• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিকায়নের পথে সরকারি পাটকল


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ১০, ২০১৬, ১২:০৫ পিএম
আধুনিকায়নের পথে সরকারি পাটকল

দেশের সরকারি পাটকলগুলোর আধুনিকায়নের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনটি পাটকলকে আধুনিক করা হলেও পর্যায়ক্রমে আরও ২৪টি পাটকল আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। এজন্য চীনের কারিগরি সহায়তা নেবে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)।

পাট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে তিনটি পাটকলের আধুনিকায়নে চীন সরকারের মালিকানাধীন চায়না টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিয়াল করপোরেশন ফর ফরেন ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল কো-অপারেশনের (সিটিইএক্সআইসি) সঙ্গে গত মাসে সমঝোতা চুক্তি সই করেছে বিজেএমসি।

প্রাথমিকভাবে যে তিনটি পাটকলের আধুনিকায়নে চুক্তি সই হয়েছে সেগুলো হলো- আমিন জুটমিল, চট্টগ্রাম; করিম জুটমিল, ঢাকা এবং প্লাটিনাম জুটমিল, খুলনা।

পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিজেএমসির আওতাধীন মোট ২৬টি পাটকলের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ২৪টি পাটকলের আধুনিকায়ন করবে সরকার। বাকি দুটি পাটকলে পাটপণ্য উৎপাদন না হওয়ায় সেগুলো এর আওতায় রাখা হয়নি।

জানা গেছে, দেশের পাটকলগুলোতে বর্তমানে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো প্রায় সাত দশক আগে স্থাপিত। এগুলোর উৎপাদনক্ষমতা ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে লাভজনকভাবে পাটকল পরিচালনা করা প্রায় অসম্ভব। পাশাপাশি এগুলোতে উৎপাদিত পণ্যের মানও আধুনিক পাটপণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে নেই। অন্য পাটকলগুলোর অবস্থাও একই রকম।

সরকার ধাপে ধাপে এমন ২৪টি পাটকলেরই আধুনিকায়ন করবে। চীনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন তারই একটি ধাপ। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করেন। এ সময় আর কোনো পাটকল বিরাষ্ট্রীকরণ করা হবে না বলে ঘোষণা দেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে সরকারি পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়। 

পাট মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে পাটকলগুলোর বিএমআরই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। তার মধ্যে কারিগরি সহায়তা ২৮০ মিলিয়ন ডলার এবং জিওবি অর্থায়ন ৭০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৫ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চায়নার সরকারি ওই প্রতিষ্ঠান ও বিজেএমসি যৌথভাবে একটি ফিজিবিলিটি স্টাডি করে বিজেএমসিতে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়।

ওই সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী বিএমআরআই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর এটি বাস্তবায়ন করা সম্পন্ন হলে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন উন্নতমানের প্রচলিত ও বহুমুখী পাটপণ্য উৎপাদিত হবে।

এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম বলেন, প্রতি টন কাঁচা পাট রপ্তানি করে ৫০০ থেকে ৬০০ ডলার আয় হয়। আবার এই পাট থেকে বস্তা, দড়িসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করলে প্রতি টনে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ ডলার আসে। কিন্তু মিলগুলো আধুনিকায়ন করা গেলে সেখানে পাটের শাড়ি, সোফা, কভার ইত্যাদি পণ্য তৈরি করা সম্ভব হবে।

প্রতি টন পাট থেকে ১০ হাজার ডলারের পণ্য উৎপাদন করা যাবে। এ কারণে পাটকলগুলোকে পর্যায়ক্রমে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জানা গেছে, এগুলোর আধুনিকায়নের মাধ্যমে বিজেএমসির ক্রমাগত লোকসান কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে আধুনিকায়নের মাধ্যমে কোনো শ্রমিক ছাঁটাই করা হবে না।

সূত্র জানায়, মিলগুলো পঞ্চাশের দশকের হওয়ায় উৎপাদন সক্ষমতা ৩৫ শতাংশে নেমে এসেছে। যেখানে বেসরকারি মিলগুলো ৯০ শতাংশ উৎপাদনের সক্ষম। এ কারণে বেসরকারি মিলের সঙ্গে সরকারি মিলগুলো পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না।

আধুনিকায়ন করা সম্ভব হলে বিজেএমসির মিলগুলোতে উৎপাদন ৯০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এ চুক্তির মাধ্যমে মিলগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে উৎপাদনে সক্ষম হবে। জিটুজির আওতায় মিলগুলোর আধুনিকায়ন করা হবে। তিনটি পাটকলে ৫৩ দশমিক ৩৫ একর জমিতে বছরে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পাটপণ্য উৎপাদন সম্ভব হবে। 

সোনালীনিউজ/ঢাকা/এএম

Wordbridge School
Link copied!