• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিক হতে হলে কি অসভ্য হতে হয়?


ফেসবুক থেকে ডেস্ক আগস্ট ১০, ২০১৭, ০১:৪২ পিএম
আধুনিক হতে হলে কি অসভ্য হতে হয়?

ঢাকা: আমরা বাংলা ভাষাকে শুধু ভালোই বাসি না, এই ভাষায় আমরা মনের ভাব প্রকাশ করি, বিদ্যার অনুশীলন করি এবং এই ভাষার সাহায্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করি।

প্রতিনিয়তই দেশের সংস্কৃতিতে, জেনারেশনে এবং বাংলা ভাষার প্রয়োগে হচ্ছে পরিবর্তন। আর বাংলা ভাষার প্রয়োগে দুই পরিবর্তন নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অন্যতম সদস্য ও অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন

তিনি বৃহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট করেছেন। তার পোস্টটি হুবহু সোনালীনিউজের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো-

(১) বেশকিছু দিন আগের কথা; একটি নারিকেল তেলের পৃষ্ঠপোষকতায় অনুষ্ঠিত এক ‘হেয়ার স্টাইল প্রতিযোগিতা' দেখার আমন্ত্রণ পত্র পেলাম। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর শেষমেষ অনুষ্ঠানটি দেখতে গেলাম। প্রতিযোগিতা শুরু হল। একে একে কেশবতী নারীরা তাদের পারফরমেন্স দেখাতে লাগল।
একজন নারী এবং একজন পুরুষ উপস্থাপক অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে একটি করে কৌতুক বলে অনুষ্ঠানটি জমিয়ে তুলার চেষ্টা করছেন। তবে, বুঝতে অসুবিধা হল না যে, দু’জনেই পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করছেন।

যাহোক, ভুলভ্রান্তি, অসামঞ্জস্যতা, ন্যাকামি পর্যন্তও হজম করতে পারলাম, কিন্তু হঠাৎ নারী উপস্থাপিকাকে নিয়ে পুরুষ উপস্থাপক এমন একটি স্ল্যাং কৌতুক বলে বসলেন যে, লজ্জায় বেশ কিছু দর্শক নিস্তব্ধ হয়ে গেল। আর বাকিরা করতালিতে হলরুম মুখরিত করে ফেলল। নারী উপস্থাপিকা লজ্জায় লাল হয়ে স্টেজ থেকে বের হয়ে পর্দার আড়ালে চলে গেলেন। উন্মুক্ত মঞ্চে হাজারও দর্শক এবং ‘টিভি'তে লাইভ দেখানো হচ্ছে। এই অবস্থায় এরকম চুটকী বলার মত ‘সেন্স অব হিউমার’ -এর যুগ এসে গেছে ভেবে অবাক হলাম। নিজেকে খুব সেকেল মনে হল।

এরও বেশকিছু দিন পর আবার সেই উপস্থাপককে পেলাম ভিন্ন একটি জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানে। তিনি অসম্ভব হাস্যরসাত্মক কৌতুক বলা শুরু করলেন। তার কৌতুকের ভান্ডার যখন ফুরিয়ে এল তখন তিনি সেই অশ্লীলতায় ফিরে গেলেন। আংশিক জনতা নিস্তব্ধ, বাকীরা হাসতে হাসতে যেন মাটিতে লুটিয়ে পড়ছেন। অথচ এসব স্ল্যাং কৌতুক খুব বাছাই করা বন্ধুমহল ছাড়া কেই বলেই না।

এবার বুঝলাম তিনি এসব অশ্লীলতার জন্যই হয়তো বিখ্যাত। না হয় এত বড় বড় প্রোগ্রামে তাকেই কেন বারবার ডাকা হবে। তার কোন ভুল নেই এবং তার ‘সেন্স অব হিউমার’ ঠিকঠাক মনে করেই তো সবাই তাকে ডেকে নিচ্ছে।

কিছুদিন পর জানলাম কোন এক অনুষ্ঠানে নারীদের নিয়ে একটি বাজে/আপত্তিকর মন্তব্য করায় তার বিরুদ্ধে সবাই রুখে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকে নাকি তাকে আর উপস্থাপনা করতে দেখা যাচ্ছে না।

(২) ২দিন আগে দেখলাম আমার এক প্রিয় ছোটভাই একটি সর্বোচ্চ লেভেলের কিছু স্ল্যাং ‘শব্দ' দিয়ে একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছে। শত শত মানুষ সেই স্ট্যাটাসে লাইক-কমেন্টের পাহাড় বানিয়ে দিচ্ছে। অনেক শিক্ষিতা নারীও কমেন্টের ঘরে অসম্ভব ভাললাগার বিষয়টি ব্যক্ত করেছেন। এসব আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাই বার বার চোখ বুলিয়ে দেখছিলাম – আমি ভুল কিছু দেখছি না তো। না, ভুল না। সবই ঠিকঠাক দেখছি।

এবার বুঝলাম – আমার অনেক বয়স হয়েছে। সীমানা পেড়িয়ে বহুদূর চলে এসেছি। এবার যাবার সময় হয়ে এল। অনেক বেশী সেকেলে হয়ে গেছি। কিন্তু, তাই বলে এত তাড়াতাড়ি? এই বিশ বছরে দেশের সংস্কৃতিতে, জেনারেশনে এবং বাংলা ভাষার প্রয়োগে এতটা পরিবর্তন হয়েছে? তাহলে আরও বিশ বছর পর কি হবে!!!???

আধুনিক হতে হলে কি অসভ্য হতে হয়? তাহলে কি সভ্যতার সাথে আধুনিকতার সংঘর্ষ অবধারিত?

সোনালীনিউজ/ঢাকা/আকন

Wordbridge School
Link copied!