীতে ভারী বৃষ্টিপাতে পাহাড়ধসে মাটিচাপায় একজন নিহত হয়েছেন। তিনি মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের পানির ছড়া এলাকার বাসিন্দা মো. বাদশা মিয়া (৩৫)। এ ছাড়া উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের তেলিপাড়া এলাকায় গাছচাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জামতলী এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে মোহাম্মদ আলী (২০)। মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ ও উখিয়া থানার ওসি মো. আবুল খায়ের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের শঙ্কা : চট্টগ্রামে মঙ্গলবার (১২ জুন) পর্যন্ত পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেনি। তবে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় জলাবদ্ধতা ও ধস-আতঙ্কে রয়েছে নগরবাসী। আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন মঙ্গলবার বলেন, চট্টগ্রামে ভারী বর্ষণ বুধবারও অব্যাহত থাকবে। এ সময় পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ জুন) বিকাল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৪ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এর আগে রোববার রাত ও সোমবারের ভারী বর্ষণে পানিতে ভেসেছে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। গতকাল পর্যন্ত অনেক এলাকা পানিতে ডুবেছিল।

এদিকে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় নগরীর বাটালি হিল, মতি ঝরনাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে যৌথভাবে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে সেখানে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেখানে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোর নিচে বসবাসকারীদের সরে যেতে তিন দিন ধরে মাইকিং চলছে।  

জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেন বলেন, অতীতে পাহাড়ধসে অনেক প্রাণহানি হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখতে চাই না। তাই চেষ্টা করছি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে। এ ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনে আমাদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রশাসনের এ উদ্যোগের পরও প্রচুর লোকজন এখনো সেখানে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে অবস্থান করছে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।

রাউজান পৌরসভার মেয়র দেবাশীষ পালিত জানান, সেখানে অনেক মানুষের ভিটেবাড়িতে পানি থৈ থৈ করছে। গহিরা থেকে রাউজান সদর পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গত ৩০ বছরে রাউজানের মানুষ এমন অবস্থার মুখোমুখি হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মানুষ জলাবদ্ধতা ও পাহাড়ধস আতঙ্কে নিজেদের উদ্বেগ ব্যক্ত করছেন। অনেকেই চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের মেগা প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা তির্যক মন্তব্য করছেন।

খাগড়াছড়িতে পাহাড়ধস ও ভয়াবহ বন্যা : টানা দুই দিনের প্রবল বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় খাগড়াছড়ি শহরের বেশিরভাগ এলাকা ও মেরুং বাজার পানিতে তলিয়ে গেছে। পাহাড়ধসে মাটি চাপা পড়েছে বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ি। তবে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। পানি ওঠায় খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়ক ও দীঘিনালা-লংগদু সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। বন্যায় জেলায় অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকলে খাগড়াছড়িতে আরো পাহাড়ধসের শঙ্কা রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. রাশেদুল ইসলাম জানান, জেলার কোথাও বড় ধরনের পাহাড়ধসের খবর পাওয়া যায়নি। টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি শহরের মেহেদীবাগ, বাস টার্মিনাল, শান্তিনগর, সবজিবাজার, গঞ্জপাড়া, মিলনপুর, মুসলিমপাড়া, ফুটবিল, মাস্টারপাড়া, শহীদ কাদের সড়ক, অর্পনা চৌধুরীপাড়া, আপার পেড়াছড়া পানিতে তলিয়ে গেছে।

জেলার দীঘিনালা উপজেলার মেরুং বাজারের আড়াই শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মেরুং ইউনিয়নের পাঁচটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। শতাধিক পরিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে।

সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন তিন পার্বত্য জেলা : প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের সঙ্গে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রামের সড়ক যোগাযোগও আংশিক বন্ধ রয়েছে।  

হাইওয়ে পুলিশ নাজিরহাট ফাঁড়ির কর্মকর্তা মুজিবর রহমান জানিয়েছেন, গত সোমবার ভোর থেকে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি ওঠায় খাগড়াছড়ির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রবল বর্ষণের সঙ্গে পাহাড়ি ঢলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাঁটু থেকে বুকসমান পানি হয়েছে। ফলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত পানি কমার সম্ভাবনা নেই।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভবনে পানি উঠেছে। ফলে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া ব্যাহত হচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সাপেকাটা চার রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

বান্দরবান প্লাবিত : বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকা পাহাড়ি ঢলে প্লাবিত হয়েছে। সেখানে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। জেলা শহরের স্বর্ণমন্দির এলাকার বড়পুল ব্রিজ তলিয়ে যাওয়ায় বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটির সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গতকাল সকাল থেকে উজানীপাড়া ও মিকছি ঝিরি এলাকায় পানি উঠতে শুরু করে। এর আগে সোমবার সকাল থেকে সাংগু ও মাতামুহুরীর পানি বেড়ে নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হতে থাকে। জেলা শহরের সাংগু তীর, অফিসার্স ক্লাব, ইসলামপুরসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে।

এ ছাড়া কোনো কোনো উপজেলা থেকে বিভিন্ন ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর জানান, রুমা উপজেলা সদরের সঙ্গে গালেংগ্যা ইউনিয়ন, থানচি উপজেলা সদরের সঙ্গে রেমাক্রি ও তিন্দু ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন বলেন, প্লাবিত এলাকার বাসিন্দাদের নিকটস্থ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিতে মাইকিং করা হয়েছে। নদীর তীর ও পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত পরিবারগুলোকেও সরে যেতে বলা হয়েছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!