• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ নেই মোস্তাফিজের গ্রামে


রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ০৮:৪২ পিএম
আনন্দ নেই মোস্তাফিজের গ্রামে

ঢাকা: আর দশটা সাধারণ গ্রামের ছেলেদের মত তার বেড়ে ওঠা। সেই ছেলে যখন আইপিএল কাঁপাচ্ছিলেন গতবার তেঁতুলিয়া গ্রামের মানুষের গর্বে বুক ভরে যাচ্ছিল। অন্ধকার গ্রামে আলো জালিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। যে আলো ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই। এবার তেঁতুলিয়াবাসির মন খারাপ। তাদের ঘরের ছেলে যে খেলতে গিয়ে বসে রয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সাইডবেঞ্চে।

শ্রীলঙ্কা সফর থেকে দেশে ফিরে সপ্তাহখানেকের বিশ্রাম শেষে মোস্তাফিজ উড়ে গেছেন ভারতে। মুম্বাইয়ের মাঠে নেমে বল হাতে দৌড় শুরু করলেন কাটার মাস্টার। কিন্তু কাটারগুলো ঠিকঠাক পড়ল না। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটসম্যানরা মুস্তাফিজকে আছড়ে ফেলল বাউন্ডারিতে। ২.৪ ওভার বল করে দিলেন ৩৪ রান। এমনটা তো হওয়ার কথা নয়। পরে মোস্তাফিজ এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। বলেছেন,‘ আমি যেখানে বল ফেলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছিল না।’

তারপর হায়দরাবাদ টিম ম্যানেজম্যান্ট ‍মুস্তাফিজকে বসিয়ে রাখল। এবারের আইপিএলে এখনও অবধি তার ঝুলিতে ওই একটি ম্যাচই। যাকে দেখার জন্য তেঁতুলিয়াবাসি তো বটেই, গোটা বাংলাদেশই অপেক্ষায় বসে থাকে। যখন হায়দরাবাদের ম্যাচ শুরু হয় তখন একাদশে মুস্তাফিজকে না দেখে হতাশ হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।কেন তাকে খেলানো হচ্ছে না? ক্ষুব্ধ ভক্তদের অনেকে উঠে যান টিভি সেটের সামনে থেকে!

অন্য সবার মত মোস্তাফিজের পরিবারেরও মন খারাপ। যে ভাই প্রতিদিন লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে বাইকে করে ফিজকে অনুশিলনে নিয়ে গেছেন সেই মোখলেছুর রহমান কিন্তু অন্য আর দশজনের দলে নেই। তিনি মোস্তাফিজের না খেলার পেছনে যৌক্তিক ব্যাখ্যাই দিলেন,‘ ও না খেলার জন্য আমাদের মাঝে কৌতুহল জাগে, এটা ঠিক। কিন্তু এটাও চিন্তা করতে হবে, টিম জেতার পরে ওই টিম পরিবর্তন খুব কমই করতে চায়। আমাদের বাংলাদেশ টিমও কিন্ত করে না। রশিদ খান খুব ভালো বোলিং করছে। ও ভালো করে যাচ্ছে। সেখানে নতুন আরেকজন বিদেশীর সুযোগ পাওয়া কঠিন। গতবার ট্রেন্ট বোল্ট খেলেছিল। মোস্তাফিজের কারণে সে একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল। সেই বোল্ট এবার কলকাতার হয়ে প্রত্যেকটি ম্যাচেই খেলছে।’

ভারত থেকে প্রতিদিন ভাইয়ের সঙ্গে কথা হয় মোস্তাফিজের। সেই কথনে ক্রিকেট স্থান পায় না। পরিবারের খোঁজ নেন মোস্তাফিজ। ভাইয়ের কাছে জানতে চান, তার পোষা কবুতরের কথাও। ছোটবেলা থেকেই মোস্তাফিজের কবুতর পোষার অভ্যাস। বাইরে গেলেও মনটা তাই পড়ে থাকে বাড়ির পানে। ভাই মোখলেছুর বলছিলেন,‘ ওর সঙ্গে প্রতিদিনই আমার কথা হয়। কিন্তু ক্রিকেট নিয়ে কোনও কথা হয় না। ক্রিকেট নিয়ে বলার জন্য কোচ আছে, টিম ম্যানেজম্যান্ট আছে। আমরাও যদি ক্রিকেট নিয়ে বলি তা হলে ও যাবে কোথায়! ছোট মানুষ না? ও পরিবারের খোঁজখবর নেয়। মা-বাবা, আমরা কেমন আছি এসব নিয়েই কথা হয় বেশি। কবুতর পোষা ওর নেশার মত। সেগুলো সমন্ধে জানতে চায়। এখন এগুলোর দেখাশোনা আমিই করছি।’

গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই মোস্তাফিজকে নিয়ে অন্যরকম উন্মাদনা। ২১ বছরেই পেয়ে গেছেন তারকাখ্যাতি।কিন্তু ভাই মোখলেছুরের কাছে মোস্তাফিজ আগের মোস্তাফিজই আছেন। বললেন,‘ বড় তারকা আসলে খেলার মাঠেই। আর বাড়িতে ও আমাদের ছোট ভাই-ই থাকে। ও যে এত বড় তারকা বাড়িতে আসলে কেউ বুঝতে পারে না। সবার সঙ্গে মেশে। মাঠে গিয়ে ছেলেদের সঙ্গে আনন্দ-ফূর্তি করে।’

সবে ক্যারিয়ার শুরু। চার টেস্ট, ১৭টি ওডিআই আর ১৭টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মোস্তাফিজ। জীবনটা গুছিয়ে নেওয়ার পরই জীবনের নতুন ইনিংস শুরু করবেন তিনি।  অন্তত মোখলেছুরের কথায় তাই মনে হল,‘ ওর ক্যারিয়ার তো বেশিদিনের নয়। আরও চার-পাঁচ বছর যাক তারপর ওর বিয়ের কথা চিন্তা করা যাবে। আপাতত ওসব আমাদের ভাবনায় নেই।’

সোনালীনিউজ/ঢাকা/জেডআই

Wordbridge School
Link copied!